×

জাতীয়

করোনার ধরন ও উপধরন নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:২৮ এএম

করোনার ধরন ও উপধরন নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে!

প্রতীকি ছবি

দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ খানিকটা স্তিমিত হয়ে এলেও শঙ্কা কাটেনি এখনো। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। দেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময়ে নমুনার সিকোয়েন্সিং করে পাওয়া গেছে করোনা ভাইরাসের নানা ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) উপস্থিতি। এর মধ্যে রয়েছে-আলফা (যুক্তরাজ্য), বিটা (দক্ষিণ আফ্রিকা), গামা (ব্রাজিল), ডেল্টা (ভারত), ল্যাম্বডা (পেরু), ওমিক্রন (দক্ষিণ আফ্রিকা)। ওমিক্রনের ধকল সামলে ওঠার আগেই ভাইরাসটির নতুন নতুন ধরন সম্পর্কে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে চীনের উহানে করোনার নতুন ধরন ‘নিওকোভ’ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। অনেকেই মনে করেন, ওমিক্রনের ঢেউ কাটিয়ে উঠলেই হয়তো এই বৈশ্বিক মহামারির পরিসমাপ্তি ঘটবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনগুলো করোনা ভাইরাসের হাজার হাজার ধরনের মধ্যে মাত্র কয়েকটি মাত্র। করোনা ভাইরাসের এরকম হাজার হাজার ধরন সারা বিশ্বেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিন ভাইরাস তৈরি হচ্ছে এবং তৈরি হওয়ার সময় যে পরিবর্তন ঘটছে সেটিকেই বলা হয় মিউটেশন (রূপান্তর)। ভাইরাসের মিউটেশন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। এই মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের ভেতরেও কিছু পরিবর্তন ঘটে। প্রাকৃতিক কারণেই ভাইরাসের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। অনেক সময় বেঁচে থাকার জন্যও নিজের মধ্যে তারা পরিবর্তন ঘটায়। ভাইরাস যখন মানব দেহের (হোস্ট) ভেতরে ঢুকে যায় তখন সেখানে গ্রাহক (রিসেপ্টর) থাকতে হয়। কোনো ভাইরাস একজন মানুষের দেহে ঢোকার পর যখন কোষ সংক্রমিত করতে শুরু করে তখন তার নিজেরও কপি বা অনুলিপি তৈরি করতে শুরু করে। এই পরিবর্তনের সময়ে তৈরি হয় ভাইরাসের হাজার হাজার কপি। আর এই কাজটা তাকে করতে হয় খুব দ্রুত। এই দ্রুত পরিবর্তনের চাপে পড়ার কারণে ভাইরাসের পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কিছু ত্রুটি দেখা দেয়। এসব ত্রুটিই জেনেটিক মিউটেশন। মিউটেশন হওয়া ভাইরাসটি আগের ভাইরাসের তুলনায় খারাপ হয় কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অনেক সময় এই পরিবর্তন ভাইরাসটির নিজের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। মিউটেশনের জন্য ভাইরাসের ক্ষতি করার তীব্রতা যেমন বেড়ে যেতে পারে তেমনি তা কমেও যেতে পারে।

এদিকে ওমিক্রনের তিনটি উপধরনও (বিএ.১, বিএ.২ এবং বিএ.৩) দেশে শনাক্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) প্রকাশিত এক জিনোম সিকোয়েন্স গবেষণায় ঢাকাতে ওমিক্রনের অন্তত ৩টি উপধরন পাওয়া গেছে। এই তিন উপধরন আফ্রিকান, ইউরো-আমেরিকান এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ওমিক্রন ধরনের সঙ্গে মিলে যায়।

এদিকে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিএ.১-কে ছাপিয়ে বিএ.২-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএ.২।

গত ২ ফেব্রুয়ারি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ওমিক্রনের উপধরন আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে বলে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের ৫৭টি দেশে ওমিক্রনের সাব-টাইপ (উপধরন) পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এসব সাব-টাইপ আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে। তাই আমাদের সচেতন হতেই হবে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন তৈরি হবেই। তার মিউটেশন হবে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সব ধরনের তীব্রতা এক হবে তেমনটি নয়। আবার সব ধরন আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে তেমনটাও নয়। তবে আমাদের জন্য বিপজ্জনক ধরন যে আসবে না তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। ভাইরাসটি হোস্টের দেহে ঢুকে সেখানে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। হোস্টের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে সেখানে ভাইরাস টিকতে পারে না। তবে অপেক্ষাকৃত কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হোস্টের বেলায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে ভাইরাস। এখানে বলা প্রয়োজন ভাইরাসের সব ধরনই খারাপ এমনটা কিন্তু নয়। মিউটেশনের জন্য ভাইরাসের ক্ষতি করার তীব্রতা যেমন বেড়ে যেতে পারে তেমনি তা কমেও যেতে পারে। শঙ্কা যেমন আছে আশার জায়গা তেমনি আছে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলও এমনটা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ওমিক্রনের পর নতুন করে আরেকটি ধরন আসবে। যদিও ধরনগুলো তেমন ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন না তিনি। তবে এখন যদি নতুন ধরন এসে আরেকটি নতুন রিসেপ্টর বাইন্ডিং তৈরি করে, তাহলে তাতে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের কাছে যেসব তথ্য উপাত্ত আছে তাতে দেখা যাচ্ছে ওমিক্রনের উপধরন বিএ.২ অন্য যে কোনো ধরনের তুলনায় দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। বিএ.১-এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে এটি যত দ্রুত সংক্রমণ ঘটায় তত দ্রুতই তা কমতে থাকে। কিন্তু বিএ.২-এর ক্ষেত্রে তা নয়। এটি দ্রুত সংক্রমণ ঘটালেও কমে ধীরে। এখন আমাদের দেশে যেমনটি দেখছি। যত দ্রুত রোগীর সংখ্যা বেড়েছিল সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল তা কমছে কিন্তু ধীরে। এতে করে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ভাইরাস অনবরত পরিবর্তনশীল। নতুন ধরন আসবেই। তবে সাবধানতা অবলম্বন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং টিকা নিলে সংক্রমণের পথটাকে শ্লথ করা যাবে।

এদিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া বিএ.২-কে পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই উপধরনের বিস্তারের ক্ষমতা তাদের বিস্মিত করছে। তবে বিএন.২-কে এখনও উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা না দিলেও এই উপধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তাদের নজরদারি জোরদার করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App