×

জাতীয়

দশম শ্রেণি থেকে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তরুণীরাই ছিল টার্গেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:৪৬ পিএম

দশম শ্রেণি থেকে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তরুণীরাই ছিল টার্গেট

আল ফাহাদ। ছবি: ভোরের কাগজ

দশম শ্রেণি থেকে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তরুণীরাই ছিল টার্গেট

দশম শ্রেণী থেকে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া নারীরাই ছিল তার টার্গেট। পার্টটাইম কাজে দেয়ার কথা বলে ফাঁদে ফেলে করানো হতো ভার্চুয়াল মেডিকেল পরীক্ষা। আর মেডিকেল পরীক্ষার সময় ধারণ করা হতো গোপন ভিডিও। আর সেসব ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের নামে চলতো প্রতারণা।

আল ফাহাদ (১৯) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় রাজধানীর কাওরান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশে চাকুরীর প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে শতাধিক নারীর ভার্চুয়াল মেডিকেলের নামে গোপন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে রাজধানীর নর্দ্দা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফাহাদকে। র‍্যাব মুখপাত্র কমাণ্ডার মঈন বলেন, বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী এমন ঘটনায় রিপোর্ট টু র‌্যাব অ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিষয়টি অবহিত করে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত রাতে আমাদের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাজধানীর গুলশান থানাধীন নর্দ্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিংয়ের নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে প্রতারণার অপরাধে ফাহাদকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি ক্যামেরা, ২টি ক্যামেরার লেন্স ও ১টি মোবাইল ফোন, ৬টি সিমকার্ড, ১টি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ফাহাদ অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়।

[caption id="attachment_335487" align="aligncenter" width="700"] আল ফাহাদ। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

গ্রেপ্তারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ফাহাদ ইন্টারনেট ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন সাইটে দেশী-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চ বেতনের চাকুরির প্রলোভন দেখাত। ফলে অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করত। চাকুরিপ্রার্থী প্রতি জনের কাছ থেকে সে ৩৫০-৫০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিত যাতে অধিক সংখ্যক গ্রাহককে আকৃষ্ট করা যায়। অন্যদিকে টাকার পরিমাণ স্বল্প হওয়ায় ভিকটিমরা চাপ প্রয়োগ করবে না বলে সেই ধারণার বশবর্তী হয়ে সে বর্ণিত কাজে যুক্ত হয়। গ্রেপ্তারকৃত মোবাইলে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে নারী কণ্ঠে চাকুরী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। সে বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন সময়ে ভার্চুয়াল মেডিকেল করা হবে বলে জানাত।

এভাবে প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপস এর মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত হত। গ্রেপ্তারকৃত ফাহাদ নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিও কলে মেডিকেল পরীক্ষা নেয়ার নামে বিভিন্ন কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করত। পরবর্তীতে ভিকটিমদের ঐসব গোপন ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করত। এভাবে সে শতাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে জানায়। এককালীন নয়, প্রায়শ বিভিন্ন ভিকটিমকে তাদের গোপন ভিডিও/ছবি পাঠিয়ে জন প্রতি ২-৫ হাজার টাকা নিত। সে বিগত দেড় বছর যাবত এমনটি করে আসছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফাহাদ নারায়ণগঞ্জ এর একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ও লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে সে তার বাবার সঙ্গে রেল স্টেশনের পাশে ছোট একটি দোকানে ফল বিক্রি করত। ফল বিক্রির আড়ালে সে সোস্যাল মিডিয়ায় ‘অনলাইন জব বিডি’, ‘পার্ট টাইম জবস ইন ঢাকা’ ও ‘পার্ট টাইম জবস ইন বাংলাদেশ’ নামক গ্রুপে সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। পরবর্তীতে ওইসব গ্রুপে দেশী-বিদেশী কোম্পানীতে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে চাকরি দেয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করত। প্রতারণার কাজে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ভুয়া আইডি ব্যবহার করত।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আরও জানায় যে, চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল ধাপগুলো প্রাথমিকভাবে অতিক্রম করতে হয় সে সকল ধাপগুলো সে নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে ভুয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করত।  এক্ষেত্রে সে বিভিন্ন মেয়ের নাম ধারণ করে ভিকটিমদের কাছে প্রথমে নিজেকে দেশী/বিদেশী বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত বলে পরিচয় দিত ও সে নিজেও একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই চাকরিতে যোগদান করেছে বলে জানাত। পরবর্তীতে সে নিজেই ওই কোম্পানির অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিত এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিত। পুনরায় ঐ অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নিজেই মেডিকেল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চুয়াল মেডিকেল করানোর নামে ভিডিও করত। যেহেতু করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল করা সহজতর ছিল না সেক্ষেত্রে গ্রেপ্তারকৃত এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের প্রতারণা করত। গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App