×

আন্তর্জাতিক

হিজাব বিতর্ক: কর্নাটকের সীমানা পেরিয়ে এখন মধ্যপ্রদেশেও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০৩ পিএম

হিজাব বিতর্ক: কর্নাটকের সীমানা পেরিয়ে এখন মধ্যপ্রদেশেও

ভারতের কর্ণাটকের মান্ডিয়া কলেজে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থী মুসকান

ভারতের কর্নাটকে হিজাব পরা নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে তিন দিনের জন্য রাজ্যের স্কুল, কলেজ বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে।

কর্নাটকের সীমানা পার করে হিজাব বিতর্ক এবার ঢুকে পড়ল বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশেও। স্কুল-কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করতে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার অভিন্ন পোশাক বিধি এবং শৃঙ্খলার দোহাই দিয়েছেন। এদিকে, পুদুচেরিতেও শুরু হয়েছে হিজাব নিয়ে বিতর্ক। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

স্কুলে কি হিজাব পরে আসা যায়? এ নিয়ে বিতর্কে মেতে উঠেছে ভারতের একটি রাজনৈতিক মহল। বিতর্কের সূত্রপাত, গত মাসে কর্নাটকের উদুপির একটি কলেজে হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের ক্লাস করতে না দেয়ার অভিযোগ নিয়ে। এ বিষয়ে হিজাব বাতিলের দাবিতে পথে নেমে আসে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। এ বিষয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয় দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশেটিতে। পরিস্থিতি এমন হয় যে তিনদিন রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিতে হয় কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইকে। কর্নাটক হাইকোর্টেও এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে আজ বুধবার। এরই মধ্যে হিজাব বিতর্ক প্রবেশ করলো আরেকটি বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশে।

স্কুল-কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে সম্মত হয়েছেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী পারমার। নিজের রাজ্যেও এ নিয়ম চালুর ইঙ্গিতও দেন তিনি। পারমার বলেন, হিজাব স্কুল ইউনিফর্মের অঙ্গ নয়। তাই স্কুলে এটা পরা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। ঐতিহ্য মানুন বাড়িতে, স্কুলে নয়। এটা শৃঙ্খলার প্রশ্ন। কড়া অভিন্ন পোশাক বিধি আনছি আমরা।

বিরোধী দল কংগ্রেসও এ বিষয়ে বিজেপির সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস মুখপাত্র আব্বাস হাফিজের প্রশ্ন, মন্ত্রী কি জানাবেন, সরকারের অগ্রাধিকার কী? পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করে ভালো শিক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা, নাকি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিষ স্কুল-কলেজে ছড়িয়ে দেয়া। শিখদের পাগড়ি ও মুসলিম নারীদের হিজাব পরা তো শতকের পর শতক ধরে চলে আসছে। আজ হঠাৎ আপত্তির পেছনে উদ্দেশ্য কী?

এ সংক্রান্ত অভিযোগ পুদুচেরিতেও উঠেছে। সেখানে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিজাব পরিহিতদের ক্লাস করতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুদুচেরির শিক্ষা দপ্তর বিষয়টি খোঁজ নিয়েছে। বাম ছাত্র সংগঠন পুদুচেরির এক এসএফআই নেতা বলেন, মেয়েটি গত তিন বছর ধরে রোজ এভাবেই ক্লাসে আসছে। এখন হঠাৎ আপত্তির কারণ কী? তার দাবি, আরও কয়েকটি স্কুল থেকে একই ধরনের অভিযোগ তারা পেয়েছেন। এমনকি কিছু স্কুলে আরএসএসের ধর্মীয় ‘ড্রিলে’ বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রীদের অংশ নিতে বলা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তার দাবি, এসব কাজের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিভাজন উস্কে দিয়ে শিক্ষায় ‘গেরুয়াকরণ’ চাইছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল এবং যা বললেন প্রতিবাদী মুসলিম ছাত্রী

এদিকে কর্ণাটকের মান্ডিয়া কলেজে গেরুয়া ওড়না পরা একদল যুবকের সামনে একাই প্রতিবাদ করেন মুসলিম ছাত্রী মুসকান। তার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম না। যখন কলেজে যাই, তারা আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না শুধু বোরকা পরার কারণে। তারা ‘জয় শ্রী রাম’ বলে চিৎকার করছিলেন, তাই আমিও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করছিলাম। অধ্যক্ষ ও প্রভাষকরা আমাকে সমর্থন করেছিলেন এবং আমাকে রক্ষা করেছিলেন।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুটি পার্ক করে মুসকান কলেজের দিকে যাচ্ছেন। এসময় তার দিকে এগিয়ে আসে গেরুয়া ওড়না পরা একদল যুবক। তারা ‘জয় শ্রী রাম’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। কিন্তু যুবকদের শ্লোগান ও চিৎকারের মুখে রুখে দাঁড়ান মুসকান। ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বেশ কয়েকবার শ্লোগানও দেন তিনি। এসময় কলেজের কর্মকর্তারা মুসকানকে নিরাপত্তা দিয়ে কলেজে প্রবেশ করিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় কর্নাটকের অন্য কলেজগুলোতে হিজাব পরা শিক্ষার্থী ও গেরুয়া ওড়না পরা যুবকদের মধ্যে বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App