×

সারাদেশ

পানছড়ির নতুন আয়ের ক্ষেত্র তেঁতুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২২, ০৭:০০ পিএম

পানছড়ির নতুন আয়ের ক্ষেত্র তেঁতুল

বাড়িতে মহিলারা তেঁতুলের উপরের বাকল ফেলে বাজারজাত করণের জন্য প্রস্তুত করছে। ছবি: ভোরের কাগজ

বছর কয়েক আগেও পাহাড়ি বিভিন্ন গ্রামে পঁচে যেত তেঁতুল। সেই তেঁতুল এখন নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম ধুদুকছড়া থেকে ২০ কেজি পাঁকা তেঁতুল বাজারে আনার পথে পানছড়ি বাজারের ১ কিলোমিটার আগেই ইসলামপুরের রাস্তায় বিক্রি হয়ে যায় সুরবালা চাকমার তেঁতুল। এমন বেশ কয়েকজন মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায় সেখানকার তেঁতুলের বাজার অবস্থা।

এ ব্যাপারে সুরবালা চাকমা বলেন, গত কয়েক বছর আগেও তেঁতুল গাছে গাছে পঁচে যেত। তখন তেঁতুল কে খায়? এখন সে তেঁতুল রীতিমতো বিক্রে হচ্ছে বাজারে ও রাস্তায়। প্রথম প্রথম আমি তেঁতুল বাজারে আনতে লজ্জা পেতাম। তেঁতুল গাছটাকেও কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গত পাঁচ-ছয় বছর আগে এক বাঙ্গালি আমার কাছে তেঁতুল খুঁজলে গাছের সকল তেঁতুল সস্তায় বিক্রি করে দেই। পরের বছর সে আগের তুলনায় বেশি দাম দেয়। এখন দেখি বাজারে তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় এক সময়ের ফেলে দেওয়া ফলের আমরা কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছি। আগে ১টি তেঁতুল গাছ ছিলো এখন আমার পাঁচটি তেঁতুল গাছ আছে। প্রতি বছর আমি অনেক তেঁতুল পাই। আমাকে দেখে গ্রামের অনেক মানুষ তেঁতুল গাছ লাগিয়েছে। আবার অনেকে বাগানও করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে তেঁতুল ক্রয় করতে এসেছে শাহিন মিয়া। তিনি একজন মৌসুমী ফল পাইকারি ক্রেতা। তার মতো আরো ৪-৫ জন মৌসুমী ফল ব্যাসসায়ী আছেন। গত দশ বছর ধরে তিনি এ কাজে সম্পৃক্ত। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজার, পানছড়ি, মাইসছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি ও ভাইবোনছড়া থেকে মৌসুমী ফল কিনে মাটিরাঙ্গা বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন তিনি। তিনি জানান, তেঁতুল মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২ টন তেঁতুল ক্রয় করেন তিনি। তা বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতি সপ্তাহে তার ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়। তাছাড়া তার এ কাজে সহায়তা বাবদ কয়েকজনের কর্মসংস্থান হয়।

পানছড়ির স্থানীয় মৌসুমী ফল পাইকারি ক্রেতা আব্দুস সামাদ, শাহিনুর মিয়া, মিজানুর রহমান জানায়, ৬-৭ বছর আগে তেঁতুলের চাহিদা ছিলো না। এখন চাহিদা থাকায় নতুন আয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। উপজেলার ধুদুকছড়া, তারাবন ছড়া, ত্রিপুরা টিলা, লোগাং, পুজগাং, কানুনগো পাড়ায় তেঁতুল গাছ বেশি। আমরা ব্যাপারিরা অনেক সময় আগাম গাছেই তেঁতুল কিনে রাখি। এছাড়াও লোগাং বাজার, পানছড়ি বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহের হাটের তেঁতুল কিনে থাকি। গাছের আগাম কিনা তেঁতুল মাঘ-ফাল্গুন মাস থেকে পাঁকা শুরু হয় শেষ হয় চৈত্রে। তেঁতুল পাঁকলে গাছ থেকে নামিয়ে বাড়িতে কাজের লোক দিয়ে উপরের বাকল (চামড়া) ফেলে দিই। পরে মাটিরাঙ্গা ও গুইমারার ব্যাপারিদের কাছে নিয়ে বিক্রয় করি।

পানছড়ি উপজেলার উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অরুনাংকর চাকমা জানান, বাজারে তেঁতুল বিক্রি হওয়াই এখন অনেকে তেঁতুল গাছ লাগাচ্ছে। তেঁতুল গাছ লাগানোর পর তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। বড় তেঁতুল গাছ থেকে প্রতি বছর কয়েকশ মণ তেঁতুল পাওয়া যায়। আর পরিশ্রম একদম কম। তাই অনেকে তেঁতুল বাগান করার জন্য পরামর্শ চাইছেন। পানছড়ি কৃষি বিভাগ সব সময় বাগানিদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App