×

স্বাস্থ্য

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০২ এএম

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর

ফাইল ছবি

নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ
দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দিনভর সূর্যের লুকোচুরি। কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক, কোথাও কোথাও আছে বৃষ্টিও। দুপুরের দিকে সামান্য রোদের আঁচ মিললেও রাতে পড়ছে তীব্র শীত। আবহাওয়ার এই বৈরীত্যের মধ্যেই জনজীবনে যুক্ত হয়েছে মহামারি করোনার ‘ওমিক্রন’ ধরন। কারণ যাই হোক, দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগী মিলছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই দুধরনের তাপমাত্রা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াদের জন্য অনুকূলে। দিন-রাতের তাপমাত্রার ওঠানামার ফলে কিছু কিছু ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই সংক্রমিত করছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তাপমাত্রার এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে যারা খাপ খাওয়াতে পারে না- যেমন শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা। ফলে অনেকেই জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারেন এবং হচ্ছেনও। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর একাধিক হাসপাতালের তথ্য থেকে জানা গেছে, দেশে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে ঠাণ্ডা-জ্বর ও সর্দি-কাশির রোগী বাড়ছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা ৮০ শতাংশই করোনায় আক্রান্ত। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এই চিত্রটিও সঠিক নয়। বহির্বিভাগে এবং চিকিৎসকের চেম্বারেও অনেক রোগী সেবা নিচ্ছেন। যাদের অবস্থা গুরুতর তারাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া উপসর্গ থাকার পরও নমুনা পরীক্ষা করলে যদি রিপোর্ট পজেটিভ আসে এই ভয়ে আবার অনেকে কমন কোল্ড বা ফ্লু জাতীয় রোগে আক্রান্ত ভেবে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে ভাইরাস পজেটিভ হয়েও অনেকে শনাক্তের বাইরে থাকছে। এটা উদ্বেগজনক। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শীতে আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা-থ্রি, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) ও রাইনো ভাইরাস প্রবলভাবে থাকে। এগুলোর কারণেই শীতে সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ার রোগী বেশি দেখা যায়। ঠাণ্ডাজনিত রোগ আর ওমিক্রনের উপসর্গ একই ধরনের। সেই সঙ্গে এই ধরনটি অধিকমাত্রায় সংক্রমণশীল। সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি ভেবে অনেকে নমুনা পরীক্ষা না করায় ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্যরাও সংক্রমিত হচ্ছে। তাই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসা শুরুর পাশাপাশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা দরকার। উপসর্গগুলো অনেকটা একই রকম হওয়ায়, অনেকেই ফ্লু এবং কোভিডের তফাতটা গুলিয়ে ফেলছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ও মৌসুমি ফ্লু বোঝার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি উপসর্গের দিকে নজর দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। তবে কোভিড এবং ফ্লুর লক্ষণগুলোর তীব্রতা ব্যক্তি বিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে। ফ্লুয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হলো- জ্বরের পাশাপাশি খুব ঠাণ্ডা লাগা; সর্দি, কাশি এবং গলায় ব্যথা হওয়া; নাক থেকে অনবরত পানি পড়া; সারা শরীরে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা হওয়া; আলসেমি এবং ক্লান্তি অনুভূত হওয়া; অনেকের ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। অন্যদিকে কোভিড হলে যেসব উপসর্গগুলো দেখা দেয় সেগুলো হলো- প্রথমত, জ্বর হওয়া; জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, ক্লান্তিভাব; স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া; মাথা যন্ত্রণা এবং সারা শরীরে ব্যথা; কারো কারো ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের সমস্যাও হতে পারে। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হলে ত্বকে সংক্রমণ, চুলকানি হওয়া, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়; বুকে ব্যথা অনুভব হতে পারে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড়দের চেয়ে শিশুদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। তবে এখন শিশুদের মধ্যেও সংক্রমণের হার বাড়ছে। তারা বলছেন, দেশে শিশুরা যেসব রোগে আক্রান্ত হয় তার অন্যতম হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ। এর উপসর্গ হচ্ছে নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি দেয়া, বুকে ঘড় ঘড় শব্দ করা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলা অথবা কানে ব্যথা। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবু সাঈদ চৌধুরী শিমুল ভোরের কাগজকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে যে রোগীদের দেখেছি তাদের হাল্কা জ্বর, সর্দি-কাশি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আরেকটি ভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে- সেটি হলো শিশুদের ঘুমের সময় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। রাত ২/৩টা পর্যন্ত শিশুরা ঘুমাচ্ছে না। নবজাতকসহ যারা কথা বলতে পারছে না তাদের মধ্যে কান্না বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরো বলছেন, ৯ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, এ বয়সের শিশুরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের ফুসফুসও সংক্রমিত হচ্ছে। এছাড়া করোনা পরবর্তী জটিলতা মাল্টিসিস্টেম ইনফেমেটরি সিন্ড্রোম ইন চিলড্রেনের (এমআইএস-সি) ঝুঁকি থাকে। এটা শিশুদের জন্য খুবই মারাত্মক। প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন, মৌসুমি ফ্লু এবং ওমিক্রন এই দুই কারণেই এখন ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশির রোগী মিলছে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি মনে করি মৌসুমি ফ্লুর চেয়ে ওমিক্রনের কারণেই এই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। লক্ষণ একই হওয়ায় মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছে কম। পার্বত্য জেলা এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। পার্বত্য জেলায় বেশ কিছু শিশুর নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছে। মহামারি লক্ষণযুক্ত রোগগুলো মহামারি হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। হেলাফেলা করলেই বিপদ। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সময়মতো টিকাও নিতে হবে। মাস্ক পরতে হবে সঠিক নিয়মে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App