×

জাতীয়

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রশ্নে বিভক্ত সমাজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২২, ১১:৩১ পিএম

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রশ্নে বিভক্ত সমাজ

ফাইল ছবি

একবিংশ শতাব্দীতে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে নারীর জয়রথ- একথা অনস্বীকার্য। এই পথ প্রশস্ত করতে সংবিধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন আইন ও নীতিমালায় খুব জোরেশোরেই বলা হয়েছে নারী-পুরুষের সমতার কথা। সমতা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ, আইনেও স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবুও অনগ্রসরতার পাঁক, যেন মুক্তি নেই নারীর। এর প্রধান কারণ- সম্পদ-সম্পত্তিতে নেই সমঅধিকার। এই বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও সম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের সম্পত্তিতে অধিকারের বিষয়টি নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।

১৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে প্রয়াত বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের পরিচালক অনন্যা দাশগুপ্ত। বনানীর বাসিন্দা অশোক দাশগুপ্তের মেয়ে তিনি। রিটের প্রাথমিক শুনানিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির (স্থাবর-অস্থাবর) উত্তরাধিকার থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বী নারী বা কন্যাকে বঞ্চিত করার বিধান কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক।

এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রপার্টি অ্যাক্ট (১৯৩৭ সালের) অনুযায়ী হিন্দু বিধবা নারীর কৃষি-অকৃষি উভয় ধরনের সম্পত্তিতে অধিকার থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট।

প্রভাতি দাসের বিয়ে হয়েছিল ২০ বছর আগে। তিনি জানান, বিয়ের সময় ৩ ভরির গহনা, ২০ হাজার টাকা ও বরের হাতঘড়ি দিয়েছিলেন কনে পক্ষ। এর বাইরে তিনি কিছুই পাননি। স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। বাবা বা স্বামী কারোর সম্পত্তিই তিনি দাবি করতে পারেন না। কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় স্বামীর সম্পত্তিতে এবং অধিকার না থাকায় বাবার সম্পত্তির ভাগও তিনি চাইতে পারেন না।

এদিকে মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে শরিয়া আইনে তাদের ভাগ পুরুষের অর্ধেক। সেটিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয় না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে রুখসানা বেগম তেমনি একজন ভুক্তভোগী। রুখসানা জানান, তারা ৩ ভাই ও ২ বোন। বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। দুই ভাই সৌদি আরব আর এক ভাই দেশেই ব্যবসা করেন। সম্পত্তির ভাগ চাওয়ায় ভাই ও ভাবীদের চক্ষুশূল হয়েছেন তারা দুই বোন। আজ ৬ বছরের বেশি সময় ধরে বাবার বাড়িতে যান না তিনি। আলোচনায় কয়েকবার বসার পরও তা সুরাহা হয়নি। পরে দুই বোন মিলে মামলা করেছেন। মামলাটি এখনো চলছে।

অন্যদিকে বৌদ্ধদের জন্য আলাদা পারিবারিক আইন নেই। বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বৌদ্ধ পারিবারিক আইনের খসড়া তৈরি করেছিলেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরোধিতার কারণে আইনটি আলোর মুখ দেখেনি। হিন্দু পারিবারিক আইন দিয়েই বৌদ্ধসমাজ পরিচালিত। ফলে সম্পত্তিতে বৌদ্ধ নারীরও কোনো অধিকার নেই। মারমা নারীদের এখনো সম্পত্তিতে কোনো অধিকার নেই। বান্দরবান জেলার নারীরা সম্পদের ৪ ভাগের ১ ভাগ পান। আর খ্রিস্টান ধর্মে বলা আছে, অর্ধেক-অর্ধেক পাবে। তবে বাস্তব চিত্র এখানেও আলাদা। কেউ ক্যাথলিক, কেউ ব্যাপ্টিস্ট- এই ঘরানা অনুযায়ী সম্পত্তির অধিকারে নারীদের জন্য কিছু কিছু জায়গায় ব্যত্যয় দেখা যায়। এভাবে যুগ যুগ ধরে ভ‚মির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বাংলাদেশের নারীরা।

মালয়া ইউনিভার্সিটির ‘দ্য রাইটস অফ উইমেন ইন প্রপার্টি শেয়ারিং ইন বাংলাদেশ : ক্যান দ্য ইনহেরিটেন্স সিস্টেম এলিমিনেইট ডিসক্রিমিনেশন’ শীর্ষক গবেষণায় নারীরা কীভাবে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেই চিত্র দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়, অধিকাংশ নারীই তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। যারা সম্পত্তি পান, তারা স্বাধীনভাবে ভোগ করতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। যারা ভাইদের কাছ থেকে সম্পত্তির অধিকার চান, তাদের অনেক সময় একঘরে করে ফেলা হয়। এক্ষেত্রে আইনি অধিকার না চাওয়া এবং না পাওয়ার প্রবণতা আছে।

