×

জাতীয়

সংসদে ‘ইসি গঠন আইন’ রিপোর্ট পেশ বুধবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৩৪ পিএম

বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) জরুরি বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যোগ্যতা-অযোগ্যতার অংশে দুটি পরিবর্তন এনে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। বিলটির রিপোর্ট আগামীকাল বুধবার সংসদে পোশ করা হবে, আর বিলটি দু এক দিনের মধ্যে পাশ হয়ে যাবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার জানিয়েছেন, বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে কমিটি এর প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এর আগে গত রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিলটি সংসদে উত্থাপণ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে সেটি ৭দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হলেও মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে গতকাল সোমবার দুপুরে বৈঠকে বসে কমিটি ইসি গঠনের বিলটি চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী চাইলে বুধবারই বিলটি পাশও হতে পারে।

তবে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ভোরের কাগজকে জানান, আগামীকাল (বুধবার) বিলটির রিপোর্ট কমিটির সভাপতি সংসদে উপস্থাপণ করবেন। তবে বুধবারই এটি পাশ হবে না। কেননা, এটি নিয়ে সংসদ সদস্যদের জ্ঞাত করতে বা মতামত আছে কিনা তার জন্য আমরা কিছুটা সময় দেব। সে জন্য পরবর্তি ১-২দিনের মধ্যে বিলটি পাশের জন্য আমরা প্রস্তাব করবো।

যদিও বিলটি নিয়ে ব্যাপক বিরোধীতা করেন বিএনপি সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা। তারা বিলটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না মন্তব্য করে বিলটি প্রত্যাহারেরও সুপারিশ করেন। এ বিলের মাধ্যমে আগের সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনকে ‘বৈধতা’ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তারা বিলটি পাশের আগে সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও জনগণের মতামত নেবার দাবি জানান।

এ বিষয়ে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির শিকার। আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয় না, এটা জানা উচিত। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি কারা দিয়েছিল? ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কারা করেছিল? বরং আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছিল। তিনি বলেন, আইনে দুটো জিনিস আছে। একটা হচ্ছে ইনডেমনিটি আর একটা হচ্ছে লিগ্যাল কাভারেজ। দুটো কিন্তু এক জিনিস না। ইনডেমনিটি হচ্ছে মাফ করে দেওয়া, তাদের আইনের আওতা থেকে বের করে দেওয়া। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে আইনের ভেতরে আনা। দফা-৯ এ পরিষ্কারভাবে বলঅ আছে কারো কৃতকর্মকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয় নাই।

মঙ্গেলবার শহীদুজ্জামান সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, গত সোমবার কমিটি বিস্তারিত আলোচনা করে যোগ্যতা ও অযোগত্যার জায়গায় কিছু পরিবর্তন এনেছে। উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা আছে, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অনূন্য ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত করা হয়েছে। আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অনূন্য দুই বছরের কারাদণ্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদ- উঠিয়ে দিয়ে শুধু যেকোন মেয়াদে কারাদণ্ড বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, নৈতিকস্খলন ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগত্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

বিলটির টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজ বলে, আইনে সিইসি ও কমিশনার হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে কর্মজীবনে তাদের যেন সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার দক্ষতা রয়েছে তা বিবেচ্য বিষয় হিসেবে নিতে হবে। এছাড়া কর্মজীবনে তারা কোন ধরনের করাপশনে জড়িয়ে না পড়ে শুদ্ধাচার মেনে কাজ করেছেন তাও দেখতে হবে। মূল কথা এমন ৫ জনকে সিইসি ও ইসি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে যারা রাজনৈতকি প্রভাব মুক্ত ও শুদ্ধাচার মেনে কাজ করতে সমর্থ হবেন।

এদিকে বিলটি নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করে পাশ করা বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন বলেছে, নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে সরকারের এত তাড়াহুড়ো কেন, এতে মনে হচ্ছে ইসি আইন করা নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো নয়। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইন করার মতো সময় এখন নেই। এটি তাড়াহুড়া করে করা যাবে না। এখন সরকার কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎ আইনটি চূড়ান্ত করা হয়ে গেল। এতে মনে হচ্ছে ইসি আইন নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো নয়। আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ের জন্য পছন্দের ইসি নিয়োগ করতে চায় সরকার। ইসির জন্য সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি খসড়ায় নেই। এর মানে নিয়োগ নিয়ে জনগণ অন্ধকারেই থেকে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেই নিয়োগের সম্ভাবনা বেশি থাকে এতে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের পরের দিন ১৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত: বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই আইনটি পাস করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দিকে হাঁটছে সরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App