ছেলের খুনির বিচারের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মায়ের মানববন্ধন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:১৮ পিএম
বুধবার ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে আহাজারিতে মা রুপিয়া বেগম। ছবি: ভোরের কাগজ
সুনামগঞ্জ কালেক্টরেট প্রাঙ্গনের শহীদ মিনারের পাশে ‘রাব্বি হত্যার বিচার চাই, মানববন্ধন’ লেখা একটি ব্যানার নিয়ে বসেছিলেন মা রুপিয়া বেগম (৪৫)। এর আগেও তিনি এভাবে কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে বসেছিলেন। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে করা তার আহাজারি আদালত প্রাঙ্গণে আসা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। দুই হাত তুলে হাউমাউ করে রুপিয়া বেগম বলছিলেন। আমি এর আগেও বসেছি, একবার আমার পরিবার নিয়ে, আরেকবার আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে। এবার আমি একাই বসেছি, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আজ দুপুরে তিনি এই মানববন্ধন করেন।
রুপিয়া বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের পূর্ব নোয়ারাই গ্রামে। তার একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (২২) হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বুধবার একাই এই মানববন্ধন করেন তিনি।
রুপিয়া বেগম জানান, ছেলে রাব্বির বয়স যখন ২, তখন স্বামী আলমগীর হোসেন মারা যান। এরপর তিনিই রাব্বিকে খেয়ে না খেয়ে বড় করেন। এক পর্যায়ে ছেলে একটি দোকানে কাজ নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই বিকেলে ছাতক পৌর শহরের সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকার বাজারের একটি দোকানে বসে ছিলেন রাব্বি। এ সময় কিছু লোক সেখানে গিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাব্বি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ঘটনার পর ২৬ জুলাই রুপিয়া বেগম বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। আসামিদের কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বর্তমানে আসামিদের মধ্যে শুধু লিয়াকত আলী জেলে আছেন। এছাড়া একজন আসামি আছেন পলাতক। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ১৭ জন আসামির মধ্যে ১২জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। অভিযোগ থেকে বাদপড়া আসামিদের আবার যুক্ত করতে রুপিয়া বেগমের আইনজীবী আদালতে আবেদন করেছেন।
রুপিয়া বেগম জানান, তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। একমাত্র ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধাবিয়ষকমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছেন। অনেকের সঙ্গে গিয়ে কথা বলেছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
রুপিয়া বেগমের আইনজীবী মল্লিক মো. মইন উদ্দিন সুহেল বলেন, মামলার আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা অভিযোগপত্র থেকে বাদপড়াদের আবার যুক্ত করতে আদালতে আবেদন করেছি। এই আবেদন শুনানির পর্যায়ে আছে।