×

জাতীয়

এতিম ছাত্রীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে কাতার চ্যারিটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৫৯ পিএম

এতিম ছাত্রীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে কাতার চ্যারিটি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ‘হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা পরিবার’ নামের প্রতিষ্ঠানটি। ছবি: ভোরের কাগজ

বাংলাদেশের শত শত এতিম ছাত্রীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্যসহ মৌলিক সকল চাহিদার যোগান দিচ্ছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা কাতার চ্যারিটি। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ‘হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা পরিবার’ নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে। গত ১০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক এতিম শিশুর উন্নত ভবিষ্যত বিনির্মানে কাজ করছে কাতার চ্যারিটি। এতে করে বাবা-মা হারানো এসব অসহায় মেয়ে ভেঙে পড়া মনে ফিরে পেয়েছে আত্মবিশ্বাস। এই প্রতিষ্ঠানে থেকে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা নেয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি নানা দপ্তরে চাকরি করছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিন প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে জানা গেছে, বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। ছয়তলাবিশিষ্ট একটি ভবনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় তারা বেড়ে উঠছে। একই সঙ্গে লাগোয়া স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে হাজী আসমত আলী বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চিকিৎসার জন্য করা হয়েছে হাজী আসমত আলী মেডিকেল সেন্টার। স্কুলটিতে এখন পড়াশোনা করছে ৮০০ শিক্ষার্থী। এসব মেয়েদের পড়াশোনা, প্রযুক্তিজ্ঞান, চিকিৎসাসেবা, খাওয়া-দাওয়া বিনা পয়সায় সবই মিলছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। শুধু তা-ই নয়, নির্দিষ্ট সময়ের পর এসব মেয়েরা যেন কর্মক্ষেত্রে যোগ্য হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক জোগান দিচ্ছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা কাতার চ্যারিটি।

প্রতিষ্ঠানটি পর্যবেক্ষণে গিয়ে দেখা যায়, বালিকা পরিবারের ছয়তলাবিশিষ্ট সুউচ্চ ভবনের সামনে বিশাল মাঠ। প্রধান ফটকের সামনে ফুলের বাগান। চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে একটি মিলনায়তন। আছে কম্পিউটার ল্যাব কক্ষ। থাকার কক্ষগুলো পরিপাটি। প্রতিটি কক্ষে আছে প্রয়োজনীয় আসবাব। স্কুলটিতে ১৫ জনের মতো একটি শিক্ষক টিম রয়েছে। আছে একটি পাঠাগারও। প্রতিদিনের স্কুল ক্লাসের পাশাপাশি এসব মেয়েদের মেধার ঘাটতি মেটাতে রয়েছে সন্ধাকালীন কোচিংয়ের ব্যবস্থা।

প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করে এখন বেশ কয়েকজন মেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। পাশাপাশি বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের তিনজন সাবেক ছাত্রী ঢাকার প্রাইম নার্সিং কলেজে নার্সিং বিভাগে পড়াশোনা করছেন। কথা হয় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রী জান্নাতুন নাহারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর একটি সময় পরিবারের আর্থিক সমস্যা এত বড় হয়ে উঠেছিল যে দুবেলা খাওয়ার চিন্তা করা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারতাম না। হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা পরিবারে আসার পর অন্তত আমার থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ হয়। এক প্রশ্নের জবাবে জান্নাত বলেন, এখানে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছেদ বই-খাতা সব কিছু এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। এখানে আমাদের সর্বোচ্চ কেয়ার করা হয়।

কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থী জুয়েনার সঙ্গে। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি নার্সিং কলেছে পড়াশোনা করছেন। ২০০৬ সালে জুয়েনার বাবা সাফির উদ্দিন মারা যান। পরে সংসারের অভাব দূর করতে জুয়েনার ঠিকানা হয় এই বালিকা পরিবারে। জুয়েনা বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে কীভাবে একজন অসহায় মানুষের জীবনের গল্প বদলে যেতে পারে, এই বালিকা পরিবারে ঠাঁই না হলে বোঝার সুযোগ ছিল না। একটি প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে এখন আমি সুখের স্বপ্ন দেখতে পারছি।

বছরের পর বছর ধরে অসহায় নারীদের থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা সর্বোপরি কর্মের ব্যবস্থা করতে পারায় বেশ উজ্জীবিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ ও দাতা সংস্থার সদস্যরা। জানা যায়, কাতার চ্যারিটির অর্থায়নে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ছাড়াও ঢাকার ধামরাই, আশুলিয়া, সিলেটের সুরমা, বাগেরহাটের ফকিরহাটে, রাজশাহীর গোদাগাড়ি ও রংপুরের গঙ্গাচড়াসহ সারাদেশে সংস্থাটির ১৫টির বেশি স্যোসাল ওয়েলফেয়ার সেন্টার আছে। এগুলোর মাধ্যমে এতিম শিশুদের ভরণ-পোষণ ও তাদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণের সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App