×

জাতীয়

একদিনে এককোটি টিকার বিশাল যজ্ঞে ভোগান্তি ও বিশৃঙ্খলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৩৭ পিএম

একদিনে এককোটি টিকার বিশাল যজ্ঞে ভোগান্তি ও বিশৃঙ্খলা

ফাইল ছবি

বিগত কয়েকদিন ধরেই করোনা প্রতিরোধী টিকায় যেনো মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ভোর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা প্রত্যাশী মানুষ ভিড় করেছেন। ১ দিনে ১ কোটি টিকা-সরকারের এই কার্যক্রমের দিন আজ শনিবার সারাদেশের বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রে টিকা প্রত্যাশীদের ভিড় যেনো ছিলো আরো বেশি। মুগদা মাতৃসদন টিকা কেন্দ্রে ভোর থেকেই ছিলো মানুষের ভিড়। সকাল ৯টায় কেন্দ্রের গেইটে মানুষের জটলা। আর তিন সারির দীর্ঘ লাইন মুগদা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের গেইট ছাড়িয়ে গেছে। লাইনে দাঁড়ানো সবাই টিকা প্রত্যাশী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই লাইন আরো দীর্ঘ হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শ্যামলী ২৫০ বেডের টিবি হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল এমন কি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অস্থায়ী টিকা কেন্দ্রগুলোর চিত্রও ছিলো একই।

টিকা কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রগুলোতে প্রথম ডোজের টিকা নিতে মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হবার কথা থাকলেও অনেকেই এসেছেন ফজরের নামাজের পরপরই। শুক্রবার কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়েই অনেককে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। তারাই ভোর বেলা কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন আগেভাগে। টিকা প্রত্যাশীদের অধিকাংশই প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। অনলাইনে নিবন্ধন, এসএমএস, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ এমন সব জটিলতার কারণে টিকা নেয়ার আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছিলো। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারির পর টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ হচ্ছে এবং নিবন্ধন ও এসএমএস ছাড়াও কেন্দ্রে গেলেই টিকা মিলবে এমন খবরে রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে আগের মতো নানা বয়সী নারী ও পুরুষরা ছুটে যাচ্ছেন। ভিড় সামাল দিতে পারছেন না সেখানে দায়িত্বরত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। কেন্দ্রগুলোতে টিকা প্রত্যাশী নারী-পুরুষের জন্য আলাদা সারি থাকলেও সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না। অনেকের মুখেই ছিলো না মাস্ক। শিশু সন্তানকে কোলে করেও অনেক নারীকে এমনকি বৃদ্ধ মানুষদেরও ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে আবার ফেরতও গেছেন। ১ দিনে ১ কোটি টিকা-সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞে দেশের বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রে ছিলো এমন অব্যবস্থাপনাও।

টিকা কেন্দ্রের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের বক্তব্য টিকার জন্য অসুস্থ, প্রতিবন্ধী ও নবজাতক শিশু নিয়ে আসা মানুষদের লাইন ছাড়াই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের বারবার মাইকিং করে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হলেও ব্যাপক ভিড় থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকার বাইরের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলার ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে সকালে তুলনামুলক মানুষের ভিড় কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সেঙ্গে ভিড় বেড়েছে। হাজার হাজার মানুষকে টিকা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও হিমশিম খেতে হয়েছে। অনেকে লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে অধৈর্য্য হয়ে ফিরে যেতেও দেখা গেছে। অনেকে অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১ দিনে ১ কোটি টিকাদান কর্মসূচিতে জনসাধারণের অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। তবে টিকা প্রদানে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, টিকা গ্রহীতার ভিড় এত বেশি যে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছিনা। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা সরবরাহ রয়েছে।

প্রসঙ্গত; গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একদিনে ১ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৬ ফেব্রুয়ারি জানানো হয়, ২৬ ফেব্রুয়ারি পর প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম আমরা বন্ধ রাখা হবে। টিকা পেতে নিবন্ধন বা এসএমএসের প্রয়োজন হবে না। টিকা কেন্দ্রে গেলেই মিলবে টিকা। ২২ ফেব্রুয়ারি ১ দিনে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২৬ তারিখে যে ১ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হবে সেখানে টিকার প্রথম ডোজের উপর গুরুত্ব বেশি দেয়া হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজের উপর গুরুত্ব কম দেয়া হলেও পরবর্তীতে এর স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে সীমিত পরিসরে। কেনোনা তখন অনেক মানুষকে দ্বিতীয় ও বুস্টার (৩য়) ডোজের টিকা দিতে হবে। তাই ২৬ ফেব্রুয়ারির পর ২য় ও বুস্টার ডোজ গুরুত্ব পাবে।

এদিকে গত কয়েক দিন যাবত টিকা কেন্দ্রে টিকা প্রত্যাশীদের ভিড়, করোনা প্রতিরোধে টিকার আওতায় আনার যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ করতে সরকার ১ দিনে ১ কোটি টিকার গণ কার্যক্রম আরো ২ দিন বাড়িয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত রাখা এবং টিকার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়।

শনিবার বিকেলে অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে দেশের মানুষের বিপুল চাহিদার কথা বিবেচনা করে গণটিকা কার্যক্রম আরো ২ দিন বাড়ানো হলো। এর মধ্যে ১ম, ২য় ও বুস্টার ডোজ দেবার কার্যক্রমও চলমান থাকবে। যেভাবে দেশের সব টিকা কেন্দ্রে মানুষের ঢল নেমেছে তা দেখে আমরা অভিভূত। আশা করা যায় শনিবার টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এসময় মন্ত্রী সারা দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে টিকাদান কার্যক্রম চলেছে বলে দাবি করেন।

১ দিনে ১ কোটি মানুষকে টিকাদান কার্যক্রমে দুর্ভোগ ও অব্যবস্থাপনা থাকলেও বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রের পাশে ছিলো বর্ণিল সাজে সাজানো কিছু ট্রাক। সেই সব ট্রাকে বাউল শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন গান। করোনা প্রতিরোধমূলক সচেতনতামূলক বার্তা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে সকাল থেকে ট্রাকে বাউল শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।

সারা দেশে ২৮ হাজার বুথে বিশাল এই টিকা দান কর্মযজ্ঞ চলেছে। সব বুথে টিকা দেয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক মিলে মোট ১ লাখ ৪২ হাজার জন। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে ৩০ থেকে ৫০টি করে বুথে টিকা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জের কয়েকটি টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর ও অীতরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা দেশের বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App