রাশিয়ার পরমাণু বোমা হামলার ঝুঁকি কতটা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২২, ০৭:২৩ পিএম
প্রতীকী ছবি
ছবি: সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘বিশেষ’ সতর্কতায় থাকার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের এ নির্দেশের মধ্যে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতের বদলে তিনি হয়ত আসলে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে এক ধরনের বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন যে তারা যেন ইউক্রেন ইস্যুতে বেশি তৎপরতা না দেখায়।
৭৬ বছর ধরেই বিশ্বের আটটি দেশে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এই দেশগুলো একে ‘এক ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে অভিহিত করে। অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র ওই দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হিসেবে কাজ করে। খবর বিবিসির।
রাশিয়ার কাছে কী পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আছে
পারমাণবিক অস্ত্রের হিসাবের পুরোটুকু এখনও অনুমাননির্ভর। তারপরেও ফেডারেশন ফর আমেরিকান সায়েন্টিস্ট বলছে, রাশিয়ার পাঁচ হাজার ৯৭৭টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আছে। যা পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ওয়ারহেডের মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং ইতোমধ্যেই সেগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
[caption id="attachment_338121" align="aligncenter" width="700"] ছবি: সংগৃহীত[/caption]বাকি সাড়ে চার হাজার কিংবা তার চেয়ে বেশি ওয়ারহেডের মধ্যে বেশিরভাগই কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অথবা রকেট। যা দূরপাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম। এগুলো সাধারণত পারমাণবিক যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত অস্ত্র।
বাকি অস্ত্রগুলো ছোট অথবা অপেক্ষাকৃত কম বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র যা কম দূরত্বের- মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে বা সাগরে ব্যবহারযোগ্য অস্ত্র। তবে এর মানে এই না যে রাশিয়ার হাজার হাজার দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত আছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ মুহূর্তে রাশিয়ার প্রায় ১৫০০ ওয়ারহেড মোতায়েন করা আছে। যার অর্থ সেগুলো ক্ষেপণাস্ত্র, বোমারু ঘাঁটি এবং সমুদ্রে সাবমেরিনে বসানো আছে।
অন্য দেশের তুলনায় রাশিয়ার সক্ষমতা কতটা?
পৃথিবীর মোট নয়টি দেশের পারমাণবিক অস্ত্র আছে- চীন, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে বিশ্বের ১৯১টি দেশ যারা পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি স্বাক্ষর করেছে তাদের মধ্যে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যও রয়েছে।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, এই দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূল করবে, যে লক্ষ্যে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুদ কমাবে। সত্তর-আশির দশকে ওই দেশগুলোর মজুদ করা ওয়ারহেডের সংখ্যা কিছুটা কমেও আসে। তবে ভারত, ইসরায়েল এবং পাকিস্তান কখনো এনপিটিতে সই করে নি। উত্তর কোরিয়া সই করলেও ২০০৩ সালে তা থেকে বেরিয়ে যায়।
পারমাণবিক শক্তিধর নয়টি দেশের মধ্যে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ যারা কখনও পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে বলে স্বীকার করেনি। কিন্তু দেশটির হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে মনে করা হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যদিও অভিযোগ করে আসছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনের পারমাণবিক অস্ত্র নেই এবং পারমাণবিক অস্ত্র লাভের চেষ্টা দেশটি করেছে এমন কোন প্রমাণও পাওয়া যায়নি।
[caption id="attachment_338122" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]পারমাণবিক অস্ত্র কতখানি বিধ্বংসী?
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিই হয়েছে সর্বোচ্চ ধ্বংসযজ্ঞের জন্য। কোন অস্ত্র কতটা বিধ্বংসী হবে সেটি নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ওয়ারহেডের আকার।
২. ভূমির কতটা ওপরে এটি বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।
৩. স্থানীয় পরিবেশ।
সবচেয়ে ছোট ওয়ারহেডও ব্যাপক প্রাণহানি এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় যে বোমার কারণে এক লাখ ৪৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছিলো, তার ওজন ছিল ১৫ কিলোটন। বর্তমান সময়ের ওয়ারহেডগুলো এক হাজার কিলোটনের বেশি হতে পারে। কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণ হলে তার চারপাশের এলাকায় কোন কিছু অবশিষ্ট থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
পারমাণবিক বিস্ফোরণে চোখ ধাঁধানো আলোকরশ্মি, বিশাল আগুনের গোলা এবং বিস্ফোরণের ফলে কয়েক কিলোমিটার এলাকার বড় বড় ভবন এবং স্থাপনা গুড়িয়ে দিতে পারে।
পারমাণবিক প্রতিরোধক ব্যবস্থার অর্থ কী?
এ ধারণার অর্থ, আপনার যদি বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র থাকে যা দিয়ে আপনার শত্রুকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সম্ভব, তাহলে সেটি আপনার শত্রুকে আপনার ওপর হামলা চালানো থেকে বিরত রাখবে। এ ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বিখ্যাত যে নামে ডাকা হয়, তা হচ্ছে ‘মিউচুয়ালি অ্যাসিওরড ডিস্ট্রাকশন’ বা ম্যাড। যার বাংলা অর্থ পারস্পরিক সমঝোতায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।
১৯৪৫ সালের পর আর কখনোই বিশ্বে পারমাণবিক হামলা হয়নি।
এর আগে যদিও বহু পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো ক্রমাগত নিজেদের অস্ত্রের কারিগরি ও বিধ্বংসী ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯৪৫ সালের পর আর কখনোই বিশ্বে পারমাণবিক হামলা হয়নি।
[caption id="attachment_338123" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]এক্ষেত্রে রাশিয়ার নীতিও পারমাণবিক অস্ত্রকে কেবলমাত্র একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহার করা এবং এজন্য চারটি ক্ষেত্রেই সেটি ব্যবহার করা হবে:
১. রুশ ফেডারেশন এবং তাদের মিত্ররা আক্রান্ত হলে ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চ করা হবে।
২. রুশ ফেডারেশন এবং তাদের মিত্রদের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র বা অন্য কোন গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করা হলে।
৩. রুশ ফেডারেশনের কোন সরকারি বা সামরিক স্থাপনার ওপর হামলা হলে, যা দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলে।
৪. প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে রুশ ফেডারেশনের ওপর কোন আগ্রাসন হলে, যা দেশটির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।