×

আন্তর্জাতিক

রাশিয়াকে থামাতে কেন আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিচ্ছে না চীন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২, ০৮:৩০ পিএম

রাশিয়াকে থামাতে কেন আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিচ্ছে না চীন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং।

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এক মাস আগে ঘোষণা করেছিলেন বেইজিংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার নতুনভাবে দৃঢ় হওয়া সম্পর্কের কোনো সীমা নেই।

তিনি এবং তার রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিংয়ে দেখা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমঝোতাপত্র তৈরি করেন। এরপরই তারা শীতকালীন অলিম্পিকস গেমস দেখতে যান। খেলা শেষ হওয়ার কিছুদিন পর রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করে।

চীন সরকার কখনো এ আক্রমণের নিন্দা জানায়নি। এবং রাশিয়ার এ হামলাকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবেও অভিহিত করেনি। দেশটি সবসময়ই বলেছে তাদের পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী তারা অন্যদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করবে না। এটিই চীনের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা।

চীনের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকে অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, চীন কি এরইমধ্যে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে?

ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে চীনের এমন ভূমিকার নেপথ্য কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি আভাস দেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্রবিরতি প্রশ্নে মধ্যস্থতা করতে তারা প্রস্তুত আছেন। তখন চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি অটল সমর্থন বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওয়াং। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ করার জন্য সব রকমের উদ্যোগ নিতে চীন প্রস্তুত আছে।

চীন সরকার সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে। এর কারণে বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন উল্লেখ করে তারা চরম উদ্বেগ জানায়। এ ছাড়া চীন আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার অভিযানের ওপর নিন্দা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে চীন অংশ নেয়নি। চীন ও ভারতসহ ৩৪ দেশ এসময় ভোটদান থেকে বিরত থাকে।

রাশিয়ার আক্রমণের বিরোধিতায় চীনের এমন ভূমিকায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। কারণ, তারা ভেবেছিলেন, চীন রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোট দেবে।

সুতরাং, এটি কি চীনের নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

চীন রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে স্বীকৃতি প্রদান এবং একই সঙ্গে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর নীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিং ও মস্কোর সম্পর্ক গভীর করার ঘোষণা দিয়ে ৫ হাজার শব্দের নথিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। যদিও ওই সমঝোতাপত্রে দুই পক্ষের সাধারণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি চীন ও রাশিয়ার যৌথভাবে তৈরি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, যার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

মূলত ন্যাটোর বিস্তারের বিরোধিতার প্রশ্নটিই চীন ও রাশিয়াকে একত্র করেছে।

রাশিয়াকে নিয়ে চীনের বর্তমান অবস্থানের পেছনে আরেক কারণ তাইওয়ান। স্বায়ত্তশাসিত এ দ্বীপ অঞ্চলটিকে নিজেদের প্রদেশ হিসেবে দেখে থাকে বেইজিং। একে চীনের অংশ হিসেবেই দেখেন শি জিন পিং। তিনি যদি অঞ্চলটিকে দখল করতে চান, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা একই রকম বা তার চেয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। চীনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ, নিষেধাজ্ঞা প্রদান কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজন থেকে দেশটিকে বাদ দেয়া হতে পারে। রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে স্বীকৃতি জানিয়ে এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের মূল নীতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্যে চীন নিজেদের ভবিষ্যৎ ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। চীনের নেতা শি জিন পিং হয়তো চাইছেন, ভবিষ্যতে তাইওয়ানে অভিযান চালালে তিনি যেন একে ন্যায্য বলে দাবি করতে পারেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকেও সে মুহূর্তে সমর্থন হয়তো প্রত্যাশা করেন শি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App