×

জাতীয়

চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার চান শরীফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৩৮ এএম

চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার চান শরীফ

দুদকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন

চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ পুনর্নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত করা উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। আজ রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে সশরীরে হাজির হয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অভ্যর্থনা ডেস্কে আবেদনটি জমা দেন তিনি।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া আবেদনে অপসারণের আদেশটি সম্পূর্ণ ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অমানবিক’ হিসেবে উল্লেখ করে পুনর্বহালের প্রার্থনা করা হয়। দুদক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কমিশনে সততা, বিশ্বস্ততা, অধ্যবসায় ও সর্বোচ্চ ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়ে আমি আমার সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে ৭০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মামলা সুপারিশ, রুজু ও চার্জশিট দাখিল করে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করেছি।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলাগুলো হলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অবৈধভাবে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনিয়ম সংক্রান্ত ২০ মামলা, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮৬৩ জন খালাসী নিয়োগের দুর্নীতির মামলা ও সম্পদের অনুসন্ধান, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল করিম ও মো. আমিনের বিরুদ্ধে মামলা, স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে মামলা, কেজিডিসিএলের শিল্প গ্রাহক আবুল খায়ের গ্রুপ, ক্রাউন স্টিল, বায়েজিদ স্টিলস লিমিটেড, ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড, আরএফ বিল্ডার্সসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু ও সুপারিশ করেছি।

তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ সজেকায় কর্মকালীন ভালুকা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক সরকারি সম্পদ জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের দায়ে মামলা রুজু করে দুজনকে গ্রেপ্তার, ভূমি অফিসের নাজিরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় গ্রেপ্তারসহ আরও অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছি। এছাড়াও চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাকালীন আমার কাছে প্রায় ৭০টি অভিযোগের অনুসন্ধান ও ৪২টি মামলার তদন্তভার ছিল।

এর বাইরেও প্রধান কার্যালয়ের রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট দেওয়া বিষয়ক ছয়টি অভিযোগের অনুসন্ধান টিমের সদস্য, মাহিনী ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড অভিযোগের অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য, ১৫৭ প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাঁকখালী নদী দখল, চট্টগ্রাম এল এ শাখার দুর্নীতির বিপরীতে মামলা করার সুপারিশ, মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান, মহেশখালীর ২৭ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান টিমের সদস্য হিসেবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। সেসব অনুসন্ধান ও মামলা অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এবং কতিপয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশ পাওয়া যায় বলেও তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুর্নীতি ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট অনিয়মকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে সপরিবারে প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। তথাপি আমি ও আমার পরিবারের আর্থিক, সামাজিক ও জানমালের নিরাপত্তার দিকগুলো ন্যূনতম বিবেচনায় না নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (চাকরি) বিধিমালা-২০০৮ এর ৫৪ (২) বিধিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কোনোরূপ কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ করেই আমাকে অপসারণ করা হয়।

শরীফ আরও বলেন, আমাকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অমানবিকভাবে করা হয়েছে। এ আদেশটি দেওয়ার আগে আমাকে কোনরূপ কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়নি, যা কিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৫ (২) অনুচ্ছেদ এবং মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায় যৌক্তিক, আইনানুগ ও মানবিক কারণসমূহ বিবেচনায় নিয়ে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ পুনর্নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিতে ধারাবাহিকতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ পুনর্বহালের জন্য হুজুরের অনুকম্পা প্রার্থনা করছি।

এর আগে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে অপসারণের কথা বলা হয়। পরের দিন কমিশনের প্রধান কার্যালয়সহ ২১ জেলায় দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ওই বিধি বাতিল ও অপসারণের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App