×

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞা, রুশ-জার্মান গ্যাস প্রকল্প বন্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:২৪ পিএম

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞা, রুশ-জার্মান গ্যাস প্রকল্প বন্ধ

ভিাদিমির পুতিন, বরিস জনসন ও ওলাফ শোলৎজ। ফাইল ছবি

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞা, রুশ-জার্মান গ্যাস প্রকল্প বন্ধ

ইউক্রেন সংকটে রাশিয়ার পদক্ষেপর তীব্র সমালোচনা করে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: বিবিসি

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দুই অঞ্চলে সেনা পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়ার পাল্টা জবাবে রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। এগুলো হলো রোসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসভায়াজ ব্যাংক এবং ব্ল্যাক সি ব্যাংক। এগুলো রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক। একই সঙ্গে নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপ প্রকল্প বন্ধ করছে জার্মানি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও নিষেধাজ্ঞা জারির পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এই নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা করেন। খবর বিবিসি. সিএনএন ও গার্ডিয়ানের।

রাশিয়ার তিনজন ব্যক্তির সকল সম্পদের পরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। তারা হলেন জেনাডি তিমচেনঙ্কো, বরিস রোটেনবার্গ এবং আইঘোর রোটেনবার্গ। যুক্তরাজ্যে থাকা তাদের সকল সম্পদ জব্দ অবস্থায় থাকবে। তারা যুক্তরাজ্যে যাতায়াত করতে পারবেন না। যুক্তরাজ্যের কোন নাগরিক তাদের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য করতে বা সম্পর্ক রাখতে পারবেন না।

[caption id="attachment_336499" align="aligncenter" width="700"] ইউক্রেন সংকটে রাশিয়ার পদক্ষেপর তীব্র সমালোচনা করে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: বিবিসি[/caption]

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য এবং তার সহযোগী মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে।

শান্তির চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুইটি অঞ্চলের স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টভাবে মিনস্ক চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।

বিচ্ছিনতাবাদী অঞ্চলের স্বীকৃতি দিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন সম্পূর্ণ ইউক্রেনে হামলা করার প্রেক্ষাপট তৈরি করছেন বলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেছেন মি. জনসন।

পুতিনের পরিকল্পনার পরবর্তী অংশের বাস্তবায়ন ঠেকাতে আমাদের এখনি প্রস্তুতি নেয়া উচিত, বলেছেন বরিস জনসন।

ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের তিনি জানিয়েছেন, প্রায় দুই লাখ সৈন্য ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে।

তিনি বলেছেন, সবচেয়ে যেটা খারাপ ঘটতে পারে, তাতে ইউরোপিয় একটি দেশের চার কোটি ৪০ লাখ পুরুষ, নারী ও শিশু কোন রকম যৌক্তিক কারণ ছাড়াই একটি পুরোদস্তুর আগ্রাসী যুদ্ধের মধ্যে পড়ে যেতে পারে।

তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি না বদলাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং অন্য মিত্র দেশগুলো যে সহনশীলতার সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে, তা ব্যর্থ হবে।

রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছে ইউক্রেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অনুরোধ তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন।

একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইউরোপিয় মিত্র দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, তারা যেন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেরি না করে।

রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধ বাধবে না বলে তিনি মনে করলেও, মি. জেলেনস্কি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি দেশে মার্শাল ল' জারি করতে প্রস্তুত রয়েছেন।

নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপ প্রকল্প বন্ধ করছে জার্মানি

জার্মানির চ্যান্সেলার ওলাফ শোলৎজ বলেছেন রাশিয়ার সর্বসাম্প্রতিক পদক্ষেপের পর নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প চালুর অনুমোদন জার্মানি দেবে না।

রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে এই পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে, কিন্তু পাইপলাইনটি এখনও চালু হয়নি।

যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুইটি অঞ্চলকে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ায় যুক্তরাজ্যের মতো একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বিবিসির ইউরোপ সংবাদদাতা ক্যাটিয়া অ্যাডলার বলছেন, বিশেষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা বিশেষ লক্ষ্যে এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। যদি ইউক্রেনে রাশিয়া তার সামরিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি করে, তাহলে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করা হবে বলে বলা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্ত হল:

দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দেয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে যারা যারা জড়িত রয়েছেন (যাদের মধ্যে রাশিয়ান পার্লামেন্টের ৩৫১ জন সদস্যও রয়েছেন), এবং যে ১১ জন ব্যক্তি ওই প্রস্তাবটি তুলেছেন যেসব ব্যাংক রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এবং ওই অঞ্চলের কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূলধনী বা আর্থিক বাজারে রাশিয়ার রাজ্যগুলো বা সরকারের সংশ্লিষ্টতার সুযোগ স্থগিত করা বিচ্ছিন্নতাবাদী দুইটি অঞ্চলের সঙ্গে সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করা। যারা এটি করবেন, তাদের আর্থিক শাস্তি নিশ্চিত করা। এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের সকল সদস্যের সম্মতি থাকতে হবে। তবে পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ব্রাসেলসও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যৌথ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায়। কিন্তু কূটনীতিকরা আশঙ্কা করছেন, হাঙ্গেরি এসব নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একমত নাও হতে পারে। কারণ দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান মস্কোর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ।

এছাড়া জ্বালানি সরবরাহ এবং কম মূল্যে প্রাপ্তির কারণে রাশিয়ার ওপর ভবিষ্যতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে নিজেদের দ্বিধার কথা পরিষ্কার করে দিয়েছে জার্মানি, ইটালি এবং অস্ট্রিয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App