×

জাতীয়

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:১৩ পিএম

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নেদারল্যান্ডের হেগে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টায় এ শুনানি হয়।

এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত আট কর্মকর্তার মধ্যে অন্তত চারজনের ওপর এখনো ইইউর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব ব্যক্তি কিভাবে এবার শুনানিতে অংশ নেবেন, তা নিশ্চিত নয়। প্রথম পর্বের শুনানিতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। তখন তিনি দেশিটির সেনাবাহিনীর পক্ষেই সাফাই গেয়েছিলেন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তিনি ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়েন। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভুত্থান ঘটে। এ সময় ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে অং সান সু চিকে কারাগারে নিক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। এর পর গত জুনে আইসিজেতে মামলা মোকাবেলায় জান্তা সরকার নতুন করে আট সদস্যের আইনি দল গঠন করা হয়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই মামলায় প্রথম পর্বের শুনানির পর আদালত অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছিলেন। এবার শুনানি হচ্ছে আদালতের বিচারিক এখতিয়ারসহ মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তিগুলো নিয়ে।

আইসিজে জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে শুনানি হচ্ছে হাইব্রিড কাঠামোয়। এ ব্যবস্থায় আদালতের কিছু সদস্য আদালতে সশরীরে উপস্থিত থাকছেন। বাকিদের ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়ার কথা। বিবদমান দুই পক্ষও সশরীরে বা ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আদালতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

আইসিজে বলেছে, মামলা বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি নিয়েই এবার শুনানি হচ্ছে। এতে মিয়ানমার তার আপত্তির পক্ষে মৌখিকভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার সুযোগ পাবে। এক দিন বিরতি দিয়ে আগামি বুধবার সন্ধ্যায় গাম্বিয়া মামলার পক্ষে তার যুক্তি উপস্থাপন করবে। এরপর শুক্রবার রাতে মিয়ানমার এবং রবিবার রাতে গাম্বিয়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে।

এদিকে মিয়ানমারের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী কর্তৃপক্ষ কে—তা নিয়ে বৈশ্বিক অঙ্গনে জান্তা নেতৃত্বাধীন ‘রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিল’ ও অং সান সু চিপন্থী জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজে) মধ্যে কূটনৈতিক লড়াই চলছে। এর মধ্যে আগামীকাল এই শুনানি শুরু হচ্ছে। এনইউজে নিজেদের মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে দাবি করে আইসিজেতে আবেদন করলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত আদালত তাতে আনুষ্ঠানিক সাড়া দেয়নি।

এনইউজে সম্প্রতি আইসিজেকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এবং এই মামলায় আইসিজের বিচারিক এখতিয়ার আছে বলে এনইউজি স্বীকার করে। তাই তারা এখতিয়ার নিয়ে শুনানিতে সময় নষ্ট না করে বিচার শুরু করার আবেদন জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার আইসিজেতে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগকে নিজেদের বৈধতা হিসেবে দাবি করতে পারে। তবে জাতিসংঘ জান্তাকে যেখানে স্বীকৃতি দেয়নি, সেখানে আইসিজেতে জান্তা সরকার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

গত রবিবার রোহিঙ্গা গণহত্যা তদন্তে জাতিসংঘ গঠিত সাবেক স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী কমিশনের সদস্য ক্রিস্টোফার সিডোটি এক পডকাস্ট বার্তায় বলেছেন, জান্তা মিয়ানমারের সরকার নয়। দেশে ও বিদেশে মিয়ানমারের সরকার হিসেবে কাজ করার কর্তৃত্ব বা সামর্থ্য কোনোটিই এই জান্তা সরকারের নেই।

মিয়ানমার থেকে প্রিাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাই আইসিজেতে গণহত্যার মামলা করা এবং মামলা পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগে গাম্বিয়ার পাশে আছে শেখ হাসিনার সরকার।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হকবলেন, আইসিজেতে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদালত যদি বলে একে গণহত্যা বলে অভিহিত করে তাহলে গণহত্যাকারী মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে অন্যান্য স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App