×

খেলা

সবুজ উইকেটে টাইগারদের কঠিন পরীক্ষা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২২, ১০:৫৩ পিএম

সবুজ উইকেটে টাইগারদের কঠিন পরীক্ষা

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবুজ উইকেটে বল হাতে জ্বলে উঠতে হবে মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামকে

মিরপুর-চট্টগ্রামের স্পিনবান্ধব উইকেটের পর টাইগারদের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার সবুজ উইকেট। তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ইতোমধ্যে তিন ধাপে প্রায় সব ক্রিকেটার দেশ ত্যাগ করেছেন। নানা আলোচনা সমালোচনার পর সাকিব আল হাসানও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে যাওয়ার জন্য সম্মতি প্রকাশ করেন।

গত শুক্রবার সকালে ৪ ক্রিকেটারসহ দলের ৮ সদস্য দেশ ত্যাগ করেছে। এরপর রাত ১১টার ফ্লাইটে দ্বিতীয় বহরে রওনা দিয়েছেন ওয়ানডে দলের বাকি সদস্যরা। গতকাল বেলা ১১টার ফ্লাইটে টেস্ট স্পেশালিস্টরা দেশ ত্যাগ করেছেন। আগামী ১৮ মার্চ থেকে শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। প্রথমেই হবে তিন ম্যাচে ওয়ানডে সিরিজ। ১৮ ও ২০ মার্চ প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডের পর তৃতীয় ওয়ানডে হবে ২৩ মার্চ। ৩১ মার্চ শুরু হয়ে ৪ এপ্রিল শেষ হবে প্রথম টেস্ট। এরপর ৮ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। প্রতিটি ওয়ানডে ম্যাচই হবে আইসিসি সুপার লিগের অন্তর্ভুক্ত। টাইগাররা ইতোমধ্যে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রতিটি জয় টাইগারদের পক্ষে ১০ পয়েন্ট যোগ করবে। তাই এ সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

দেশ ত্যাগের পূর্বে গত বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তামিম বলেছেন, ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে আছে সেখান থেকে জয় ছাড়া অন্য কিছু বলা তার পক্ষে উচিত হবে না। অবশ্যই জেতার লক্ষ্য নিয়ে আমরা যাব। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে জয় অর্জন করা যে কষ্টসাধ্য সে বিষয়টিও অস্বীকার করতে ভুলেননি তিনি।

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস মোটেই সুখকর নয়। এ পর্যন্ত ২১ ম্যাচ থেকে মাত্র ৪টি ম্যাচে জয় পেয়েছে টাইগাররা। যেখানে ১৭টি ম্যাচে জয় নিয়ে পরিসংখ্যানে অনেক এগিয়ে আছে স্বাগতিকরা। টাইগারদের সব মিলিয়ে মাত্র ৪টি ম্যাচে জয় পেলেও প্রোটিয়াদের মাটিতে আজ পর্যন্ত একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। তবে এ সিরিজ নিয়ে বেশ আশাবাদী টাইগার ক্রিকেটাররা। নতুন বছর শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের স্পোর্টিং উইকেটে টেস্ট জয় দিয়ে। বিদেশের মাটিতে টাইগার পেসারদের সাফল্য পুরো দলের আত্মবিশ্বাসকে আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ জয়ের পর দেশের মাটিতে আফগানিস্তান সিরিজে বেশ ধারাবাহিক ছিলেন পেসাররা। পেস ও স্পিনের অসাধারণ কম্বিনেশনের চট্টগ্রামে সফরকারীদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে রেখেছিল। ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে টাইগার পেসারদের সাফল্যের খাতায় প্রথম ওয়ানডেতে মাত্র ৩.৮০ ইকনোমিতে ৩৫ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলের অন্য দুই পেসারও সাফল্য লাভের দৌড়ে ভালো অবস্থানে ছিলেন। দ্রুতগতির বোলার তাসকিন আহমেদ ১০ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

