×

শিক্ষা

শাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে চলছে আন্দোলন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:৪২ পিএম

শাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে চলছে আন্দোলন

প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে শাবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ। ছবি: ভোরের কাগজ

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চলছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গত ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে হল প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিনদফা দাবিতে আন্দোলন পরিস্থিতি শুরু হয়। কিন্তু তা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ছিল না। কিন্তু গত ১৬ জানুয়ারি ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিসি ভবনে উপাচার্য অবরুদ্ধ হন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলা হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেকেই আহত হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শুরু হয় একদফা এক দাবি নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন।

নানা কর্মসূচিতে আন্দোলন চলমান থাকলেও একপর্যায়ে জীবন বাজি রাখা কর্মসূচি আমরণ অনশনে বসেন ২৮ শিক্ষার্থী। টানা ১৬৩ ঘন্টার অনশনেও বসেন তারা। শারিরীক অবস্থা বিবেচনায় গত বুধবার সকালে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙান শিক্ষার্থীদের। এরপর অনশনরত ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে প্রস্থান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

বিগত ১২ দিনে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে করা আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, আমরণ অনশন, মশাল মিছিল, উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ, কাফন পরিধান করে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন, উপাচার্যের বাসভবনে সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মূল ফটক ও ভবনগুলোতে তালা দেওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

তবে এ ধরণের অবরোধমূলক কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে শিক্ষার্থীরা। বিগত দুইদিন ধরে কোন ধরণের অবরোধমূলক কর্মসূচি দেখা যায় নি। তবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মুক্তির দাবিতে বিগত সময়ে শিক্ষার্থীরা ছোট-বড় আন্দোলন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে গত বুধবার থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান রেখেছে আন্দোলন। চলছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন।

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রতিবাদ স্বরুপ 'হিরক রাজার দেশে' ও 'গুপি গাইন ও বাঘা বাইন' চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী অহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কিলো রোডে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’ শীর্ষক আলপনা এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি এ আলপনাকে অনশনকারীদের অনশনের স্মৃতি ধরে রাখতে আকা হয়েছে বলেও জানিয়েছে কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী।

সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজনের মাধ্যমেও চলমান রেখেছে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে তারা। এসময় বিভিন্ন ধরণের প্রতিবাদী গান, ছড়া, কবিতাসহ নানা আয়োজন ছিল কার্যক্রমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাট্য সংগঠন ও মিউজিক্যাল ক্লাব তাদের নিজস্ব পরিবেশনায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একই ধরণের চিত্র শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেও ছিল। রঙ তুলির আঁচড়েও যেন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদের ঝড় চলছে। যা আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিনিয়ত আকা হচ্ছে নতুন নতুন আলপনা ও অর্থবহ কার্টুন চিত্র।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরেও উপাচার্য বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান এবং কার্টুন আকা হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন চাই’, ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা হয়েছে সেখানে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে দেয়ালে উপাচার্য বিরোধী ও প্রতিবাদী বিভিন্ন শ্লোগান এবং কার্টুন চিত্র এঁকেছে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গান, কবিতা, নাটক, গ্রাফিতি, রোড পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। অহিংস আন্দোলনের আরেকটি রূপ হিসেবেই দাবি না মানা পর্যন্ত এ সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, অনশন থেকে সরে আসলেও উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে শুক্রবার বিকালে আবারো ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App