×

জাতীয়

সবুজ শিল্পায়নের অধীনে আসবে অর্থনীতি: সাবের হোসেন চৌধুরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১০:০৩ পিএম

সবুজ শিল্পায়নের অধীনে আসবে অর্থনীতি: সাবের হোসেন চৌধুরী

রবিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা। ছবি: ভোরের কাগজ

দেশের প্রধান রপ্তানিখাত তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এ খাতে নিয়োজিত কর্মীদের জীবন মানে পরিবর্তন, সবুজ-পরিচ্ছন্ন জ্বালানি তৈরি, কারখানা পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে এর সুফল পাবে পুরো অর্থনীতি।

রবিবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডাযলগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম প্রমুখ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন ঘাটতি, নীতি সহায়তা, সচেতনার অভাবসহ নানা চ্যালেঞ্জও আছে দেশের পোশাকখাতে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করে সিপিডি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, পোশাকখাতে রপ্তানি বাড়ার সঙ্গে এ খাতের কর্মপরিবেশ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এগুলোর অবসান হওয়া উচিত। পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নে সবুজ কারখানা স্থাপনে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সবার আগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা যে সবুজ শিল্পায়নের কথা বলছি, এটা শুধু বস্ত্র এবং পোশাক খাতেই আমরা সীমিত রাখতে চাই না। আমরা যে ধরনের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি বা যে ধরনের ভবিষ্যতের কথা বলি তা হচ্ছে ‘গ্রিনিং দ্য বাংলাদেশ ইকনোমি’। সুতরাং এটা শুধুই পোশাক বা বস্ত্র খাতে সীমাবদ্ধ না।

আগামীতে আমরা আমাদের সার্বিক অর্থনীতিকে কিভাবে এ সবুজ শিল্পায়নের অধীনে নিয়ে আসবো এর অনেকটা নির্ভর করছে এক্ষেত্রে আমরা কতটা সফলতা পাবো। তিনি আরো বলেন, সরকারের তো কমিটমেন্ট আছেই। প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ১০টি কোল্ডবেজ পাওয়ারপ্ল্যারন্টের চুক্তি সরকার বাতিল করেছে। বাংলাদেশ সবচেয়ে ইমপ্যাক্টেড কান্ট্রি হবার পরেও আমরা ১২ বিলিয়ন ডলারকে না বলছি। ‘উই আর ডুয়িং ফর দ্য ইনভায়রনমেন্ট’। ‘উই আর দ্য রেসপন্সেবল সিটিজেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। বিশে^ আমাদের যে গুডউইল আছে সময় এসেছে সেটাকে কাজে লাগানোর।

সাবের হোসেন বরেন, আমরা গ্রিণিং বলতে কি বোঝাচ্ছি, সেখানে কি কি বিষয়গুলো আসবে- তা একসঙ্গে বিজিএমইএ বিকেএমইএ ও সরকার একত্র হয়ে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সবাই মিলে যদি একটি সুপারিশ তৈরি করে দেয়া হয়, তবে আগামীতে বাজেটে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। পোশাক মালিকরা যদি আমাদের মিনিস্ট্রিকে বোঝাতে সক্ষম হন তবে আমাদের মিনিষ্ট্রি থেকে এটা দাবি হিসেবে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা যাবে যে, এ বিষয়ে আমরা কিছু সুযোগ চাচ্ছি।

সিপিডির মতে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ নিয়োজিত যেখান থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। যা মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি। রপ্তানির এই আয় বাড়াতে হলে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে এ খাতে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে শ্রম ও শ্রমিকের নায্যতা নিশ্চিত, কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দূষণ কমানো। এসময় পোশাকখাতে পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনাকারী উদ্যোক্তারা জানান, পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনা খরচ অনেক বেশি। তারপরও বেশিরভাগ উদ্যাক্তা আগ্রহী হলেও ক্রেতা-বায়াররা কর্মপরিবেশের মান উন্নয়নের কথা বললেও বাড়তি দাম দিতে চান না। একই সাথে সরকারের নীতি সহায়তাও সবুজ শিল্পায়ন বান্ধব নয় বলে জানান হয়েছে। এদিকে, বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের ১৫৭টি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির সার্টিফিকেটধারী। এর মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৪টি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। প্রতি মাসে গ্রিন হিসেবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে। তিনি বলেন, বিজিএমইএ অনেক আগে থেকেই সবুজ শিল্পায়ন নিয়ে কাজ করছে। আরও কাজ করতে হবে।

এক্ষেত্রে সিপিডির পরামর্শগুলো গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন এ খাতের জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে হবে। কোনো দুর্ঘটনা হলেই গার্মেন্টসের নাম আগে উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রমাণ করে দেখিয়েছে দেশে বিশ্বমানের সবুজ কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু সমালোচনা না করে ভালো কাজগুলো ফোকাস করাও জরুরি। তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব। কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর প্রভাব গার্মেন্টস মালিকদের ওপর বেশি পড়েছে। বায়ারদের কাছে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিয়েও রিকভারি হচ্ছে না। কাঁচামাল ও শিপিং কষ্ট বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু শিপিং কষ্ট নিয়ে কথা বলা হয় না। সেখানে অনেকটা মনোপলি ব্যবসা চলছে। আশা করি সেটাও দেখা উচিত। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্রিন কারখানা বাংলাদেশে হয়েছে, তা কিন্তু উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App