×

খেলা

নারিন-মঈনের ঝড়ে ফাইনালে কুমিল্লা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৫২ পিএম

নারিন-মঈনের ঝড়ে ফাইনালে কুমিল্লা

কুমিল্লার হয়ে বুধবার ২০ রান দিয়ে তিনটি উইকেট তুলে নেন ইংলিশ অলাউন্ডার মঈন আলী

বিপিএলে বুধবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দ্ইু বিদেশির ব্যাটিং-বোলিং ঝলকে ৪৩ বল হাতে রেখেই সহজে জয় নিশ্চিত করেছে ইমরুল লিটনরা। চট্টগ্রামের দেয়া ১৪৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা ১২.৫ ওভারেই নিশ্চিত করে নিয়েছে তারা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে সাকিবের বরিশালের বিপক্ষে হেরেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছিল বিধায় চট্টগ্রামের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের সুযোগ পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এই ম্যাচে চট্টগ্রামকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখলো ইমরুল-লিটনরা। ফাইনালে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে বুধবার মিরপুরে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেনে আফিফ হোসেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে মোস্তাফিজদের তৃতীয় ওভার পর্যন্ত দাপটের সাথেই খেলেছিল উইল জ্যাকস ও জাকির হোসেন। চতুর্থ ওভারে শহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম শিবিরে প্রথম আঘাত হানে। ৯ বলে ১৬ রান করা উইল জ্যাকসকে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফিরিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে প্রতি ওভারে উইকেটের পতন হতে থাকে। শহিদুলের পর তানভির ও ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলীর ঘূর্নির তোপে ৫০ রানেই পঞ্চম উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে তানভিরের বলে ব্যক্তিগত মাত্র ২ রানে এলডব্লিউর ফাদে পড়েন ওয়াল্টন। পরের ওভারেই ইংলিশ অলরাউন্ডারের জোড়া আঘাত। ষষ্ঠ ওভারের আরেক ওপেনার জাকির হোসেনও মঈন আলীর দ্বিতীয় বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ উঠিয়ে দেয় জাকির হোসেন। পরের বলেই স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন শামীম পাটোয়ারি।

দলীয় ৪৩ রানেই পরপর দুই উইকেটের পতন হলে ছন্দভঙ্গ হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ষষ্ঠ ওভারে দুটি উইকেট হারানোর পর অষ্ঠম ওভারে মঈন আলীর ঘূর্নিতে অধিনায়ক আফিফ হোসেনের ব্যাটের কানায় লেগে বল উপরে উঠে যায়। দূর থেকে দৌড় দিয়ে অসাধারন এক ক্যাচ লুফে নেন তানভির ইসলাম। এরপর দলের গুরুভার তুলে নেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলী ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দলীয় ৫০ রানে পঞ্চম উইকেটের পতনের পর ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় ১১১ রানে। আবু হায়দার রনির ওভারে চওড়া হতে গিয়ে বলকে খাড়া উপরে তুলে দিয়েছিলেন আকবর আলী। আবু হায়দার রনি নিজেই নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে সাজঘরে ফেরান আকবর আলীকে। আউট হওয়ার আগে ২ ছয় ও ২ চারের সাহায্যে ২০ বলে ৩৩ রানের অসাধারন ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন তিনি। আকবারী আলী আউট হওয়ার পরের ওভারেই রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন বিনি হাওয়েল। এরপর অষ্টম উইকেটে দলের ভার গ্রহনকারী মেহেদি হাসান মিরাজ শহিদুল ইসলামের বলে মঈন আলীর হতে ক্যাচ উঠিয়ে দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন। আউট হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। একই ওভারের শেষ বলে আউট হন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।

