বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিদেশীদের কাছে লেখা আমার ওইসব চিঠি কোনো লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহবান মাত্র। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের লবিষ্ট নিয়োগে অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপকে ধামাচাপা দিতে সরকার জনগণের করের টাকায় আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ভাষ্যমতে সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, জনগণের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রমাণিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সরকার জড়িত না থাকলে তা প্রমাণের জন্য তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা সাত কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতো।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত সোমবার অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর অভিযোগ খন্ডন করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। যে চিঠির কথা বলা হয়েছে এই চিঠি দেখিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার সকল ব্যক্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ভ্যানগার্ড। আর তাই বিএনপি তার আন্দোলন-সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দেশের ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সময় চায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশী-বিদেশী সব অংশীদারদের এই সরকারের সকল অপকর্ম সম্পর্কে অবগত রাখতে চায়। বিদেশীদের কাছে লেখা আমার ওই চিঠিসমূহ কোনো লবিস্ট নিয়োগের বিষয় নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহবান মাত্র।

প্রবাসী বাংলাদেশী একজনের লবিস্ট নিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আজো আমাদের দলের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। আমরা বলতে চাই, দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রবাসী কোনো পদক্ষেপ কোথাও নেয়, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য যদি কিছু করে সে পদক্ষেপের দায়িত্ব তার, বিএনপির নয়।

ওই পদক্ষেপকে নৈতিকভাবে সমর্থনের দায়িত্ব বাদে অন্য কোনো দায় দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। তবে বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য এই ধরনের দেশপ্রেমিক পদক্ষেপকে বিএনপি সাধুবাদ জানায় এবং তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ হলে সরকার সর্বপ্রথমেই নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ৭ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যধারা শুরু করতো, গ্রেফতার করতো। অথচ সরকার হাঁটছে উল্টো পথে।

নির্বাচন কমিশন গঠনে সংসদে পাস হওয়া ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ আইনটি গ্রহনযোগ্য নয়, এটি জনগনের সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এজন্য কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

হবিগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র জিকে গাউসসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪০ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে হবিগঞ্জের সমাবেশে প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ নেতাদের উপস্থিতিতে পুলিশ হামলা চালায় এবং উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।