৫-৭ লাখ টাকায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাল সনদ বিক্রি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:১১ পিএম
গ্রেপ্তারকৃত ৫ জন
৫ প্রতারককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন সিআইডি
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাল সনদ তৈরি ও অধিদপ্তরের ভুয়া ওয়েবসাইটে আপলোড করে সনদ জালিয়াতি চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিরাজুল আজাদ (৩৫), মঞ্জুরুল আজাদ (৩২), তারিকুল আজাদ (৩০), আইটি অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম (৩০) ও মোহাম্মদ সোহেল রানা (২৯)।
সিআইডি বলছে, জাহাজে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বেতন বাড়ানো ও ক্যারিয়ারে পরের ধাপে যেতে কম্পিটেন্সি এবং প্রফিসিয়েন্সি সনদের প্রয়োজন হয়। আর গ্রেপ্তারকৃতরা ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় ভুয়া সনদগুলোর মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। এর মধ্য দিয়ে বাইরের দেশগুলোতে আমাদের সুনাম হুমকির মধ্যে পড়ছিল। সনদ জালিয়াতি চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান।
[caption id="attachment_337519" align="aligncenter" width="700"] নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাল সনদ বিক্রির দায়ে ৫ প্রতারককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]আজ সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানী মালিবাগের সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কামরুল আহসান বলেন, সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মকর্তা ও নাবিকদের যোগ্যতা সনদ পরীক্ষা নেয়ার কার্যক্রম পরিচালনাসহ তা ইস্যু করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান নৌপরিবহন অধিদপ্তর। বর্ণিত প্রতিষ্ঠান যেসব সনদ দিয়ে থাকে তা হচ্ছে সার্টিফিকেট অফ প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) ও সার্টিফিকেট অফ কম্পিটেন্স (সিএসি)। অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক জাহাজে কর্মরত নাবিক ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন যোগ্যতা সনদ ইস্যু করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। যা তাদের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইট সবসময় আপলোড থাকে। তবে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে এমন অভিযোগ পায় যে, এক প্রতারক চক্র তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরী করে যোগ্যতা সনদ যাচাইর কথা বলে প্রতারনা করে আসছে। ফলে বহির্বিশ্বে মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন করছে। সাইবার পুলিশ সেন্টার, এই কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত পূর্বক ঢাকার উত্তরখানে অবস্থিত ওরিয়েন্টাল গ্লোবাল ইন্টা. মেরিটাইম একাডেমিতে অভিযান চালিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিরাজুল আজাদ, ডিরেক্টর মঞ্জুরুল আজাদ, ডিরেক্টর তারিকুল আজাদ, আইটি অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক আইটি অফিসার মোহাম্মদ সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরও বলেন, সাইবার পুলিশ সেন্টার অভিযোগ পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান করে জানতে পারে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানা একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার ও এই চক্রের হোতা এবং ওয়েবসাইটটির ডিজাইনার। এর আগেও এই প্রতারক বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণা করেছিলো বলে স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপ, দুটি এইচডিডি হার্ডডিস্ক, দুটি এসএসডি হার্ডডিস্ক, একটি পেনড্রাইভ ও ছয়টি মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু ডিজিটাল আলামত জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, একটি ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুকরণে নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নকল কপ সার্টিফিকেট ভেরিফাইড দেখিয়ে তারা এই পর্যন্ত অনুমান শতাধিক নাবিককে বিভিন্ন রেটিংসে বিভিন্ন মার্কেন্ট শীপে চাকরী দিয়েছে। গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে ফেইক ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারে সংশ্লিষ্ট ডাটাবেস সার্ভারে ইন্সটল করা অবস্থায় পাওয়া যায় যেখানে কপ নম্বর সম্বলিত ১২০ এর অধিক সার্টিফিকেটের তথ্য বিভিন্ন সময়ে আপলোড করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল (ডিএমপি) থানায় মামলা করা হয়েছে।