বিপিএলে ব্যাটে-বলে তামিম ও সাকিব সেরা

যতই দিন গড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) যতই জমে উঠছে। ২১-২৫ জানুয়ারি ঢাকাপর্ব শেষে ২৮ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মাতিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে ফের ঢাকায় শুরু হচ্ছে বিপিএলের অষ্টম আসর। ৩ এবং ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দিনে ৪ ম্যাচ শেষে সিলেটে যাবে দলগুলো। ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট মাতিয়ে ক্রিকেটাররা ফের ঢাকাপর্বে অংশ নেবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনালের মধ্য দিয়ে এবার বিপিএলের পর্দা নামবে। ঢাকাপর্বে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দিনের প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্স খেলবে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মোকাবিলা করবে। সাকিব আল হাসানের বরিশাল ফরচুন ৬ ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে দলটি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ ম্যাচে ৬, মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ৬ ম্যাচ থেকে ৬ এবং চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৭ ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ৫ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স। ৪ ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট নিয়ে সবার শেষে অবস্থান করছে সিলেট সানরাইজার্স।

এ বছর বিপিএলের পর্দা উঠেছে ২১ জানুয়ারি। ঢাকার পর চট্টগ্রাম পর্বও শেষ হয়েছে। ঢাকাতে তুলনামূলক কম রান হলেও চট্টগ্রামে বেশ ভালো খেলছে দলগুলো। চট্টগ্রাম পর্বে প্রতিটি ম্যাচেই জমজমাট লড়াই হচ্ছে দলগুলোর মধ্যে। জাতীয় দলের পরিচিত মুখ ও বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়াও বিপিএলে আলো ছড়াচ্ছে নতুন অনেক মুখ। ভালো খেলে আবারো দলে ফেরার লড়াইয়েও ভালো খেলছেন অনেক খেলোয়াড়রা। দেখে নেয়া যাক বিপিএলের ১৫ ম্যাচ শেষে ব্যাটে-বলে নৈপুণ্য দেখিয়ে কারা রয়েছেন সেরা পাঁচে।

[caption id="attachment_332877" align="aligncenter" width="700"] সাকিব আল হাসান ৬ ম্যাচে ১১২ রান দিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে সংগ্রহে শীর্ষে রয়েছেন[/caption]

ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় এক নাম্বারে আছেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ দলের এ ওয়ানডে অধিনায়ক মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার হয়ে ৬ ম্যাচ খেলে ৫২.৪০ গড়ে করেছেন ২৬২ রান। সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ৬৪ বলে ৪ ছক্কা ও ১৭ চারে ১১১ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেছেন তিনি। একটি শতকের সঙ্গে পেয়েছেন ২টি অর্ধশতকও। বল হাতে বরিশাল ফরচুনের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৬ ম্যাচে ১১২ রান দিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে উইকেট সংগ্রহের শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ব্যাট দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইংলিশ ওপেনার উইল জ্যাক ৬ ম্যাচ খেলে দুটি অর্ধশতকে ৩৭.১৭ গড়ে তুলেছেন ২২৩ রান। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিপিএলে করছেন মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার অধিনায়কত্ব। রান তোলার তালিকায় তিনি রয়েছেন তিন নাম্বারে। ৬ ম্যাচ খেলে ৫ ইনিংসে একটি অর্ধশতকে ৪৮.৫০ গড়ে ১৯৪ রান করেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের আরেক ইংলিশ ব্যাটিং অলরাউন্ডার বেনি হাওয়েল ৬ ম্যাচ খেলে ৪০ গড়ে ১৬০ রান করে রয়েছেন তালিকার চার নাম্বারে। তালিকার পাঁচ নাম্বারে আছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের আফিফ হোসেন ৭ ম্যাচ থেকে ১৫৮ রান সংগ্রহ করেছেন।

বিপিএলে এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে দুইজন ব্যাটসম্যান মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে সিলেট সানরাইজার্সের ক্যারিবীয় ওপেনার সিমন্স ৬৫ বলে ৫ ছক্কা ও ১৪ চারে ১১৬ রান করেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।

বল হাতে বাংলাদেশের বোলাররা দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন। তালিকার প্রথম চারজনই দেশের খেলোয়াড়। তালিকার প্রথমে রয়েছেন বরিশাল ফরচুনের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বরিশালে ব্রাভো তিনি ১৬০ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ১০ উইকেট। পেসার জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক না হওয়া কামরুল ইসলাম রাব্বি। ৫ ম্যাচ শেষে ১৭.৬০ গড়ে ১০ উইকেট পেয়েছেন। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে আলো ছড়ানো নাসুম আহমেদ। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ৬ ম্যাচে ১৩.৮৯ গড়ে পেয়েছেন ৯ উইকেট। পঞ্চম স্থানে ও রয়েছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের আরেক খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬ ম্যাচে ১৯.৩৩ গড়ে ৯ উইকেট পেয়েছেন তিনিও। বিপিএলে এখন পর্যন্ত হাটট্রিকও হয়েছে একটি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে করেছেন হাটট্রিক। নজরকাড়া বোলিংয়ের কারণে সমালোচনায়ও এসেছেন বেশ। ২৯ জানুয়ারি সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক এবং বোপারাকে সাজঘরে ফিরিয়ে করেছেন এবারের আসরের প্রথম হাটট্রিক।

বিপিএলে নাহিদুল, মৃত্যুঞ্জয়ের মতো তরুণ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য যেমন আলো ছড়াচ্ছেন তেমনি নতুন করে আবার বিজয়, সাব্বির ও মোসাদ্দেকরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মনে করেন তরুণদের নজরকাড়া পারফরম্যান্সগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের বছরে দেশের ক্রিকেটের জন্যই ভালো। তানভীর ইসলাম-মৃত্যুঞ্জয়ের মতো তরুণ তুর্কিরা বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেললে অভিজ্ঞতাও অর্জন করবে বলে মনে করেন তিনি। দেশসেরা এই কোচ, যার হাত ধরে উঠে এসেছে অসংখ্য প্রতিভাবান খেলোয়াড় তার মুখে এমন কথা শুনে ভক্তদের মধ্যে জাতীয় দলকে নিয়ে আশার আলো জাগাবে নিশ্চয়ই।