×

মুক্তচিন্তা

রক্ষা করতে হবে প্রবাল প্রাচীর

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২:২১ এএম

অপার বিস্ময়ের এক ভাণ্ডার সমুদ্র। এই সমুদ্রের উপরিভাগ ও বিশেষত তলদেশের অনেকাংশ সম্পর্কেই এখন পর্যন্ত সম্যক ধারণা অর্জন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সমুদ্রের অন্যতম এক বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে কোরাল রিফ বা প্রবাল প্রাচীর। প্রবাল বা কোরাল জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণী কোরাল রিফ গঠন করে থাকে, যা আজ জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৪৮ কোটি বছর আগে সমুদ্রে প্রবালের আবির্ভাব ঘটেছিল। প্রবাল প্রাচীরগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপে আসতে হাজার হাজার বছর সময় লাগে। বর্তমান রিফগুলো প্রায় ১০ হাজার বছর পুরনো, যা এখন ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮১ সালে ইউনেস্কো অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, যা ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৩ লাখ ৪৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর, যা মহাশূন্য থেকেও সুস্পষ্ট চিহ্নিত করা যায় তা বিলুপ্তির তালিকায় প্রথম দিকেই স্থান করে নিয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি বিরাজমান থাকলেই প্রবালের উদ্ভিদ কোষের মৃত্যু ঘটে। উচ্চ তাপমাত্রা দীর্ঘমেয়াদি হলে পলিপগুলো মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া স্টারফিশদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে প্রবাল। ফলে স্টারফিশের বংশ বৃদ্ধির ফলেও প্রবাল প্রাচীর এখন সংকটের মুখে। প্রবাল প্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল সব মাছ এবং অন্যান্য প্রাণীও এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে, ফলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হবে ব্যাপকহারে। এতে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে গোটা সামুদ্রিক প্রকৃতি। শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও স্টারফিশের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই নয় বরং কোরাল রিফ ধ্বংস ত্বরান্বিত করার পেছনে রয়েছে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণ। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে কৃষি কাজে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ও বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে তা পানিতে মিশে কোরাল ব্লিচিং ত্বরান্বিত করে। এই অবস্থায় কোরালগুলো সাদাটে হয়ে অতঃপর মারা যায়। তাছাড়া কলকারখানার বর্জ্য ও প্লাস্টিক আবর্জনা থেকে সমুদ্র দূষণ বর্তমান বিশ্বের উদীয়মান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পর্যটকদের ব্যবহৃত সানস্ক্রিন থেকেও রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে নষ্ট করছে প্রবাল প্রাচীর বৃদ্ধির অত্যানুকূল পরিবেশকে। প্রবাল প্রাচীর রক্ষার্থে অনুকূল পরিবেশ প্রদান করার লক্ষ্যে সার্বিক চেষ্টা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও মৃতপ্রায় প্রবালকেও পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সংরক্ষণের সুবিধার জন্য একে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, মেরিন পার্ক, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটসহ বিভিন্ন ট্যাগে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গেøাবাল ওয়ার্মিং কমিয়ে আনতে হবে। সামুদ্রিক প্রবালখেকো তারা মাছের সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। কলকারখানার বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য যেন সমুদ্রের পানিকে দূষিত করতে না পারে তা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। কৃষি কাজে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈবসার ও জৈব পদার্থ ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। অনেক দেশে আইন করে প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণ করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে নতুন করে গড়ে তুলতে এবং পানির স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া মহাদেশটির দক্ষিণাঞ্চলের একটি প্রবাল প্রাচীরে তাপমাত্রা ও পরিবেশের অন্যান্য নিয়ামক অনুকূলে রয়েছে, যাকে সংরক্ষণ করে ঐতিহ্যবাহী প্রবাল প্রাচীরকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোরাল ব্লিচিংয়ের ফলে কোরাল রিফের কোরাল বা প্রবাল এবং এর ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী বিপন্ন হয়ে পড়ছে। প্রায় ১০০ কোটি মানুষ খাদ্য ও জীবিকার জন্য এর ওপর নির্ভর করে থাকে। ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ প্রবাল থেকেই আসে। ফলে প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হলে জীববৈচিত্র্যও ধ্বংসের মুখে এসে পড়বে। তাই প্রবাল প্রাচীর রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা অবশ্যই পালন করতে হবে।

শাহরীন তাবাসসুম : শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় , ময়মনসিংহ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App