×

স্বাস্থ্য

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:২২ এএম

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের

প্রতীকী ছবি

রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ

উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

শিশুদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শুরু থেকেই কম ছিল; এছাড়া ভাইরাসটির আগের যে কোনো ধরনের তুলনায় নতুন ধরন ওমিক্রনে বিপদ কম- প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞরা এমন ধারণা দিলেও দিন যতই গড়াচ্ছে পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। তবে দেশে ওমিক্রনের ঢেউ আসার আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হতে পারে এবং যা শিশুদের জন্য বেশি সমস্যার হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাই সত্যি হলো।

করোনায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য আলাদা ইউনিট রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে। এই দুই হাসপাতালের এবং শিশু বিশেষজ্ঞদের দেয়া তথ্য বলছে, ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের শরীরে বেশি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনাও তেমনটাই বলছে।

২১ জানুয়ারি শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি স্কুলে সংক্রমণ হার বেড়ে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আক্রান্ত হচ্ছে এবং তারা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এটা আশঙ্কাজনক। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তার সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই দিন থেকেই পরবর্তী দুই সপ্তাহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার এবং পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, দুই সপ্তাহ আগেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা শূন্য বা ১ জন ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। যা আগের তুলনায় ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি। এছাড়া শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছেও ওমিক্রনের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা গত এক মাস আগের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আফ্রিকার পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ৫ বছরের কমবয়সি শিশুদের ওপর ওমিক্রন বেশি প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে যেসব শিশুর অন্য কোনো জটিল অসুখ আছে বা যারা অল্পেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের ক্ষেত্রে ওমিক্রন বেশি প্রভাব ফেলেছে। এটা করোনার আগের কোনো ধরনের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য যদিও বলছে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সিদের হার শতকরা ৫ শতাংশ। কিন্তু এই তথ্যও অনেক পুরাতন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

এ প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামস ভোরের কাগজকে জানান, গত ২ সপ্তাহ আগেও ঢামেক হাসপাতালের শিশুদের জন্য নির্ধারিত করোনা ইউনিটে ২ থেকে ৩ জন শিশু ভর্তি থাকতো। এখন ১২ জন রোগী ভর্তি থাকছে। যাদের সবার অবস্থাই গুরুতর। তিনি আরো বলেন, যাদের অবস্থা গুরুতর তারাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বহির্বিভাগে এবং চিকিৎসকের চেম্বারেও অনেক রোগী সেবা নিচ্ছেন। অনেক শিশুর অভিভাবক সাধারণ জ¦র-সর্দি-কাশি ভেবে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেনও না। ফলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। তবে করোনা আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা আবারো যে বাড়ছে এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত ২ সপ্তাহে এই সংখ্যা ৬ গুণ বেড়েছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিমও ওই হাসপাতালে ভর্তি রোগী বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এক মাস আগেও করোনা ইউনিট রোগী শূন্য ছিল। কিংবা ২/১ জন ভর্তি থাকত। এখন ১২/১৩ জন রোগী ভর্তি থাকছে। করোনা বা ওমিক্রনের উপসর্গ আছে এমন অনেক শিশুকে নিয়ে অভিভাবকরা বহির্বিভাগেও আসছেন।

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবু সাঈদ চৌধুরী শিমুল ভোরের কাগজকে বলেন, শিশুদের মধ্যে ওমিক্রন দ্রুত ছড়াচ্ছে। গত ৪ দিনে চেম্বারে আর অনলাইনে করোনায় আক্রান্ত রোগী (শিশু) দেখলাম ১৪ জন। গত কয়েক মাস এবং শীত মৌসুমে সাধারণ জ¦র-সর্দি-কাশি হলেও এত রোগী হয় না। ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি রোগী বেড়েছে। ডেল্টার সময়ের চেয়ে তা ৩ গুণ বেশি। যেসব রোগী দেখেছি তাদের হাল্কা জ¦র, সর্দি-কাশি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আরেকটি ভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে- সেটি হলো শিশুদের ঘুমের সময় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। রাত ২/৩ টা পর্যন্ত শিশুরা ঘুমাচ্ছে না। নবজাতকসহ যারা কথা বলতে পারছে না তাদের মধ্যে কান্না বেড়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুরা মূলত আক্রান্ত হয় বাড়ির বড়দের থেকেই। তাই বড়দের উপসর্গ দেখা দিলেই নিজেদের আইসোলেট করতে হবে। যাতে তাদের থেকে শিশুরা সংক্রমিত না হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App