×

জাতীয়

করোনা চিকিৎসায় ওষুধের অতি ব্যবহারে বাড়ছে ঝুঁকি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:০৭ এএম

করোনা চিকিৎসায় ওষুধের অতি ব্যবহারে বাড়ছে ঝুঁকি

প্রতীকি ছবি

মহামারির শুরুতে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ ছিল না। করোনা শনাক্ত হলেও রোগীকে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি বা মাথাব্যথার অর্থাৎ লক্ষণভিত্তিক ওষুধ দেয়া হতো। এখন করোনা নিরাময়ের সুনির্দিষ্ট ওষুধ আছে। দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের অতি ব্যবহার ও অপব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ডেল্টার তীব্র সংক্রমণের সময় যে ওষুধ ব্যবহার করা হতো মৃদু লক্ষণযুক্ত ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও সেটি ব্যবহার হচ্ছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যে ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন তৈরি হয়েছিল- সেটি সংস্করণ করে হালনাগাদ গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসায় ৫টি ওষুধকে অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে ৪টি ওষুধ বাংলাদেশে আছে। হালনাগাদ গাইডলাইনে ওই ওষুধগুলোই ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়া ওষুধের সঠিক ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কোন ধরনের রোগী ওষুধ পাবেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে ৫টি ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দেয় সেখানে রয়েছে দুটি মনকোলোনাল এন্টিবায়োটিক ও ৩টি এন্টিভাইরাল। এন্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে ক্যাসরিভিম্যাক্স ও সরটিভিম্যাপ। আর এন্টিভাইরালের মধ্যে রয়েছে মলনুপিরাভির, প্যাক্সলোভিড ও রেমডেসিভির।

রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ শাখা) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এন্টিভাইরাল ওষুধ প্রসঙ্গে বলেন, টিকার পাশাপাশি করোনাকালে এন্টিভাইরাল ওষুধের আবিষ্কার হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সেগুলো উৎপাদন হচ্ছে, বাংলাদেশেও ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো। কিন্তু চিকিৎসকদের কাছে আমরা আবেদন রাখতে চাই, সুনির্দিষ্ট লক্ষণ ও নির্দেশনা ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা না হয়, কোনো অবস্থাতেই যেন এসবের অপব্যবহার না করা হয়।

কোভিড-১৯ বিষয়ক ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক রোগীর এন্টিভাইরালের প্রয়োজন হয় না। মনে রাখতে হবে যে কোনো এন্টিভাইরালের বিরূপ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তাই অহেতুক এসব ওষুধ দেয়া থেকে চিকিৎসকদের বিরত থাকতে হবে। যাদের ঝুঁকিপূর্ণ যেমন- ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন, এজমাটিক সমস্যা আছে তাদের এন্টিভাইরাল দেয়া হয়। মৃদু উপসর্গ যাদের তাদের দেয়ার দরকার নেই। ভাইরাসের ওষুধের দাম সব সময়ই বেশি। এক্ষেত্রেও ওইসব ওষুধের দাম বেশি।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, এখন থেকে কোভিড-১৯ নিরাময়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এন্টিভাইরাল, এন্টিবায়োটিকসহ মোট ৫টি নির্দিষ্ট ওষুধের প্রয়োগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করবেন চিকিৎসকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির এক সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, অতিমারির দুবছর পার হয়ে গেলেও কোভিড-১৯ অসুখের মোকাবিলায় যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতির সন্ধান এখনো মেলেনি। তবুও ওষুধ ব্যবহারের বিরাম নেই। এখন যেসব রোগী দেখা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশেরই এন্টিভাইরালের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকও দরকার নেই। কিন্তু চিকিৎসকরা করোনা রোগীদের দেদার এন্টিবায়োটিক, এন্টিভাইরাল এবং ভিটামিন ওষুধ দিয়ে যাচ্ছেন। ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের লাভের কাছে রোগীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মুখে খাওয়ার ওষুধ হিসেবে মলনুপিরাভির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন করোনায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে না গিয়ে, ফার্মেসি থেকে এই ওষুধ কিনে খেলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ফার্মাকোলজিক্যাল সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন ধরনে আক্রান্তদের জন্য আলাদা কোনো ওষুধ এখনো আসেনি। তবে সংক্রমিত হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে যদি মলনুপিরাভির ব্যবহার করা যায় তবে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি ২৯ শতাংশ কমায়। আর প্যাক্সলোভিডের ক্ষেত্রে এটি ৭৯ শতাংশ। এসব ওষুধের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। মলনুপিরাভির দাম ২ হাজার টাকা। প্যাক্সলোভিডের দাম ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আমরা বলেছি এসব ওষুধ যাতে ফার্মেসিগুলোতে না দেয়া হয়। কারণ ফার্মেসিগুলোতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যদি সেখানে ওষুধগুলো পাওয়া যায় তাহলে এর অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ হবে। তাই যেসব হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয় সেখানেই যাতে সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। আর সুনির্দিষ্ট লক্ষণ ছাড়া কোনো ওষুধ যেন ব্যবহার না করা হয়, সে ব্যাপারে চিকিৎসকদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App