চট্টগ্রামের এ পেস অলরাউন্ডার মাত্র ৯ বলে করেছেন ১৫ রান। শেষ উইকেটে ব্যক্তিগত শূন্য রানে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে এলবিডব্লিউর কবলে পড়ে আউট হয়েছেন নাসুম আহমেদ। শেষ পর্যন্ত ১৯.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান তুলতে পেরেছে সাগরিকার পাড়ের দলটি। চট্টগ্রামের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন চট্টগ্রামের সাবেক অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। এছাড়া কুমিল্লার হয়ে ওভারে ২০ রান দিয়ে তিনটি উইকেটে পেয়েছেন ইংলিশ অলাউন্ডার মঈন আলী। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ওভারে ৩৩ রান দিয়ে শহিদুল ইসলামও নিয়েছেন তিন উইকেট। এছাড়া অন্যদের মাঝে ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছে তানভির ইসলাম।

একটি করে উইকেট পেয়েছে আবু হায়দার রনি ও কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানও। কিন্তু আবু হায়দার রনি যেখানে ২ ওভারে রান দিয়েছে ২১ মোস্তাফিজুর সেখানে মাত্র ৪.১০ ইকোনোমি রেটে ৩.১ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ১৩। ১৪৯ রানে লক্ষ্যমাত্রার টার্গেটে শরিফুলের প্রথম বলেই আউট হয় লিটন দাস। কিন্তু প্রথম বলে উইকেটের পতনকে বিপদে পড়তে দেয়নি ক্যারিবিয় অলরাউন্ডার সুনীল নারিন। প্রথম ওভারের বাকি পাঁচ বলে ২০ রান তুলে পরের প্রতি ওভারেই চার-ছয়ের ফুলকি ছড়িয়েছেন নারিন। বিপিএলের এ আসরের দ্রুততম অর্ধশতর রেকর্ডও গড়ে নিয়েছে সুনীল নারিন। ছয় ছক্কা ও পাঁচ চারের সাহায্যে ১৬ বলে করেছেন ৫৭ রান। এরপর ইনিংসের নবম ওভারে দলীয় ৯৫ রানে বিনি হাওয়েলের বলে ২৪ বলে ২২ রান করে আউট হয়েছেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।

শেষদিকে দুই বিদেশি ফাফ ডু প্লেসিস ও মঈন আলীর ব্যাটিং ঝড়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা। ফাফ ডু প্লেসিস ও মঈন আলী দুজনই করেছেন ৩০ রান। তবে মঈন আলীর ব্যাট থেকে এ রান এসেছে মাত্র ১৩ বলে এবং ফাফ ডু প্লেসিস করেছ ২৩ বলে। চট্টগ্রামের হয়ে একটি করে উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও বিনি হাওয়েল। চট্টগ্রামের বিদেশিরা যতটুকু নিষ্প্রভ ছিলেন তারচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন কুমিল্লা বিদেশিরা। চট্টগ্রামের বিদেশিদের মধ্যে উইল জ্যাকস করেছেন ১৬রান, ওয়াল্টন করেছে ২ ও বিনি হাওয়েল করেছেন মাত্র ৩ রান। উইকেটের দিক থেকে বিনি হাওয়েল একটিমাত্র উইকেট নিতে পেরেছেন। তাদের বিপরীতে কুমিল্লার বিদেশিরাই গতকাল ম্যাচটিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বোলিংয়ে মঈন আলীর তিন উইকেট পরবর্তীতে ব্যাটিংয়ে ১৩ বলে ৩০ রান, ফাফ ডু প্লেসিসের ৩০রান এবং নারিনের কোনো উইকেট না থাকলেও তার ১৬ বলে ৫৭ রানের ইনিংস কুমিল্লার ফাইনাল নিশ্চিত করতে সহজ করে দিয়েছে।

গ্রুপ পর্বের দুই দেখাতেই কুমিল্লার বিপক্ষে হেরেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার ১৮৩ রানের বিপক্ষে মাত্র ১৩১ রান তুলতে পেরেছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩রা ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ১৪৯ রানের টার্গেটে মাত্র ১৩৮ রান তুলতে পেরেছিল মেহেদি মিরাজরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App