×

জাতীয়

আগামী নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইইউ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৩৯ এএম

আগামী নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইইউ

ইইউ ডেলিগেশনপ্রধান ও রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি

ইইউ ডেলিগেশনপ্রধান ও রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।

গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইইউ।

বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সুশাসনকে আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশে ইইউর অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত জানান, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের নির্বিঘ্নে উত্তরণ এবং ইইউর বাজারে বাংলাদেশের ‘জিএসপি প্লাস’ পাওয়া যে খুব সহজ হবে না।

একইসঙ্গে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, মানবাধিকার ইস্যুতে ইইউর নিজস্ব কাঠামো আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া ব্যবস্থাও তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নে ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান, তিনি এখনো এমন কোনো লক্ষণ দেখেননি।

গত ১৫ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সারা বিশ্বের আগ্রহ আছে। গতকালও নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের বড় ধরনের আগ্রহ আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক পরিসরে সম্পর্ক। সেগুলোর মধ্যে সুশাসন ও অন্যান্য ইস্যু আছে।’

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই আমরা নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করি। প্রতিবছর আমরা ৩০টি দেশকে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করি। ২০২৩ সালের অগ্রাধিকারের দেশগুলো এখনো ঠিক করা হয়নি।’

চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী বিদেশি পর্যবেক্ষক মিশন আসতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে। আমি তার ওই বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। তার ওই বক্তব্যে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবকে নিষিদ্ধ করা, ইইউ পার্লামেন্টের একজন সদস্য র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভকে চিঠি দেওয়া, বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যের চিঠির প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ইইউর রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সাতশরও বেশি এমইপি আছেন। তাদের অনেকেই মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক দেশের বিষয়ে সম্পৃক্ত থাকেন। তাই ইইউ পার্লামেন্টের কোনো সদস্যের এ ধরনের চিঠি লেখা বিস্ময়কর নয়। তার চিঠি লেখার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আপনারা যা বলছেন (টাকা-পয়সা নিয়ে) সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি পার্লামেন্টের একজন সদস্য হিসেবে তার এখতিয়ার অনুযায়ী আমাদের হাইরিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে চিঠি লিখেছেন। হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওই চিঠির জবাব দেবেন।’

বিদেশে জামায়াত-বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ এবং টাকা-পয়সা নিয়ে ইউরোপীয় এমইপির চিঠির অভিযোগের বিষয়ে আবারও প্রশ্ন উঠলে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি বলিনি, আমাদের এ বিষয়ে (মানবাধিকার) কোনো অবস্থান নেই। আমি বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কারণ সেটি যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়।’

রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বলেন, ইইউর বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ কিছু মানবাধিকার ইস্যুতে ইইউ উদ্বেগ জানিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তাই এটি এমন নয় যে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই বিষয়ে দৃষ্টি রাখছে না। এমইপির চিঠি দেওয়ার যে চর্চা, তার প্রেক্ষাপটেই এই চিঠিকে দেখতে হবে। এই চিঠি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে যায়নি। এটি ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলের চিঠি নয়। একজন এমইপির চিঠি লেখার অধিকারের প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এ দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর পড়তে পারে-একটি বেসরকারি সংস্থার এমন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দেখেন, টাকা কামানো যাবে কি না, এখানে ব্যবসার আকর্ষণীয় পরিবেশ আছে কি না। বাংলাদেশে ব্যবসা সম্পৃক্ততার ওপর প্রভাব পড়তে পারে, এ ধরনের কোনো লক্ষণ এখনো দেখিনি। তবে অবশ্যই ব্যবসায়ীরা সারা দেশের দিকে তাকান। তারা বুঝতে চান, সমস্যা হলে আদালতে যেতে পারবেন কি না, খুব বেশি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য আছে কি না।

এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে কী কী বাধা আছে, জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বলেন, ‘জিএসপি প্লাসের’ ক্ষেত্রে আমাদের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা বলব, এই উত্তরণ খুব সহজ হবে না। তিন বছরের ‘গ্রেস পিরিয়ড’ থাকবে ২০২৬ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। আমরা চেষ্টা করব, যাতে বাংলাদেশের ওপর কোনো প্রভাব না পড়ে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক মোটেও স্বাভাবিক নেই। শেভরন, টোটালের মতো বড় ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমার ছাড়ছে। ইইউ মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা ছাড়া সব সহায়তা স্থগিত করেছে।’

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এরই মধ্যে বাংলাদেশকে তার অবস্থান জানিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App