×

চিত্র বিচিত্র

আইসক্রিমের কাঠির আবিষ্কারক কে জানেন!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৫৫ এএম

আইসক্রিমের কাঠির আবিষ্কারক কে জানেন!

প্রতীকী ছবি

আইসক্রিমের কাঠির আবিষ্কারক কে জানেন!

অরেঞ্জ ফ্লেভারের কাঠি আইসক্রিম

আইসক্রিমের কাঠির আবিষ্কারক কে জানেন!

চকোলেট আইসক্রিম

লাল-নীল-হলুদ রঙের সেই কাঠি আইসক্রিম খাওয়ার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে? ছুটির ঘণ্টা বাজলেই ছুটে যেতেন আইসক্রিমওয়ালার কাছে। হাতখরচ বাঁচিয়ে জমানো পয়সা দিয়ে কিনে ফেলতেন রঙিন কাঠি আইসক্রিম। কখনও বা কাঠফাঁটা রোদে কাঠি আইসক্রিম কিনে দেয়ার জন্য মা-বাবার কাছে বায়না জুড়তেন। কী করে তৈরি হয়েছিল এই আইসক্রিম?

ভেবেচিন্তে তৈরি করা নয়। হঠাৎ করেই কাঠি আইসক্রিমের জন্ম হয়েছিলো। তাও আবার একজন ১১ বছর বয়সীর মাধ্যমে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

দুপুরবেলা বাড়ির খোলা বারান্দায় বসে শরবতে চুমুক দিতে দিতে কখন যেন নিজের ঘরে ঢুকে পড়েছিলো ওই বালক। বারান্দায় রয়ে গিয়েছিল সেই শরবতের গ্লাস। তাতে কিছুটা চিনি মেশানো সোডা-শরবত আর একটি কাঠি পড়েছিল। ওই কাঠি দিয়েই মাঝেমধ্যে শরবত নাড়িয়ে নাড়িয়ে চুমুক দিচ্ছিল সে। গ্লাসের কথা বেমালুম ভুলে যাওয়ায় সারা রাত ঠাণ্ডায় সেটি ওই বারান্দায় পড়েছিল। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বালকটির নজরে পড়ে, গ্লাসের শরবত জমে বরফ! তার মাঝে কাঠিটি খাঁড়া হয়ে রয়েছে। কাঠিতে সাঁটা সেই বরফগোলা চেখে মনে হয়েছিল- দারুণ স্বাদু তো!

প্রায় ১১৭ বছর আগে এভাবেই কাঠি আইসক্রিম বানিয়ে ফেলেছিলেন আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকায় বাসিন্দা ফ্রান্সিস উইলিয়াম অ্যাপারসন। পরিচিতরা অনেকেই যাকে ডাকতেন ফ্র্যাঙ্ক নামে।

কাঠিতে সাঁটা ওই বরফের গোলা বানানোর কথা বন্ধুবান্ধবদের কাছে বলেছিলেন অ্যাপারসন। তারাও চেখে দেখেছিলো এটি। চেখে প্রশংসা করতে ভোলেনি তারা। এরপর নিজের বাড়ির আশেপাশে কাঠি আইসক্রিম বিক্রি শুরু করেন।

কাঠিটিকে হাতলের মতো ধরে তাতে সাঁটা বরফ চেটে খাওয়ার কথাও অ্যাপারসন ক্রেতাদের জানান। ওই বরফগোলার একটি গালভরা নামও রাখেন- অ্যাপসিকল। নিজের নামের সঙ্গে ‘আইসিকল’ শব্দটি দিয়ে তৈরি এই নাম।

বাড়ির আশেপাশে কাঠি আইসক্রিম বিক্রি করেই দুই পয়সা রোজগার করছিলেন অ্যাপারসন। ওই ‘আবিষ্কারে’র ১৮ বছর পর নিজের এলাকার বাইরে তা বিক্রির কথা চিন্তাভাবনা শুরু করেন। সেটি ১৯২৩ সাল। জমাট বাঁধা বরফের গোলা বিক্রির জন্য বেছে নেন ক্যালিফোর্নিয়ারই নেপচুন বিচ নামে একটি বিনোদনমূলক পার্ক এলাকা। ওই পার্কে কচিকাঁচাদের কাছে অ্যাপসিকল তখন সুপারহিট!

