×

মুক্তচিন্তা

শিশুদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ ইন্টারনেট

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ এএম

শিশুদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ ইন্টারনেট

ইন্টারনেট কথাটার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী ইন্টারনেটের প্রচলন বেশি। ২০০০ সাল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০০ গুণ বেড়েছে। যে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করা, জ্ঞান অর্জন করা এমনকি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের তথ্য সংগ্রহ করা যায় এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা সবাই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে আমাদের সব কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। স্কুল-কলেজের ক্লাস ও পড়াশোনা ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে থাকে। শিশুরাও এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ক্লাস ও পড়াশোনা করছে। ইন্টারনেটের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। তাই শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেটের সুবিধা দেয়া আমাদের সবার কর্তব্য। ইন্টারনেটের অধিক ব্যবহার আমাদের সময় নষ্ট করে। আজকাল ইন্টারনেটে অনেক ধরনের গেম পাওয়া যায়, ফলে শিশুরা এসবের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মতো গেমগুলোয় শিশুরা অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছে। এতে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ আসছে না। ইউনিসেফের জরিপে বলা হয়েছে, ছেলে শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রচলন বেশি, যা ৬৩ শতাংশ। এমনকি এই জরিপে আরো একটি বার্তা দেয়া হয়েছে তা হলো, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩২ ভাগ শিশু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে; যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতারও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। সবসময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ জ্বলে, মাথাব্যথা করে, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। বর্তমানে আমরা প্রায়ই লক্ষ করে থাকি যে, শিশুদের চোখে চশমার ব্যবহার বেশি। আবার শিশুরা মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে যায়। সবসময় ইন্টারনেটে গেম খেলা, ভিডিও দেখা, সোশ্যাল মিডিয়া চালানোতে এতটা নির্ভর হয়ে যায় যে, তারা মাঠে খেলতে যায় না। তাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। আপনজনের সঙ্গে সময় কম কাটায়। সবসময় ঘরে বন্দি জীবনযাপন করে, ফলে তাদের মেজাজ রুক্ষ হয়ে যায়। বর্তমানে শিশুরা সাইবার ক্রাইমেরও শিকার হয়। অনলাইনে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে, ছবি আদান-প্রদান করে অনেক সময় ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হয়। শিশুরা ইন্টারনেট সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় এমন ভুল করে। এমনকি অনেক সময় খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশায় নেশাদ্রব্য ও অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। আবার কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এতে অনেক শিশু মানসিক স্বাস্থ্যের হুমকির মুখে পড়ে। ইন্টারনেট মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিশুরা অসামাজিক হয়ে পড়ছে। তারা বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। সমাজের সঙ্গে মিশতে চায় না। ইন্টারনেটের অসামাজিক সংস্কৃতির সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়ছে। আমাদের সবার উচিত শিশুদের বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা করানো। আবার অতিরিক্ত ইন্টারনেটের ফলে শিশুদের খাদ্যাভাসে এবং ঘুমে পরিবর্তন আসে। শিশুরা যেন অতিরিক্ত সময় ইন্টারনেটে ব্যয় না করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে শিশুরা কীভাবে ইন্টারনেট চালাচ্ছে; এমনকি শিশুদের সময় দিতে হবে। তাদের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। শিশুরা ইন্টারনেটে কাদের সঙ্গে মিশছে, কাদের সঙ্গে কথা বলছে সেদিকে নজর দিতে হবে। ভালো-মন্দ জ্ঞান বুঝিয়ে দিতে হবে। আমাদের সরকারের উচিত ইন্টারনেটের ইতিবাচক দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরা, কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা উপকৃত হতে পারি। তাহলেই আমরা শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারব।

জেবা ফারিহা : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App