×

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে ভুল করে ছোঁড়া ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ে কী জানা যাচ্ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২২, ০২:৩৪ পিএম

পাকিস্তানে ভুল করে ছোঁড়া ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ে কী জানা যাচ্ছে

বুধবার দুর্ঘটনাবশত পাকিস্তানের দিকে একটি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে ভুল করে ছোঁড়া ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ে কী জানা যাচ্ছে

২০১৭ সালে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে একটি সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র

পাকিস্তানে ভুল করে ছোঁড়া ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ে কী জানা যাচ্ছে

‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ গতিবেগ দুই দশমিক আট ‘ম্যাক’

দুর্ঘটনাবশত পাকিস্তানে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ভারত। বুধবার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সময় ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটির’ কারণে নিক্ষেপের এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় দিল্লি ‘গভীর অনুশোচনা’ প্রকাশ এবং দুর্ঘটনায় কেউ নিহত না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে। খবর বিবিসির।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশটির পূর্ববর্তী মিয়া চান্নু শহরে একটি ‘উচ্চ গতিসম্পন্ন উড়ন্ত বস্তু’ ধ্বংস হয়েছে ও সেই উড়ন্ত বস্তুর গতিপথের নিকটবর্তী যাত্রীবাহী বিমানের চলাচল ব্যহত করেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গত বুধবার (৯ মার্চ) নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাবশত একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হয়। ভারত সরকার একে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এ ধরনের ‘অবহেলার অপ্রীতিকর পরিণতির’ বিষয়ে সতর্ক থাকা ও এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেদিকে দিল্লিকে সতর্ক করেছে ইসলামাবাদ। তারা বলছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি হরিয়ানা রাজ্যের সিরসা থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো।

এদিকে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি পতনের আগে পাকিস্তানের আকাশসীমায় শব্দের গতির তিনগুণ উচ্চতায় ১২৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার ডিরেক্টর জেনারেল মেজর বাবর ইফতেখার গণমাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, গত বুধবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা ছয়টা ৪৩ মিনিটে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স অপারেশন সেন্টার ভারতীয় আকাশসীমার ভেতর উচ্চ গতিসম্পন্ন একটি বস্তুর উড্ডয়ন পর্যবেক্ষণ করে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক উড্ডয়নের পর উড়ন্ত বস্তু হঠাৎ পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে ও ছয়টা ৫০ মিনিটে (পাকিস্তান সময়) মিয়া চান্নুর কাছে পতিত হয়।

কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র তা নিশ্চিত করে না বললেও ধারণা করা হচ্ছে এটি সুপারসনিক মিসাইল বা শব্দের চাইতে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম ‘ব্রহ্মোস’।

[caption id="attachment_339558" align="aligncenter" width="700"] ২০১৭ সালে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে একটি সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র[/caption]

ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কী?

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্রের উল্লেখ না করলেও ভারতের সেনাবাহিনীর তিনটি বিভাগই যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।

ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও রাশিয়ার মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসোর্টিয়াম এনপিওর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া ‘ব্রহ্মোস’ এরোস্পেসের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ‘ব্রহ্মোস’।

‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ গতিবেগ দুই দশমিক আট ‘ম্যাক’ (ঘণ্টায় প্রায় তিন হাজার ৪৫০ কিলোমিটার বা দুই হাজার ১৪৮ মাইল বা ঘণ্টা)। অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম দিয়ে এটিকে থামানো কঠিন। বিভিন্ন ধরণের রাডার ফাঁকি দিতেও সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটি।

ভূপৃষ্ঠের ১৫ কিলোমিটার ওপর দিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আছে এই ক্ষেপণাস্ত্রের। এর ২০০ থেকে ৩০০ কেজি বিস্ফোরক (পারমাণবিক নয়) বহনের সক্ষমতা আছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির সঙ্গে একটি ইঞ্জিন রয়েছে, যেটি জ্বালানি বহন করতে পারে।

ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রথম ধাপে এই ইঞ্জিন অতি উচ্চ গতিতে (শব্দের চেয়ে দ্রুতগতি) ক্ষেপণাস্ত্রটি বহন করে নিয়ে যায় এবং ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর ‘র‍্যামজেট’ প্রযুক্তি (বিমান উড্ডয়নের এক ধরণের পদ্ধতি) কার্যকর হয়। তারপর ক্ষেপণাস্ত্রটির গতি বৃদ্ধি পায় এবং ‘ম্যাক থ্রি’ বা শব্দের তিনগুণ গতিবেগ অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছায়। সবচেয়ে বড় বিষয়, এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা যায় না।

[caption id="attachment_339559" align="aligncenter" width="700"] ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ গতিবেগ দুই দশমিক আট ‘ম্যাক’[/caption]

ভারতের ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে কী জানা যায়?

২০২০ সালের নভেম্বরে ভারত সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘ব্রহ্মোসের’ কয়েকটি ধারাবাহিক পরীক্ষা চালায়। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মাটি, সাগর ও বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায়।

ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ‘ব্রহ্মোস’ বিশ্বের একমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র যেটি শব্দের গতির তিনগুণ গতিতে ভ্রমণ করে। প্রাথমিকভাবে এটির রেঞ্জ ছিল ২৯০ কিলোমিটার, যেটিকে ৪০০ কিলোমিটারে উন্নীত করতে চায় ভারত।

২০১৯ সালে ভারত যখন ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করে, তখন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চালানো হয়। এ ধরনের সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির ৫ গুণ গতিতে যেন ভ্রমণ করতে পারে, সে বিষয়ে গবেষণা চলছে।

ভারত কতগুলো ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য না থাকলেও চীনভিত্তিক একটি সংস্থার ধারণা, ভারত ১৫ হাজারের বেশি ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। যার মধ্যে অন্তত ১৪ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র কেবল ভারতের সেনাবাহিনী ব্যবহার করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App