অ্যাপসিকলের জনপ্রিয়তা দেখে পেটেন্টের আবেদন করেন এপারসন। সেটি ১৯২৪ সাল। যদিও তত দিনে অ্যাপসিকলের নামবদল হয়েছে। ২৯ বছরের অ্যাপারসনের ছানাপোনারা তার নাম রেখেছিল পপ’স সিকল বা পপসিকল। সে নামেই কাঠি আইসক্রিমের পেটেন্ট করিয়েছিলেন অ্যাপারসন।

[caption id="attachment_334895" align="aligncenter" width="700"] অরেঞ্জ ফ্লেভারের কাঠি আইসক্রিম[/caption]

পপসিকলের বিজ্ঞাপনে অ্যাপারসন লিখেছিলেন, হাত দিতে হয় না। কাঁটা-চামচ বা প্লেটের দরকার নেই। দারুণ দেখতে এই জমাটবাঁধা মিঠাইটি সহজেই মুখে পোরা যায়। বিজ্ঞাপনে পপসিকলের কাঠ নিয়েও গালভরা মন্তব্য করেছিলেন অ্যাপারসন। বলেছিলেন, বার্চ বা পপলার কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে ওই কাঠি।

কাঠি আইসক্রিমের জন্মগাঁথা যে প্রামাণ্য তা নয়। তবে অ্যাপারসনকেই এর জনক বলে মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। যদিও এই রূপকথায় শেষটা সুখের হয়নি। আর্থিক দুর্দশায় পড়ে ১৯২০ সালে জো লো কোম্পানিকে পপসিকলের সব সত্ত্ব বিক্রি করে দেন তিনি। সেই সংস্থাই অ্যাপারসনের আবিষ্কারকে আমেরিকাজুড়ে জনপ্রিয় করার কারিগর।

গোড়ায় সাত রঙের পপসিকল বিক্রি করা হতো। ১৯২৯-১৯৩৯ সালে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মহামন্দার সময় একটি প্যাকেটে জোড়া কাঠিযুক্ত দুটি পপসিকল বিক্রি শুরু হয়েছিল। তার দাম ছিল মাত্র পাঁচ সেন্ট। যাতে একই পরিবারের দুটি বাচ্চার জন্য নামমাত্র মূল্যে একটি পপসিকলের প্যাকেট কিনে দিতে পারেন মা-বাবা।

পেপসিকলের প্রতিদ্বন্দ্বীও আমেরিকার বাজারে এসেছিলো। চকোলেটে সাঁটা কাঠি আইসক্রিম নিয়ে বাজার ধরতে শুরু করে দিয়েছিল গুড হিউমার নামে একটি সংস্থা। তাতে কপিরাইট আইনভঙ্গের মামলা দায়ের করে জো লো কোম্পানি।

[caption id="attachment_334896" align="aligncenter" width="700"] চকোলেট আইসক্রিম[/caption]

আইসক্রিম-যুদ্ধে আদালতের রায় ছিল, জমাট বাঁধা বরফের কাঠি আইসক্রিম বেচবে জো লো। এবং চকোলেটে সাঁটা কাঠি আইসক্রিম বিক্রি করতে পারবে গুড হিউমার। এরপরও থামেনি ওই দুই সংস্থার আইনি যুদ্ধ। মিল্ক পপসিকল বাজারে আসার পর শরবত ও আইসক্রিমের সংজ্ঞা নিয়ে মামলা চলতে থাকে দুই সংস্থার।

১৯৮৯ সালে এই আইসক্রিম-যুদ্ধের অবসান হয়। পপসিকল ব্র্যান্ডের মালিকানা কিনে নেয় ইউনিলিভার। পরে তারা গুড হিউমারের দখলও নেয়। দুই পক্ষই এক ছাতার তলায় চলে আসে।

ততদিনে পপসিকলের জনক প্রয়াত। ১৯৮৩ সালে অ্যাপারসনের দেহ সমাধিস্থ করা হয় ওকল্যান্ডের মাইন্টেন ভিউ কবরস্থানে। যদিও ততদিনে কাঠি আইসক্রিমের সঙ্গে নিজেকে স্থায়ীভাবে জুড়ে ফেলেছেন অ্যাপারসন। ইদানীং প্রতি বছর বিক্রি হয় অন্তত ২০০ কোটি পপসিকল!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App