এছাড়া টাইগারদের তরুণ পেসার শরিফুল ইসলামও অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছেন। তিনিও ৩.৮০ ইকনোমিতে ১টি মেডেন ওভারসহ ৩৮ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগার পেসাররা ছিলেন ধারাবাহিক। প্রথম দিনের তুলনায় মোস্তাফিজুর রহমান একটু বেশি রান দিলেও তাসকিন সেক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ওয়ানডে তে ৬.৬০ ইকনোমিতে ৮ ওভারে কাটার মাস্টার দিয়েছিলেন ৫৩ রান। তবে দলের অন্য দুই বোলার দুজন তাদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। ৫.৮০ ইকনোমিতে শরিফুল ইসলাম ১টি উইকেট ও ৩.১০ ইকনোমিতে তাসকিন আহমেদ ১০ ওভারে মাত্র ৩১ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২টি উইকেট। তবে তৃতীয় ম্যাচে শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ একটু খরুচে থাকলেও মোস্তাফিজ করেছিলেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। তবে তৃতীয় ম্যাচে কোনো পেসারই উইকেটের দেখা পাননি। তারপরও পেস আক্রমণ নিয়ে বেশ আশাবাদী টাইগার অধিনায়ক। দলে যোগ দিয়েছেন নতুন পেস বোলার কোচ অ্যালান ডোলান্ড। তাসকিন-ফিজদের নতুন এই কোচ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেস বোলার। এখন তার থেকেই মন্ত্র নিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটারদের বিধ্বস্ত করার যুদ্ধে নামবেন শরিফুলরা।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবার আগে শুধু বোলিং কোচই নন ফিল্ডিং কোচেরও পরিবর্তন করেছে বিসিবি। নতুন ফিল্ডিং কোচ হিসেবে এই সফর থেকেই টাইগারদের দলের সঙ্গে কাজ করবেন শেন ম্যাকডারমট। প্রোটিয়াদের মাটিতে গত ডিসেম্বরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে একটি ম্যাচেও জয়লাভ করতে পারেনি ভারত। লুঙ্গি এনগিদি, প্রিটোরিয়াস, ফেলেকাওদের পেস আক্রমণের সঙ্গে তাবরাইজ শামসি ও কেশব মহারাজের স্পিন আক্রমণের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সফরকারী ভারত। প্রোটিয়া পেসাররা উইকেটের সুবিধা পেলে সেখানে বাংলাদেশি পেসাররাও ভালো করার ব্যাপক সুবিধা পাবে। মোস্তাফিজের কাটারের সঙ্গে শরিফুলের আগ্রাসন দারুণ এক কম্বিনেশন তৈরি করে। সবুজ উইকেটে তাসকিনের গতির সঙ্গে স্লোয়ার-বাউন্সার যে কোনো ব্যাটারদের পক্ষেই মোকাবিলা করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে স্পিন আক্রমণে আছেন সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদ, মেহেদী মিরাজরা। এদিক দিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে বেশ আশাবাদী তাসকিন আহমেদ। দেশ ত্যাগের পূর্বে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজকে চ্যালেঞ্জিং মনে করলেও তাসকিন আরো বলেছিলেন, কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিছু কঠিন ম্যাচ জিতেছি। যেহেতু কঠিন কিছু ম্যাচ জিতেছি, এসব আমাদের আত্মবিশ^াস বাড়াতে সাহায্য করেছে। আমার বিশ্বাস যদি সেই খেলাটা খেলতে পারি, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও জেতা সম্ভব। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পোর্টিং উইকেটকে নিজেদের জন্যও আশীর্বাদ মনে করছেন তিনি। তিনি আরো বলেছিলেন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় ঠিকঠাক স্পোর্টিং উইকেট পাওয়া যায়। এসব জায়গায় বোলার, ব্যাটসম্যান দুজনেরই ভালো করার সুযোগ থাকায় চ্যালেঞ্জও বেশি। কারণ সমান বাউন্স থাকে, ক্যারিও দারুণ। ভালো জায়গায় বল না করলে রান হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। একই সঙ্গে সেখানে খুব নিয়ন্ত্রিত বোলিং হতে হবে। তাসকিনের বিশ্বাস, বাংলাদেশের ক্রিকেটে পেস বোলিংয়ে উন্নতি হচ্ছে। এই উন্নয়নকে কাজে লাগিয়ে তারা আসন্ন এশিয়া কাপ ও ২০২৩ বিশ^কাপ শেষ করতে ইচ্ছুক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App