×

শিক্ষা

এখনও ৭৫টি স্প্লিন্টার শাবির সেই সজলের শরীরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:২১ পিএম

এখনও ৭৫টি স্প্লিন্টার শাবির সেই সজলের শরীরে

সজল কুন্ডু

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থী সজল কুন্ডুর শরীরে শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেডের ৮৩ টির বেশি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। সম্প্রতি অস্ত্রোপচারে তার ডান হাত থেকে ৪টি স্প্লিন্টার অপসারিত হলেও একমাস পর এখনও শরীরে ৭৫টির বেশি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। এসব স্প্লিন্টার তাকে সারা জীবন বহন করতে হবে।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান সজল কুন্ডু।

তার ভাষ্যমতে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি সজল সিলেটে ফিরেছেন। সজলের শরীরে এখনও ৭৫টির অধিক স্প্লিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশংকায় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না চিকিৎসকরা, ফলে স্প্লিন্টার নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে।

চিকিৎসার বিষয়ে সজল জানিয়েছেন, ১৬ জানুয়ারি মারাত্মক আহত অবস্থায় সিলেটে চিকিৎসা শুরুর পর ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ দিন যাবত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ডান হাতের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর আশেপাশের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা হয়েছে। এখনও তার মাথা, ঘাড়, বুক, পেট-পিঠ, হাত-পাসহ শরীরের বেশ কিছু স্থানে ৭৫টিরও বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশংকায় চিকিৎসকরা আরও অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে নতুন নতুন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার শংকাও রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের কথা তুলে সজল কুন্ডু আরও জানান, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে তাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান, তার ভবিষ্যতের সমস্ত চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। চাকরি প্রদানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস বা পদক্ষেপ দেননি।

নিজের পারিবারিক অবস্থা উল্লেখ করে সজল বলেন, আমার বাবা মৃত, অসুস্থ মাকে নিয়ে অসচ্ছল পরিবার আমার। সম্প্রতি কিছু ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে একসময় সুদিন আসবে। কিন্তু একটি দিনের ব্যবধানে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে তার আশংকায় এখন যে আমাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তার দায় কে নেবে?

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সজল জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের সমস্ত দাবির ব্যাপারে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তা অচিরেই খুলে দেয়া হবে। কিন্তু তার আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মামলাসমূহ প্রত্যাহার কিংবা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমি দেখতে পাইনি।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রিতা আমাকে প্রচণ্ড হতাশ করেছে। এছাড়াও ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ যে মিথ্যাচার ও মনগড়া কথা বলেছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাকেও ক্ষুব্ধ করেছে। এসময় শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি মেনে নিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমস্বরে মহামান্য আচার্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান সজল।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরুজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ড. এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ হন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। অবরুদ্ধ অবস্থায় সেখানেই সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এমনকি রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পুলিশ। এতে গুরুতর অসুস্থ সজলসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের নানা কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।

পরে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল সস্ত্রীক ক্যাম্পাসে এসে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। আন্দোলন রূপ নেয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদে। পরে শিক্ষামন্ত্রী সিলেটে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন, এমনকি তিনি ক্যাম্পাসেও আসেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মূল দাবিসহ অন্যান্য দাবিসমূহ মেনে নিতে কোনো পদক্ষেপ বা উদ্যোগ দেখেননি বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আমাদের দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে অপেক্ষায় রয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App