×

অপরাধ

পাকিস্তান থেকে আসা জাল রুপির পাচার ঠেকাতে হার্ডলাইনে পুলিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৩:৩৭ পিএম

পাকিস্তান থেকে আসা জাল রুপির পাচার ঠেকাতে হার্ডলাইনে পুলিশ

বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। ছবি: ভোরের কাগজ

পাকিস্তান থেকে আসা জাল রুপির পাচার ঠেকাতে হার্ডলাইনে পুলিশ
পাকিস্তান থেকে আসা জাল রুপির পাচার ঠেকাতে হার্ডলাইনে পুলিশ

বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে ভারতীয় রুপিসহ অন্য কোনো বিদেশি জাল নোট পাচার করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

জালরুপি পাচার চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডেমরা ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে ভারতীয় জাল নোট তৈরির আন্তর্জাতিক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আমানুল্লাহ ভূঁইয়া (৫২), কাজল রেখা (৩৭), ইয়াসিন আরাফাত কেরামত (৩৩) ও নোমানুর রহমান খান (৩১)। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার আমান উল্লাহ ভূঁইয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর-এর সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সরকারি গাড়ি চালক। গ্রেপ্তারকৃত কাজলরেখা সরকারি গাড়ি চালক আমান উল্লাহ ভূঁইয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ ভারতীয় রুপির জাল সুপার নোট এবং মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট (৫০০/১০০০) কৌশলে সংগ্রহ করে বিভিন্ন পণ্যের ভিতর, ব্যক্তি বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা দিয়ে পাচার করে আসছিল।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে সাইদুর রহমান, ইম্পোর্টার তালেব ও ফাতেমা আক্তার নামে তিনজনকে ৭ কোটি ৩৫ লাখ জাল ভারতীয় রুপিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে একটি মামলা হয় খিলক্ষেত থানায়। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি। এই মামলায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের অন্যতম সদস্য নোমানুর রহমান খানের সন্ধান পায় ডিবি। এই মামলার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সোমবার ডিবি গুলশান বিভাগের একাধিক টিম পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড এলাকা থেকে নোমানুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার নোমান জানায়, পাকিস্তানে অবস্থানকারী তার ভাই মো. ফজলুর রহমান ওরফে ফরিদ বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ও ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট (৫০০/১০০০) বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রেরণ করে আসছে।

[caption id="attachment_334067" align="alignnone" width="1280"] উদ্ধারকৃত জাল রুপির সুপার নোট ও মোবাইল ফোন। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

গ্রেপ্তার নোমানের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ২১ নং মনেশ্বর রোড থেকে ইয়াসির আরাফাত ওরফে কেরামত এবং আমান উল্লাহ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে ৬ লাখ করে মোট ১২ লাখ জাল রুপি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারদের তথ্যের ভিত্তিতে একই দিনে কাজল রেখাকে হাজারীবাগ এলাকা থেকে ৩ লাখ জাল রুপিসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট (৫০০/১০০০) কৌশলে সংগ্রহ করে বিভিন্ন পণ্যের ভেতর, ব্যক্তি বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা দিয়ে পাচার করে আসছিল।

ডিবি প্রধান বলেন, জাল রুপি পাচারকারী এ চক্রের কেন্দ্রে আছে মূলত দুইটি পরিবার। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন একটি পরিবার। এই পরিবারের অধিকাংশ সদস্য একসময় পাকিস্তানে অবস্থান করত। বর্তমানে এই পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফজলুর রহমান পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থান করছে। সে পাকিস্তান কেন্দ্রিক মাফিয়াদের কাছ থেকে উন্নত মানের জাল রুপি সংগ্রহ করে কখনো শুটকি মাছ, কখনো মোজাইক পাথর ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর বস্তার মধ্যে করে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে পাঠায়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করত তার ভাই সাইদুর রহমান রহমান, নোমানুর রহমান এবং ভগ্নিপতি শফিকুর রহমান। ইম্পোর্টারদের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মাধ্যমে আনা হতো। পরবর্তীতে সেই জাল রুপি খালাস করে গোডাউনে মজুদ করা, বিভিন্ন মাধ্যমে তা ডিলারদের মধ্যে ডিসট্রিবিউশন করা এবং বিক্রয়লব্ধ জাল রুপি বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে হুন্ডিতে করে পাকিস্তানে পাচার করতো।

তিনি বলেন, যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক চক্র, সেহেতু এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিকের নাম পেয়েছি। এই চক্রের দেশি-বিদেশি সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা আমরা করছি। দেশি কিংবা বিদেশি জাল মুদ্রার চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি। এছাড়া ভারতীয় জাল রুপিসহ অন্য কোনো বিদেশি মুদ্রা বাংলাদেশের রোড ব্যবহৃত হয়ে যেন পাচার না হয় সেই জন্য আমরা সচেষ্ট আছি।

জব্দ হওয়া জাল নোটগুলোকে কেন 'সুপার' জালনোট বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই নোটগুলো মূলত ভারত থেকে আসেনি। নোটগুলো এসেছে পাকিস্তান থেকে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি এগুলো জাল নোট। এগুলো এতটাই সূক্ষ্মতার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে যে আসল নোটের প্রায় কাছাকাছি। তাই এগুলোকে 'সুপার' জালনোট বলা হচ্ছে।

জাল রুপি পাচারে শুধুমাত্র রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোড ব্যবহার করা হয় নাকি অন্য কোনো রোডে ব্যবহার করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের তদন্তে আমরা এর রুটিন সন্ধান পেয়েছি।

এই জাল নোট চক্রের সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ডিবি তদন্তে পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এদের কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। এরা জাল নোটের বিনিময়ে অস্ত্র-মাদক ও চোরাই মোবাইল দেশে নিয়ে আসতো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App