×

সারাদেশ

আগাম আনারসে স্বাবলম্বী নানিয়ারচরের মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:০১ এএম

আগাম আনারসে স্বাবলম্বী নানিয়ারচরের মানুষ

হানিকুইন আনারস। ছবি: ভোরের কাগজ

পার্বত্যাঞ্চলের নানিয়ারচরের হানিকুইন জাতের আগাম আনারস যেন মৌসুমি ফলনকে হার মানাচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ মাস আনারসের মাস হলেও বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচরে প্রতি বছরই উৎপাদিত হয় উচ্চ ফলনশীল হানিকুইন আনারস। যা দেশের অন্য কোথাও ফলন পাওয়া যায় না। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে নানিয়ারচর উপজেলা হচ্ছে আনারসের জন্মস্থান। আবার অনেকে বলে আনারসের রাজধানী নানিয়াচরচর। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে আনারসের জন্য বিখ্যাত নানিয়ারচর উপজেলা। নানিয়ারচর উপজেলার মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ আনারসের আবাদ বা বাগান করে থাকে। তবে বেশির ভাগই বাঙালি জনবসতি এলাকায় আনারসের চাষ করা হয়েছে। আর এ আনারসের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে ওই এলাকার মানুষ। আনারস চাষি ছোবহান জানান, আনারস চাষে অনেক পরিশ্রম যদি কারো অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে সে ভালো করে তা বলতে পারবে না। তিনি জানান, অক্টোবর মাসের আগেই আনারস চাষের জন্য পাহাড়ের ঢালুগুলো প্রস্তুত করতে হয়। প্রায় ১ মাস লেগে যায় জমি ঠিকঠাক করে আনারস চাষের উপযোগী করে তুলতে। এর আগে আনারসের চারা তুলে তা প্রস্তুত করে রাখতে হয়। তারপরে সারি সারি করে পাহাড়ের বুকে লাইন ধরে রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের পর প্রায় ১২-১৩ মাস অপেক্ষার পর তাতে আনারস আসে। এর আনারস বাগানের সেবাযত্ন ও পরিচর্ষা করতে হয়। তাতেই ভালো ফলন আসা করা যায়। অনেকে বলেন আনারসের জন্ম নানিয়ারচরে আবার অনেকে বলেন আনারসের রাজধানী নানিয়ারচরে এটা শতভাগ সত্য। আনারসের সঙ্গে এখানকার অর্থনৈতিক ভারসাম্য চলমান রয়েছে। বর্তমানে হাইব্রিড আনারস বছরে ২ বার ফলন আসে তাতে শীত মৌসুমের আগেই আনারস বাজারে দেখতে পায় লোকজন। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, নানিয়ারচরের বউবাজার এলাকার শাহিন, ছোবহান ফারুক প্রচুর পরিমাণে আনারসের চাষ করেন। রীতিমতো আনারস চাষ করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। তাদের আনারস দেশ এবং দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। তারা ট্রাক ভর্তি করে আনারস ঢাকা ও চট্টগ্রাম পাইকারি হিসেবে চালান দিয়ে থাকেন। আবার যারা ছোটখাটো আনারসের বাগান করে থাকেন তারা স্থানীয়ভাবে খুচরা আনারস বিক্রি করে ফেলেন। এছাড়াও ঘিলাছড়ি ও ১৭ বা ১৮ মাইল এলাকায় উপজাতিরা বেশ কিছু আনারস বাগান করেছেন। আনারস চাষি ফারুক জানান, আনারস চাষে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রমের ফলে ভালো আনারস আবাদ করা সম্ভব। একটি আনারসে প্রায় ৫-৭ টাকা ব্যয় হয়। ভালো ফলন উৎপাদন হলে তা বিক্রি করা হয় ১০-১৫ টাকা। কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২ বছর আনারসে তেমন লাভবান হতে পারেনি আনারস চাষিরা। অনেকে ব্যাংক লোন নিয়ে আনারস চাষে পুঁজি দিয়েছেন। কিন্তু করোনার জন্য লোকসান গুনতে হয়েছে। আর ব্যাংক সুদের বোঝা এখনো টানতে হচ্ছে। নানিয়ারচরের আনারস প্রাণ জয় করেছে আগত পর্যটকদের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরাঘুরতে এসে একবার হলেও একটি আনারস খেয়ে যাবে। পর্যটকদের লোভ আনারসের প্রতি। তারা জানে নানিয়ারচরের আনারসে ফরমালিন নাই। অনেকে আবার ঘুরে ফিরে মুগ্ধ হয়ে যাওয়ার সময় আনারস নিয়ে যায় পরিবার পরিজনের জন্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রতন কুমার পাল বলেন, রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে প্রায় ২১৩ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ করা হয়। তবে নিজ নিজ মালিকানাধীন জমিতেই চাষিরা এসব আনারসের চাষ করে থাকেন। তারা যদি মনে করে কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতা প্রয়োজন আছে তাহলে আমরা বিনামূল্যে সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তবে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় প্রচুর আনারস জন্মায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App