×

জাতীয়

মা ডাক দিলে ভীমরুলের চাকের মতো মানুষ ঢাকায় যাবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৩৪ পিএম

মা ডাক দিলে ভীমরুলের চাকের মতো মানুষ ঢাকায় যাবে

শনিবার বিকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের এক কর্মিসভায় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, নেত্রীর জন্য আমরাও মরে প্রমাণ করতে চাই, শেখ হাসিনার লোক আছি, থাকব। সময় আসছে আমাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তারা যুদ্ধ করেছিল দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য। আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়ত আগামী এক দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা হবে। তারা জিততে পারবে না। কারণ নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে। আমার ভেতরেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি জবাব দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। প্রস্তুতি নেন, আমাদের মা যদি ডাক দেন নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ যেন ভীমরুলের চাকের মতো ঢাকায় যেতে পারে।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে যুবলীগ নেতা শাহ নিজামের মালিকানাধীন ‘নম পার্কে’ আয়োজিত এক কর্মিসভায় এসব বলেন তিনি।

কর্মীদের উদ্দেশ্য করে সভায় শামীম ওসমান বলেন, সংসদে আমার আশপাশে দুই আড়াইশো এমপি আছেন। আমি কোনো অভিযোগ করিনি তার কাছে। হঠাৎ দেখি তিনি বক্তব্য শেষে ঘুরে বললেন থ্যাংকস টু ইউ। পরে তিনি আবার বললেন, অল দ্যা থ্যাংকস টু শামীম ওসমান। তিনি থ্যাক্স দেবের কেন? আমি তার কর্মী। তার পক্ষে না থাকার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়। তবুও কিছু কষ্ট থাকে। করোনায় তার পাঁচ ফুটের মধ্যে যাওয়া নিষেধ। আমি গিয়ে তাকে বললাম, আমি কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, আমাদের মুক্ত করতে গিয়ে তোমার বাবা আমার চাচা রক্ত দিয়েছেন। আমার ভেতরে যে কষ্টের বিষ ছিল তা চোখ দিয়ে বের হতে চাচ্ছিল। তিনি আরও কিছু কথা বলেছেন, তা বলা ঠিক হবে না। বিষাক্ত জিনিসটা চোখের পানি হয়ে বের হয়ে গেছে। ছোট্ট একটা দেশে বড় বড় শক্তি ইনভলবড হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া চেয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমি সকলের কাছে ভিক্ষা চাই। আমরা সকলে ভাই, আমাদের একটাই মা, আমাদের মা শেখ হাসিনা। আমরা ঈমানদারির সঙ্গে মরতে চাই। যারা খেলতে চাইবে তাদের ঘরে ঘরে ঢুকে আঘাত করা হবে। আপনারা এলাকা গোছান। আপনারা শুরু করেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। প্রতি মহল্লায় পাঞ্চায়েত কমিটি হবে। তাদের কাজ মাদক, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা। আমরা মানুষকে ভালোবেসে তাদের মন জয় করব। কষ্ট লাগে যখন ত্যাগী লোকেরা কষ্ট পায়। আঘাত আসবে এটা কনফার্ম। কতটুকু আসবে জানি না। বলব না, যুদ্ধের কিছু রণকৌশল আছে। আগামী শুক্রবার প্রতিটা এলাকায় যার যার মসজিদে দোয়া করবেন, যেন দেশ করোনা মুক্ত হয় এবং শেখ হাসিনাকে যেন আল্লাহ শক্তি দেন।

[caption id="attachment_332023" align="aligncenter" width="966"] শনিবার বিকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের এক কর্মিসভায় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।[/caption]

নাসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা নির্বাচন হয়েছে (২০২২ নাসিক নির্বাচন)। এটা এলেই খেলা শুরু হয়ে যায়। ২০১৬-১১ তে কী করেছি এবার কী করেছি তা আমি জানি। বলব না, কারণ দলকে ভালোবাসি। রাজনীতিতে আঘাত পেয়েছি কিন্তু কষ্ট পাইনি। কবরস্থানে যা হয়েছে তা কোনো সন্তান মানতে পারে না। নেত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি সমস্ত বিষ হজম করি, আমি নীলকণ্ঠী।’ আমাকে আঘাত করে কথা বললেও আমি কিছু বলি না। কারণ, আমি আমার নেত্রীর মতো হতে চাইছি। এটা খুব কষ্টের, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার স্ট্রোক অ্যাটাকও হয়েছিল। আমি আমার বাবা-মা-ভাইকে ভালোবাসি। আমি বলেছিলাম গোপনে হলেও তাদের বলেন আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে। শয়তান আর ফেরেশতা ছাড়া সকলেই ভুল করে। তাও হয়নি, তাই কষ্টটা আরও বেড়ে গেছে। আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের তিন ভাইয়ের হাত শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ওরা যদি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মরেও যায় তাহলে তাই হোক।’ আমার মা আমাকে একটা কথা বলেছিলেন নামাজ পড়ো। নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেক কথা বলছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘হতাশ হলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়বা’। বড় ভাই নাসিম ওসমান বলেছিলেন, ‘আল্লাহকে চেনার চেষ্টা করো।’ আমি বুঝতে পারিনি চিনবো কীভাবে? পরে আমি বুঝেছি এভাবে চেনা যায় আল্লাহকে। সব ধর্ম সুন্দর। কোন ধর্ম মানুষকে খারাপ শিক্ষা দেয় না। তারা সম্মান করতে জানে

আমি প্রেস কনফারেন্স (নাসিক নির্বাচনের আগে প্রেস কনফারেন্স) না করলে সমস্যা হত। একটা পক্ষ মাঠে নেমেছিল, কারা এরা। কেউ কেউ লেখে, দল আমাকে দিয়ে তৈমূর ভাইকে কিছু প্রমাণ করার জন্য দাঁড় করিয়েছে। কেউ আমাকে এ নির্দেশনা দেয়নি। তবে লেখা হচ্ছে, এটা ইচ্ছা করে করা হচ্ছে। এত নিচু লেভেলের চিন্তা আমার নেত্রীর নেই।

দীর্ঘদিনের রাজনীতি প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, আজকে ২০২২, লম্বা সময় পার হয়েছে। বিসমিল্লাহর দিন থেকেই আঘাত পেয়েছি। ছয় বন্ধু পোস্টার লাগাতে গিয়েছিলাম বার একাডেমিতে। আমরা যখন পোস্টার লাগিয়ে ফিরছি আমাদের আটকালো। আমি ভেবেছিলাম আমাকে মারবে, তাই বললাম- তোরা পালা। আমাকে পিটিয়ে সেখানে অজ্ঞান করা হয়েছিল, পিঠে সাইকেল ভাঙা হয়েছিল। তখন আব্বা জেলে, বড় ভাই নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে ছুটে যান। জাতীয় চার নেতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাবাকে খুনি মোশতাক ফোন করল। তিনি আমার বাবাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমার মা মোশতাকের প্রস্তাবে বলেছিলেন, ‘তিনি যদি আপনার প্রস্তাবে রাজি হন তাহলে হয় তাকে খুন করবো নয়ত আমি নিজে আত্মহত্যা করব। এর দশ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হলো। গোলাম মোর্শেদ ফারুক সাহেবকেও সেদিন গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার ছেলেরা আজ পত্রিকা বিক্রি করে খায়। আমার বাবা আর মনসুর আলী চাচা এক রুমে ছিলেন। সেদিন তাকে অযুও করতে দেয়নি। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেন। তারা সেদিন বলেছিলেন, ‘আমরা মরেও প্রমাণ করতে চাই আমরা বঙ্গবন্ধুর লোক।’ আমরাও মরে প্রমাণ করতে চাই, শেখ হাসিনার লোক আছি, থাকব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App