×

জাতীয়

ইসি আইন: সংসদে সব দলের মতামত চান বিশিষ্টজনরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:২২ পিএম

ইসি আইন: সংসদে সব দলের মতামত চান বিশিষ্টজনরা

সরকার প্রস্তাবিত ইসি গঠনের আইনটি তাড়াহুড়া করে পাশ না করে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও জনগণের মতামত নেবার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সুজন আয়োজিত এক ওয়েবনিয়ারে বক্তারা অনুসন্ধান কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে এ কমিটিতে তিনটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রাখার বিধানসহ সার্চ কমিটি কতৃক সুপারিশকৃত নামগুলো পার্লামেন্টারি হিয়ারিং-এ নিয়ে সব দলের মতামত নেবার দাবি জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে বক্তারা সিইসিসহ অন্য চার ইসির নামের প্রস্তাবিত খসড়ায় ১০ জনের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং যাচাই প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য গণশুনানির বিধান রাখার কথা বলেছেন।

নাগরিক সংগঠন সুজন-এর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যান্যদের মধ্যে উক্ত গোলটেবিলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন এর নির্বাহী সদস্য প্রফেসর সিকান্দর খান এবং জনাব শফিউদ্দিন আহমেদ, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনীতি-বিশ্লেষক আসিফ নজরুল, বিশিষ্ট নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জনাব আবদুল আলীম, আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো আইন করা যায় না। আইনের এত বিশদ্ভাবী সবকিছুর বর্ণনা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের প্রস্তবনা ছিল অনুসন্ধান কমিটিতে সাবেক একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাখা, কারণ তার নির্বাচন পরিচালনা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার ক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে লিখিত অলিখিত যে কোনো অভিযোগ থাকলেই তাকে বিবেচনা থেকে বাদ দিতে হবে। সুপারিশকৃত নামগুলো একটা পার্লামেন্টারি হিয়ারিং-এ যাবে, সেখানে আলাপ আলোচনা হবে। কাদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে সেটা প্রকাশ করে দিতে হবে।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে দুটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। একটি হচ্ছে তিনি নিরপেক্ষ কি না। দ্বিতীয়ত: তার ভিতরে আইন প্রয়োগের সক্ষমতা ও সাহস রয়েছে কি না। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টারি শুনানির বিষয়টি না থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী, প্রধামন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনকে নতুন মোড়কে আনা হয়েছে। কোনো আলাপ আলোচনা না করে সরকারের অনুগত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নুরুল হুদার মতো বিতর্কিত ও অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্যই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এই আইন করা হচ্ছে। সরকার প্রস্তাবিত আইনে কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কোনো বিধান নেই।

আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু ইন্টারন্যাশনাল গাইডিং প্রিন্সিপাল আছে। তার প্রথমটি হচ্ছে- পলিটিকাল কনসেনসাস- সব দলকে একমত হতে হবে। ট্রান্সপারেন্সি- সব ওপেন করে দিতে হবে। ব্যাপক স্ক্রুটিনি- ব্যাপকভাবে যাচাই করতে হবে। রোবাস্ট ক্রাইটেরিয়া-যারা কমিশনার হবেন তারা কারা, তাদের মোরাল ইন্টেগ্রিটি কেমন, ইন্টেলেকচুয়াল অনেস্টি কেমন আর ফাইনালি হচ্ছে সিটেজেন্স ট্রাস্ট-পুরো প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা থাকতে হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটি হচ্ছে সরকারের ইছাপূরণের আইন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ছাড়া শুধু কমিশন আইন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

ড. রওনক জাহান বলেন, সবার আলোচনা থেকে বুঝা যায় দুটি বিষয়ে সবাই একমত-কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পলিটিকাল কনসেনসাস এবং স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পলিটিকাল কনসেনসাস তৈরি করা কিছুটা দুরূহ হলেও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে স্বচ্ছতার দিকটা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App