×

জাতীয়

ওয়াসার পানির দাম নিয়ে বিতর্ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৮ এএম

ওয়াসার পানির দাম নিয়ে বিতর্ক

ফাইল ছবি

২০ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব

দাম সহনীয় রাখতে চেষ্টা করছি : তাকসিম

অমানবিক বলছে ক্যাব ও বিএনপি

জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আলোচনার মধ্যেই নতুন করে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে দেখা দিয়েছে নানা বিতর্ক। গত সোমবার অনুষ্ঠিত সংস্থাটির বোর্ড সভায় পানির দাম ২০ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। এ প্রস্তাবকে যৌক্তিক বললেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এই মুহূর্তে কিছুটা আপত্তি জানিয়েছেন বোর্ডের সদস্যদের কেউ কেউ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জনমনেও দেখা দেয় উদ্বেগ। তারা পানির দাম না বাড়াতে অনুরোধ করেন সংস্থাটিকে। বিরোধী দল বিএনপিও এই মুহূর্তে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। তবে পানির দাম বাড়ানোর পক্ষে বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নানা যুক্তি তুলে ধরেন তাকসিম এ খান।

জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসা গত দুই বছরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছে দুইবার। আর গত ১৩ বছরে দাম বেড়েছে ১৪ বার। বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, আবাসিকে এ দর ২১ টাকা ২৫ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম বর্তমানে ৪২ টাকা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম দাঁড়াবে ৫৮ দশমিক ৮ টাকা। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন পেলে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন দর কার্যকর করবে ওয়াসা।

বোর্ড সভা শেষে ওই দিন ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ উৎপাদন খরচের সঙ্গে পানির দাম সমন্বয় করতে চায়। অবশ্য বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

মঙ্গলবার ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা ওয়াসার একজন বোর্ড সদস্যের সঙ্গে। তিনি জানান, সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বোর্ড সভায় তুলেছিলেন। এর পক্ষে তিনি যথেষ্ট যুক্তি তুলে ধরেছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরাও মনে করি, পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি যৌক্তিক। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, বেকার হয়েছেন। আয়-রোজগার কমেছে। সে কারণে আমরা এই মুহূর্তে পানির দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দেইনি। তবে এই প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর সেটি নির্ভর করছে।

এদিকে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (ক্যাব) মনে করে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আরেক দফা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে অমানবিক। গতকাল বিএনপিও এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে অমানবিক বলেছেন। তিনি এ সিদ্ধান্ত বাতিলেরও দাবি জানান।

এসব বিষয়ে যখন বিতর্ক চলছে, তখন পানির দাম বাড়ানোর কারণ জানাতে বুধবার এক অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। দুপুর সাড়ে ১২টায় ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। পানির দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, পানির উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে অনেক ব্যবধান। বর্তমানে প্রতি ১ হাজার লিটার পানিতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১০ টাকা। ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বর্তমান মূল্যের চেয়ে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়াতে চায়। এটি আসলে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজারমূল্যের সমন্বয়।

তিনি বলেন, সরকার পানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। সেটা কতটা কমানো যায়, সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পানির দাম প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়, ভবিষ্যতেও হবে। ওয়াসা বিদেশি ঋণে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এসব ঋণের গ্যারান্টার বাংলাদেশ সরকার। এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধে ওয়াসাকে এখন বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের উচ্চ মহল থেকে পানির দামের ভর্তুকির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানোর নির্দেশনা রয়েছে। পানির দাম সহনীয় রাখতে আমরা সব চেষ্টাই করছি। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে চলতে পারে না। ভিক্ষা করে কোনো সংস্থা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। তাই ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে পানির দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App