চলতি মার্চ মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টেও সেই বৈষম্যের চিত্র উঠে এসেছে। ‘নারী, ব্যবসা এবং আইন-২০২২’ শিরোনামের ওই রিপোর্টের তথ্য মতে, পৃথিবীর যেসব দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ কম, বাংলাদেশ তার অন্যতম। বিভিন্ন আইনি বাধা এবং আইন না থাকাই এর কারণ। বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর একেবারেই পেছনের দিকে। বাংলাদেশের স্কোর একশর মধ্যে মাত্র ৪৯ দশমিক ৪ এবং দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান ১৭৩তম। আফগানিস্তান বাদে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে। বৈশ্বিক এবং দক্ষিণ এশিয়ার গড় স্কোরের চেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে। যে ৮টি নির্দেশকের ওপর ৩৫টি প্রশ্নের ভিত্তিতে এ বিষয়ে স্কোর নির্ণয় করা হয়েছে- এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ছিল সম্পত্তিতে অধিকারের বিষয়টি। বাবা বা মায়ের সম্পত্তিতে পুরুষের সমান অধিকার নারীর নেই।

হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা আদিবাসী নারীদের সম্পত্তির অধিকারের তুলনায় মুসলিম পারিবারিক আইন কিছুটা কম বৈষম্যমূলক। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বেশির ভাগ নারীই নিতে পারেন না। পেলেও সেই সম্পত্তি ভোগের ক্ষেত্রে নারীর স্বাধীনতা নেই। যেমন- সম্পত্তি বিক্রি, বণ্টনসহ নানা ক্ষেত্রে এখনো বৈষম্য আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্পত্তির সমঅধিকারে ধর্মীয় রাজনীতি একটা বড় ভ‚মিকা পালন করছে। শত বছরের পুরনো আইন সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। ব্রিটিশ শাসনামলেও অভিন্ন পারিবারিক আইনে পরিবর্তন এসেছে। হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার হয়ে বিবাহ আইন, সতীদাহ প্রথা রদ আইন, বাল্যবিবাহ বন্ধ আইন হয়েছে। পাকিস্তান আমলেই মুসলিম পারিবারিক আইনে বেশকিছু পরিবর্তন হয়। তবে অভিন্ন পারিবারিক আইন না থাকায় সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। চারটি প্রধান ধর্মাবলম্বীর পারিবারিক আইনে পার্থক্য থাকার কারণে সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাজেই সম্পদ-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা বর্তমান সময়ের দাবি।

তবে গত ২৮ এপ্রিল ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অনেকের মধ্যে আশা জাগালেও সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে; তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত বিচারপতি এবং বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের সামনে বিচারপতি বা অন্য সবাই রয়েছেন, তাদের আমি অনুরোধ করব, হ্যাঁ, আমাদের ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম আইন (শরিয়া আইন) মানতে হবে, এটা ঠিক। কিন্তু কেবল শরিয়া আইনের দোহাই দিয়ে মা-মেয়েকে বঞ্চিত করে বাবার সম্পদ যে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়, তার কোনো সুরাহা করা যায় কিনা- আপনারা দয়া করে একটু দেখবেন। এটা করা দরকার।

এদিকে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া প্রস্তাবনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

সম্পত্তিতে কেন নারী অধিকার বঞ্চিত- এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ম ও পারিবারিক শিক্ষার কারণে নারীরা এখনো পরিবার ও সমাজে পুরুষদের আধিপত্য মেনে নেয় ও সম্পত্তির অধিকারে নিজ দাবি ছেড়ে দেয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সবার সমানাধিকার নিশ্চিতে অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি) প্রণয়ন আবশ্যক। আইন প্রণয়নের পথে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি, সংস্কৃতির যে বাধা আছে তা নিরসনে কাজ করলেও ধর্মের দোহাই দিয়ে একটি গোষ্ঠী এখনো অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বাধা হয়ে আছে। যারা এটি করছেন তারা কতটুকু ধর্মীয় চেতনার দ্বারা আর কতটকু কায়েমি স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত তা স্পষ্ট। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে ১৯৮৫ সাল থেকে কাজ কছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ১৯৯৩ সাল থেকে দেশের বিজ্ঞ আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীরা সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মী সংগঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে আইনটির প্রস্তাবনা পূর্ণাঙ্গ করে প্রকাশ করে। এই প্রস্তাবনা বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীসহ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং আইন কমিশনে জমা দিয়ে এই প্রস্তাবনা আইনে পরিণত করার জন্য এডভোকেসি ও লবি করে যাচ্ছে। তবে কাঠামোগত বাধার কারণে সরকার এই আইন প্রণয়নে অগ্রসর হতে পারছে না। তবে যারা এই আইনের বিরোধিতা করছে তারা সংখ্যায় মুষ্টিমেয়।

এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ভোরের কাগজকে বলেন, নারীকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সম্পদ-সম্পত্তির সমঅধিকারের কোনো বিকল্প নেই। পরিবার একটি প্রতিষ্ঠান, এখানে সবার সবকিছুতে সমান অধিকার থাকতে হবে। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, নারীর ব্যক্তি অধিকার ধর্মীয় আচার-আচরণ দ্বারা নির্ধারিত। ধর্মের ভিত্তিতে নারী অধিকার নির্ধারিত হলে নারীসমাজ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কাজেই সাংবিধানিক ধারার সঙ্গে সংগতি রেখে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকারসহ সব নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন জরুরি। পাশাপাশি, সরকার নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সিডওসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ স্বাক্ষর ও অনুমোদন করেছে। এসব সনদ বাস্তবায়ন করতে হলেও অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন জরুরি।

আইন থাকলেই সমস্যার সমাধান হবে এমনটা মনে করেন না মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আইন থাকলেই যেসব হয় তেমনটা কিন্তু নয়। কারণ খ্রিস্টান পারিবারিক আইনে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও সামাজিকতা হলো এমন যে তারাও নারীকে সমান ভাগ দিতে চায় না। তবে আইন থাকলে যেটি হয় সেটি হলো, নিজের অধিকার সম্পর্কে যিনি সচেতন তিনি ওই আইনের সাহায্য নিতে পারবেন। আর যারা ধর্মীয় আইন মানতে চায় তিনি সেটিই মেনে চলবেন। অভিন্ন পারিবারিক আইনটি হবে অভিন্ন এবং অসাম্প্রদায়িক। এটি কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য হবে না। সংবিধান ও মানবাধিকার মিলে একবারই সমান অধিকার নিশ্চিতের জন্য সবার। আমাদের সিভিল আইন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ফৌজদারি আইন ইত্যাদি ধর্ম দ্বারা পরিচালিত নয়। কিন্তু পারিবারিক আইন ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ধর্মের নামে অসাম্য ও বঞ্চনার সম্পর্কগুলো জিইয়ে রাখা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক মনে করেন, সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারসহ অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হতে হবে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, একদিকে নারী ও পুরুষের সমানাধিকার বলা হচ্ছে। আবার অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বাধা দিচ্ছি। এক্ষেত্রে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। রাষ্ট্রের শক্তিশালী ভ‚মিকা নিতে হবে।

নারী ও পুরুষের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি পরিবার থেকেই শুরু হয়। একই পরিবারে জন্ম নিয়ে ছেলে বেশি পায় আর মেয়ে কম পায়। মা-বাবাই এই বৈষম্য করে। বাবা তার মেয়েকে সম্পত্তি বণ্টন করে দেন না। স্বামীও দেন না। সেই কারণে নারীরা বঞ্চিত। যুগের পর যুগ এমনটাই চলে আসছে। মেয়েকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে মা-ই ভূমিকা রাখে। মেয়েকে সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ মা-ই করে। আবার অনেক মেয়ে আছে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে সম্পত্তি নিতে চায় না। সমাজ তৈরি হয়েই আছে যে, মেয়েটা সম্পত্তি নেবে না। সমাজকে বদলাতে আমরা পারিনি। কারণ বাবা-মাকেও বদলাতে পারিনি আমরা। কিছু কিছু জায়গা থেকে যখন অধিকারের বিষয়ে কথা বলা হয় তখনই তা বিশাল ঘটনা হয়।

অধ্যাপক ড. তানিয়া হক আরো বলেন, সমাজ নারীকে যেমন বঞ্চিত করছে; অপরদিকে পুরুষের ওপর বেশি দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হচ্ছে। হিসাব-নিকাশটা আসলে সমান হওয়া দরকার। একটা মেয়ে হয়ে বাবার সম্পত্তিকে আমার সম্পত্তি বলতে পারব না, ভাই সব দাবি করবে- এটা আসলে হয় না। এমন একটা আইন হোক, যেখানে সম্পত্তি সমান সমান বণ্টন হবে। আর সম্পত্তি কখন হস্তান্তর হবে এটি বাবা-মা’র ওপর নির্ভর করুক। আইনে থাক বাবা-মার মৃত্যুর পর সম্পত্তি সমান ভাগ হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কারের বিষয়টি ‘সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার’ প্রসঙ্গে এসে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি করছে। এই আইনটি সংস্কার হলে হিন্দু এবং বৌদ্ধ উভয় ধর্মের নারীরাই উপকৃত হবে। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রটিও সহজ হবে। কিন্তু এই আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে ঐকমত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে দোটানা।

ব্যক্তিগতভাবে আইনটিতে কিছু সংযোজন আনার পক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তার মতে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে যারা হিন্দু আইনের কোনোরকম পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা সংযোজন হলে হিন্দুধর্ম এবং সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে বক্তব্য দেন এটি ঠিক নয়। আইন সংস্কারের কারণে ভারতের হিন্দু সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়নি। এদিকে এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, দুইপক্ষের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না। আলাপ-আলোচনায় দুইপক্ষকেই ন্যায়ের পক্ষে একটা সমঝোতায় আসার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App