×

জাতীয়

সেট টপে বড় বাণিজ্যের ধান্দা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:২৯ এএম

সেট টপে বড় বাণিজ্যের ধান্দা!

ফাইল ছবি

একচেটিয়া বাজারে জিম্মি হওয়ার শঙ্কা গ্রাহকের, নীতিমালা না করেই বেঁধে দেয়া হলো সময়

ক্যাবল টিভি সংযোগে সেট টপ বক্স বাধ্যতামূলক করার সরকারি সিদ্ধান্তে অন্তত ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের সুযোগ খুঁজছেন ব্যবসায়ীরা। ক্যাবল অপারেটররা চাচ্ছেন, গ্রাহক যেন শুধু তাদের কাছ থেকেই সেট টপ বক্স কেনেন। আর সরকারও এখন পর্যন্ত বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। ফলে সেট টপ বক্স কেনার বাড়তি চাপের মধ্যেই ‘একচেটিয়া বাজারে’ জিম্মি হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ক্যাবল টিভি গ্রাহকদের জন্য সেট টপ বক্স স্থাপন বাধ্যতামূলক করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

দেশে ক্যাবল টিভি সংযোগের প্রকৃত হিসাব নেই কারো কাছে। তবে ক্যাবল অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) ধারণা করছে, এ সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। সংগঠনটি বলছে, প্রতিটি সেট টপ বক্সের দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। গড় হিসাবে প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা খরচ হবে এর পেছনে। গ্রাহকরা কার কাছ থেকে এই সেট টপ বক্স কিনবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, গ্রাহক যেখান থেকে ক্যাবল কানেকশন নিয়েছেন, সেখান থেকেই সেট টপ বক্স কিনবেন। আর ওই সংযোগকারী প্রতিষ্ঠান সেট টপ বক্স নেবে কোয়াবের কাছ থেকে। এর বাইরে কোথাও থেকে কেনা যাবে না। কোয়াব নিজস্ব ব্যবস্থায় সেট টপ বক্স চীন থেকে আমদানি করতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য আমরা সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণ চাইব। দুই বছরের মধ্যেই তা পরিশোধ করে দিব।

কোয়াব নেতার এ বক্তব্য থেকে অনেকটাই স্পষ্ট, তারা সেট টপ বক্সের বাজার নিজেদের হাতে রাখতে চায়। আর এখানেই গ্রাহকদের জিম্মি হয়ে পড়ার আশঙ্কা জোড়ালো হয়েছে। মালিবাগের বাসিন্দা আসমা রহমান জানান, তার বাসায় ক্যাবল সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী সেট টপ বক্সের জন্য ৪ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আসমা মনে করেন, বাজার থেকে সেটা তিনি দেড় থেকে দুই হাজারের মধ্যে কিনতে পারবেন। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এমনিতেই এটি একটি বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিশ দেখতে হলে সেট

টপ বক্স কিনতে হবে। এখন যদি সেটিও অপারেটরদের বেঁধে দেয়া দামে কিনতে হয়, তবে তো বলা যায় একটা জিম্মি দশার মধ্যে আমরা পড়তে যাচ্ছি। সরকার এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কিনা জানতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছিলেন, অপারেটররা সুলভ মূল্যে এ সেট টপ বক্স সরবরাহ করবে। দেশে এই বক্স তৈরির জন্য সেনাবাহিনীর মেশিনটুলস ফ্যাক্টরির সঙ্গেও আলোচনা করা হচ্ছে। তবে গ্রাহক নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী খোলা বাজার থেকে সেট টপ বক্স কিনতে পারবেন কিনা তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম জানান, কারা এই সেট টপ বক্স আনবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সেট টপ বক্স একজন দর্শক যে কোনো স্থান থেকে কিনে তার ঘরের টেলিভিশনের সঙ্গে লাগাতে পারেন। এখন পর্যন্ত একক কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

গত ৪ নভেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখতে হলে গ্রাহকদের ডিজিটাল সেট টপ বক্স বসাতে হবে। এ জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভাগীয় ও জেলা শহরে এই বক্স বসানোর বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। পরে ২২ নভেম্বর উচ্চ আদালত ওই সিদ্ধান্ত এক মাসের জন্য স্থগিত করে। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে গত ১ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্দেশনার কথা জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৩১ মার্চের মধ্যে অপারেটররা ঢাকা ও চট্টগ্রামে সব গ্রাহকের কাছে ডিজিটাল সেট টপ বক্স পৌঁছার ব্যবস্থা নেবেন। এর পরের ধাপে ৩১ মের মধ্যে সব বিভাগীয় এবং মেট্রোপলিটন শহরে এই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কী সুবিধা মিলবে সেট টপ বক্সে : সরকার বলছে, সেট টপ বক্স চালু হলে সবারই লাভ হবে। শুধু লোকসান হবে কর ফাঁকি দেয়া ব্যবসায়ী ও কর্মীদের। সেট টপ বক্সের কারণে হাই ডেফিনেশন বা ফুল এইচডি ছবি দেখা যাবে। বিদেশি চ্যানেলের ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন দর্শকরা। এছাড়া এই পদ্ধতিতে পছন্দমতো অনুষ্ঠান ও চ্যানেলের তালিকা তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে দর্শক তার পছন্দের অনুষ্ঠান বা চ্যানেল সহজেই দেখতে পারেন।

অন্যদিকে, সরকারের রাজস্ব আদায় সহজ হবে। বর্তমানে অপারেটররা বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেন। এ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর পাওয়ার কথা সরকারের। সে অনুযায়ী বছরে ২ হাজার কোটি টাকার পাওয়ার কথা থাকলেও অপারেটররা দিচ্ছেন মাত্র ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা।

নেটওয়ার্ক ডিজিটাল হলে অপারেটররাও সুবিধা পাবেন। যারা পাড়া-মহল্লায় সংযোগ দেয়, তারা অনেক সময় সঠিক সংযোগ সংখ্যাটি অপারেটরদের জানায় না। এ কারণে অপারেটররা সঠিক বিল পায় না। সেট টপ বক্স নিলে টাকা ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকবে না।

এছাড়া বড় সুবিধা হবে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্ষেত্রে। টেলিভিশন মালিকদের সমিতি অ্যাটকোর সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল বাবু জানান, এটা নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে পে-চ্যানেলের দিকে যাওয়া যাবে। এতে সংকটে থাকা চ্যানেলগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। ফলে অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে বিনিয়োগ করা যাবে। এটি হবে দেশের জন্য একটি মাইলফলক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App