মানুষের জয় হবে নিশ্চয়ই

আগের সংবাদ

এমন করুণ মৃত্যু আর কত দেখব?

পরের সংবাদ

সুন্দরবন ক্ষয়ে যাচ্ছে, আমরাই দায়ী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২ , ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২ , ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি প্রশস্ত বনভূমি, যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি প্রাণ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ আমাদের এই সুন্দরবন। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরো ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। যদিও ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আড়ালে হারিয়ে যায় এ দিবসটি। এই দিবসটিকে যতটা উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হয়। সুন্দরবন দিবসকে ততটাই অবহেলা করা হয়। আসুন না আমরা ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসি সুন্দরবনকে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। সুন্দরবনে রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। প্রতিনিয়ত বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশের পরিবেশ। অথচ সুন্দরবনের গুরুত্ব অনুধাবণ করতে আমরা ব্যর্থ। আমরা আমাদের সম্পদগুলো এজন্যই আমাদের সুন্দরবন দিবস নিয়ে এত উদাসীনতা, এত অবহেলা।
নামমাত্র সুন্দরবন দিবস বা বইয়ের পাতায় লিখা থাকলেই হবে না। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচাতে, সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো তৎপর হতে হবে। চোরাকারবারি, পশুপাখি শিকারি, ভূমিখেকোদের থেকে সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভার মধ্যে এটা সীমাবদ্ধ রাখলে কখনো সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাবে না। এজন্য সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি এর তাৎপর্য প্রান্তিক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।
বনের প্রতি অতিনির্ভরতা এবং মানুষের নির্বিচার আচরণে দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে এর পরিবেশ ও প্রতিবেশ। গত ১৯ বছরে ৩১ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। পুড়ে গেছে প্রায় ১০০ একর বনভূমি। এসব অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে একরের পর একর বনভূমির গাছপালা, লতাগুল্ম। মারা গেছে বিভিন্ন প্রজাতির জীব-জন্তু। আবাসস্থল হারিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আগুন একা একা লাগতে পারে না। প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই আগুন লাগানো হয়। বনের মাঝখানে জলাশয়ে মিঠা পানির মাছ ধরতেই এই আগুন লাগায় সেখানকার কিছু মানুষ। এতে ক্ষতি হয়ে যায় আশপাশের এলাকারও। সবাই সব কিছু জানে, কিন্তু উদ্যোগ নেয় না। উদ্যোগ আগে থেকে নিলে এই আগুন লাগানো বন্ধ করা সম্ভব।’
জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে আমাদের সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাঁচাতে প্রয়োজন এর আশপাশে শিল্পকারখানা বন্ধ রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সব শ্রেণির মানুষকে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের প্রিয় এই সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পারব। মনে রাখতে হবে সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচাবে। আমাদের দেশ অনেক ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পায় শুধু এই সুন্দরবন থাকায়। নয়তো এসব ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ত বাংলাদেশের বুকে। তাই আসুন, সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমরা সবাই সজাগ হই। আসছে ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনের জন্য উৎসর্গ করে আমরা দেশ এবং দেশের পরিবেশকে বাঁচাতে সাহায্য করি।
আজহার মাহমুদ
– খুলশী, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়