×

স্বাস্থ্য

বিধিনিষেধ শিথিলের ইঙ্গিত! সতর্কতার বিকল্প নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৩২ এএম

বিধিনিষেধ শিথিলের ইঙ্গিত! সতর্কতার বিকল্প নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রতীকী ছবি

কোভিড-১৯ সংক্রমণ পুনরায় বাড়ায় দেশে ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ পালনের নির্দেশনা দেয় সরকার। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া হয় কিছু নির্দেশনা। সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান আর জনসমাগমে বিধিনিষেধ ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা ছাড়া জনসাধারণের মধ্যে সরকারের অন্যান্য বিধিনিষেধ মানার প্রবণতা একেবারেই তলানিতে। গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সরকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু থেকেই মানা হয়নি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি এতদিন মানা হলেও ৯ তারিখ থেকে পূর্ণ আসনেই যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে রেল। গতকাল সোমবার এমন ঘোষণাই দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঘোষণায় বলা হয়, সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী। এরই মধ্যে টিকা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ টিকা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছে। এতে ট্রেনের যাত্রীর চাপ বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার স্বার্থে যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর টিকেট বিক্রির জন্য ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে কাউন্টারে টিকেট ইস্যু ও ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও মাস্ক পরিধান করতে হবে।

বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়ানোর মধ্যেই রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্ত বিধিনিষেধ শিথিলেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধিনিষেধ আরোপ ও শিথিলের বিষয়টি নির্ভর করে সংক্রমণ বাড়া ও কমার ওপর। মানা হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটি ভিন্ন বিষয়; কিন্তু সরকারের কিছু নির্দেশনা কিন্তু এখনো রয়েছে। যেমন- মাস্ক পরা, এবং ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’। সরকার নির্দেশনা দিক বা না দিক নিজের সুরক্ষার বিষয়টি নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, সংক্রমণের যে গ্রাফটা জানুয়ারি মাসের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী ছিল তা কিন্তু এখন কমছে। মানুষের মধ্যে গা ছাড়া ভাব স্পষ্ট। তবে সংক্রমণ যখন ঊর্ধ্বমুখী ছিল তখনো মানুষ স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারের বিধিনিষেধ মানেনি। বিধিনিষেধতো অনন্তকাল চলবে না। নিজেদের সচেতনতাওতো জরুরি। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার বিষয়টি নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়ার বিষয়টি আমাদের মানতেই হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত জনস্বাস্থ্য পরামর্শক কমিটির (সিলেট বিভাগ) সদস্য সিনিয়র ড. আবু জামিল ফয়সাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না করোনা ভাইরাস সহসাই যাচ্ছে না। ধরে নিতে হবে এই ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের বহুদিন বসবাস করতে হবে। তাই সতর্কতার বিকল্প নেই। তবে আমি মনে করি বিধিনিষেধ মানার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ জনসম্পৃক্ততা দরকার সেটি হয়নি। বইমেলাও শুরু হচ্ছে। এ সময় যেহেতু অনেক মানুষের সমাগম হবে তাই বইমেলা প্রাঙ্গণ বা এর আশপাশে মাস্ক পরার বিষয়টি বারবার বলতে হবে। মাস্ক না পরলে শাস্তি এবং বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। এখনো সতর্ক অবস্থা বজায় রাখতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বের সবাই সমভাবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা না পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ভাইরাসের ঝুঁকি থাকবেই। বিধিনিষেধ আরোপ ও শিথিলের বিষয়টি নির্ভর করে সংক্রমণ ওঠা-নামার ওপর। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সংক্রণের যে চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল এখন তা নামছে। সংক্রমণ কমছে। তবে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। যখন সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয় তখন যারা সংক্রমিত হয়েছিল, যাদের কো-মরবিডিটি ছিল, বয়স্ক ব্যক্তি তাদের মৃত্যুর তথ্যটা এখন আমরা পাচ্ছি। এখন যে সংক্রমণ কমার চিত্রটি আমরা দেখছি মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর প্রভাব দেখতে হলে আমাদের আরো ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে যাদের কো-মরবিডিটি আছে এবং বয়স্ক তারা সব সময়ই ঝুঁকিতে আছেন।

বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য গবেষক ড. মো. সরোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি চালানো সম্ভব নয়। তাই করোনার সংক্রমণ কমাতে অন্য যে বিষয়গুলো আছে সেদিকে আমাদের জোর দিতে হবে। আমাদের সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে। স্কুল-কলেজগুলো এখন খুলে দেয়া প্রয়োজন। বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়েই ওমিক্রনের সংক্রমন যেভাবে দ্রুত বেড়েছিল ততটাই দ্রুত কমছে। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। তবে সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক অনুষ্ঠানে বলেন, অন্য দেশে মৃত্যুহার যেভাবে বেড়েছে টিকা নেয়ার কারণে আমাদের দেশে মৃত্যুহার বাড়েনি। তবে টিকা মৃত্যুঝুঁকি কমায়, সংক্রমণ নয়। তাই মাস্ক পরুন, স্বাস্থ্যবিধি মানুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App