×

জাতীয়

নারীদের জন্য অনিরাপদ সাইবার স্পেস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২২, ১১:১৫ পিএম

নারীদের জন্য অনিরাপদ সাইবার স্পেস

সাইবার স্পেসে নারীরাই বেশি হয়রানির শিকার হন। ফাইল ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সাইবার স্পেসে নারীর পদচারণা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এখন অনেক সেবাই অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় মানুষ অনেক বেশি ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও মেয়েশিশু থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীরা ইন্টারনেটে অনেক বেশি যুক্ত হয়েছে। তবে নারীদের জন্য এখনো নিরাপদ করা যায়নি সাইবার স্পেস। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছরের গত দুই মাসে ৬৬৫ জন নারী সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। পুলিশ সাইবার সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ পাচ্ছে তার মধ্যে ৪৩ শতাংশ অভিযোগই ভুয়া আইডি নিয়ে। আর এরপরই রয়েছে ব্ল্যাকমেইলিং। যদিও সাইবার অপরাধ ঠেকানোর কাজে নিয়োজিতরা বলছেন, প্রতিনিয়তই এসব অপরাধ প্রতিরোধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে সাইবার স্পেসে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সদা সজাগ, সচেতন, সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।

গত ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর সাইবার স্পেসে নানা হয়রানির শিকার নারী ভিকটিমদের সহায়তার জন্য পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে একটি সেবার উদ্বোধন করেন পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখা সেবা কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে। এই সেবা উদ্বোধনের পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজে মোট ২০ হাজার ৬৭৫টি মেসেজ, হটলাইন নম্বরে ৩৭ হাজার ১৮৯টি ফোনকল ও ৫০৮টি ই-মেইল এসেছে। সেবাপ্রত্যাশীদের মধ্যে ১৫ হাজার ৩৭৮ জন নারী সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন। সর্বমোট ১০ হাজার ৫ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এলআইসি শাখা সূত্র আরো জানায়, এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৭৪টি ভুয়া আইডি সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা মোট অভিযোগের ৪৭ শতাংশ। আইডি হ্যাক নিয়ে অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৬৩৮টি, যা মোট অভিযোগের ১১ শতাংশ। ব্ল্যাকমেইলিং নিয়ে ২ হাজার ৩৮৭টি অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা মোট অভিযোগের ১৬ শতাংশ। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে উত্ত্যক্ত করা বা ভয় দেখানোর অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৭৩৬টি, যা মোট অভিযোগের ১১ শতাংশ। আপত্তিকর কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগ ১ হাজার ২৬৯টি, যা মোট অভিযোগের ৮ শতাংশ। আর অন্যান্য বিষয়ক অভিযোগ পাওয়া যায় ১ হাজার ৬৭৪টি, যা মোট অভিযোগের ১১ শতাংশ।

সম্প্রতি এক তরুণীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। পরে হ্যাকার তার অ্যাকাউন্টে থাকা কিছু ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ওই তরুণী এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে দ্রুত প্রতিকার না পেয়ে তিনি হ্যাকারকে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করে অ্যাকাউন্ট ফেরত পান। সম্প্রতি এক যুবক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার হুমকি দেয় তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে। ভুক্তভোগী নারীর এমন ঘটনায় একটি খবর প্রকাশ হলে তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন এক ব্যক্তি। আলাপচারিতার একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর কাছে যেসব ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে তা দিতে বলা হয়। মামলার প্রয়োজনে দরকার এমন সরল বিশ্বাসে ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে দেন ভিকটিম। পরে সেসব ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তি। পরে সিআইডির জালে ধরা পড়ে সেই প্রতারক।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি মিডিয়া মো. কামরুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় ডিএমপি, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই কাজ করছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে আলাদা একটি ইউনিটই কাজ করছে। ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন তাই সেখানে নারী পুলিশ সদস্যদেরই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে যারা সাইবার জগতে প্রবেশ করছেন, এ জগতের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন হয়েই সেখানে বিচরণ করা উচিত। তারপরও যদি কেউ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হন সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। এক্ষেত্রে ভিকটিমের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করেই তাকে সেবা দেয়া হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App