×

সারাদেশ

রাঙ্গামাটিতে অবাধে চলছে পাহাড় কাটা, উজাড় হচ্ছে বন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:২৫ পিএম

রাঙ্গামাটিতে অবাধে চলছে পাহাড় কাটা, উজাড় হচ্ছে বন

অবাধে চলছে পাহাড় কাটা। ছবি: ভোরের কাগজ

রাঙ্গামাটিতে অবাধে চলছে পাহাড় কাটা, উজাড় হচ্ছে বন
রাঙ্গামাটিতে অবাধে চলছে পাহাড় কাটা, উজাড় হচ্ছে বন

রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে অবাধে পাহাড় কাটা এবং পাথর উত্তোলন। ফলে পরিবেশের যেমন বিপর্যয় ঘটছে তেমনি বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসের মতো বড়ো বড়ো দুর্ঘটনা ঘটছে রাঙ্গামাটিতে। ২০১৭ সালের ১২ জুন ব্যাপক পাহাড় ধ্বসের ফলে প্রাণ হারিয়েছে নারী ও শিশুসহ ১২০ জন। তাই পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে রাঙ্গামাটির সুশীল সমাজ।

রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে রাঙ্গামাটিতে অবাধে চলছে প্রাকৃতিক বন উজাড়, কাটা হচ্ছে পাহাড় ও বৃক্ষ, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পাহাড় কাটার ফলে রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক বন যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। পাহাড় কাটার ফলে ও প্রাকৃতিক বন ধংসের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ছড়া, ঝিড়ির সহ শুকিয়ে যাওয়ায় দুর্গম এলাকা গুলোতে সুপেয় পানির সংকট চরমে উঠেছে।

রাঙ্গামটি জেলার দশ উপজেলার ৭ উপজেলাই দুর্গম এলাকা। এসব এলাকায় এখনো সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। এলাকাবাসীর পানি ব্যবহারের মাধ্যম ছড়া ও ঝিরি-ঝর্ণা। কিন্তু নির্বিচারে গাছকাটা, পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে সেসব ছড়া ও ঝিরি-ঝর্ণা। যার ফলে চরম আকারে ধারণ করছে সুপেয় পানির সংকট। এছাড়া প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

এদিকে রাঙ্গামাটি জেলা শহরের ঘাগড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের এক কিলোমিটার ভিতরেও শুষ্ক মৌসুমে প্রকৃতির সবুজের দেখা মেলা ভার। নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ। কাটা হচ্ছে পাহাড়, ঝর্ণা ঝিরি থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর, যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে ঘাগড়া ঝর্ণা এলাকায় বসবাস করা প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার ভুগছে পানি সংকটে। আগে এসব পরিবার এই শুষ্ক মৌসুমে ছড়ায় পাথরের ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা পানি ব্যবহার করলেও এখন তারা তা থেকেও বঞ্চিত। পাথর উত্তোলন করে বিক্রয় করে ফেলায় পানির সেসব উৎস নষ্ট হয়ে গেছে, কুয়া থেকেও উঠছেনা পর্যাপ্ত পানি, যার কারণে এলাকাবাসী ভুগছে পানি সংকটে।

একইভাবে জেলার বাঘাইছড়ি, বাঘাইছড়ির সাজেক, জুরাছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, দুমদুম্য সহ বিভিন্ন উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই শুনা যায় পানি সংকটের কথা। সেখানে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে ছড়া, ঝিরি-ঝর্ণা। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে যেমন সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়, তেমনি বর্ষা মৌসুমে খাবার পানি সংগ্রহ করার কুয়াগুলোতে ময়লা পড়ে পানি খাবারের অযোগ্য হয়ে উঠে। এতে বর্ষায় খাবার পানির সংকট আরো তীব্রতর হয়।

জেলা শহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে বসতি। শহরে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেমন কাটা হচ্ছে গাছ, তেমনিভাবে পাহাড় কেটে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে জনবসতি। শহরজুড়ে এমন অপরিকল্পিত বসতি নির্মাণের ফলে বর্ষা এলেই শুরু হয় পাহাড় ধস, ঘটে প্রাণহানি। ২০১৭ সালের বর্ষায় এক রাতেই জেলাজুড়ে পাহাড় ধসে প্রাণ গেল ১২০ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতশত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায়, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। ২০১৮ সালে জেলার নানিয়াচরে পাহাড় ধসে প্রাণ গেল ১১ জনের এবং ২০১৯ সালে কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারায় আরও তিন জন। এদিকে জেলার লংগদু, রাজস্থলীসহ উপজেলার ইটভাটাগুলোতে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরির অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনিক নানা ব্যবস্থাপনা দেখা গেলেও তা আবারও আগের ঠিকানায় ফিরে যায়।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পাহাড় কাটায় জোরালো ভূমিকা রাখছে জেলা প্রশাসন। যেখানেই পাহাড় কাটার খবর পাচ্ছে সেখানেই তারা তৎক্ষণিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার ভয়াবহতা সম্পর্কে ও পাহাড় না কাটতে জনসাধারণকে সচেতন ও উৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি পাথর উত্তোলনে খবর পেলে সেখানেও অভিযান পরিচালনা করছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবিচারে বৃক্ষ নিধন রোধ ও বৃক্ষ রোপনে জনসাধারণকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রদক্ষেপের গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

দক্ষিণ বনবিভাগ কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের বেশীর ভাগ এলাকায় আমরা পাহাড় কাটার কথা শুতে পাই। পাহাড় কাটায় বন বিভাগের করার কিছু না থাকলেও আমরা এই বিষয়ে বিভিন্ন ভাবে নিরুৎসাহিত করছি গ্রামের মানুষকে। এছাড়া বনানায়নের জন্য প্রতিণিয়ত গাছের চারা সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রদান করা হচ্ছে বিনামুল্যে। এছাড়াও বর্ষাকাল গাছ লাগানোর মৌসুম এই সময় প্রত্যেকে তিনটা করে গাছ লাগার জন্য উৎসাহিত করছি।’

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেখাইে পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া যায় সেখানে অভিযান পরিচালণা করা হচ্ছে। সম্পতি কয়েকটি পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা সহ আটক করা হয়েছে কয়েক জনকে। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা জনসাধারণকে বৃক্ষ রোপনে উৎসাহিত করছি। আবার পাহাড় কাটা, পাথর উত্তোলন বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। যেখানেই পাহাড় কাটা হবে সেখানেই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App