×

খেলা

ঢাকার জয়ের দিনে সাকিবের অনন্য কীর্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৩৮ পিএম

ঢাকার জয়ের দিনে সাকিবের অনন্য কীর্তি

ফাইল ছবি

তামিম-মাহমুদউল্লাহ-আন্দ্রে রাসেলদের নিয়ে তারকাসমৃদ্ধ দল গড়েও টানা দুই ম্যাচ হারের পর মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা জয়ের দেখা পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরে সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে দলটি। এ জয়ে মাহমুদউল্লাহ ব্যাটে-বলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন তিনি। দল হারলেও অনন্য কীর্তি গড়েছেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এবার বিপিএলে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ঢাকার। নিজেদের খেলা প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করে তারা। ওই দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে জোড়া ফিফটি করেও দলকে বাঁচাতে পারেননি ঢাকার ওপেনার তামিম ইকবাল। আজ ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে তামিম ফিরেছেন শূন্য হাতে। আর এ ম্যাচেই হারের বৃত্ত ভাঙে ঢাকা। আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১২৯ রান জমা করে সাকিব আল হাসানের বরিশাল। ১৩০ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ঢাকা। তবে দলকে হ্যাটট্রিক হারের স্বাদ পেতে দেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আন্দ্রে রাসেল। তাদের ব্যাটে ভর করে ৪ উইকেট এবং ১৫ বল হাতে রেখে এবারের বিপিএলে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় ঢাকা।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ তামিম-মাহমুদউল্লাহরা জয়ের জন্য ১৩০ রানের টার্গেটে খেলতে নামলে বরিশালের দুই পেসার শফিকুল ইসলাম ও আলজারি জোসেফ তছনছ করে ছাড়েন ঢাকার টপ অর্ডার। ১০ রানে তামিম-শাহজাদ-নাঈম-জহুরুলদের হারিয়ে আরেকটি হার চোখ রাঙাছিল তখন। কঠিন এই সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মাহমুদউল্লাহ-শুভাগত জুটি। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ৬৯ রান যোগ করেন। শুভাগত ২৫ বলে ২ চারে ২৯ রান করে আউট হলে ক্রিজে নামেন আন্দ্রে রাসেল। গত দুটি ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া ক্যারিবীয় ব্যাটার এদিন ঝড় তোলেন। তার ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রানের মাধ্যমে ৪ উইকেটের জয় পায় ঢাকা। ৩ চার ও ২ ছক্কায় রাসেল নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন।

অন্যদিকে জয় থেকে এক রান দূরে থাকতে সাকিবের বলে আউট হন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ। ৪৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছেন ঢাকার অধিনায়ক।

বরিশালের বোলারদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম ও আলজারি জোসেফ দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। সাকিব আল হাসান ও ডোয়াইন ব্রাভো নিয়েছেন একটি করে উইকেট।

এর আগে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে সাকিবের ফরচুন বরিশালও। টস হেরে ২৩ রানে তিন উইকেট হারানো বরিশালকে খাদের কিনার থেকে টেনে তোলে সাকিব আল হাসান ও ক্রিস গেইল জুটি। সাকিব ১৯ বলে ২৩ রান করে আউট হলে গেইল দলের হয়ে করেন সর্বোচ্চ রান। শুরুতে ধীরস্থিরভাবে খেললেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ বাড়াতে থাকেন এ ব্যাটিং দানব। শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রান করে ইসুরু উদানার শিকার হন। এরপর ডোয়াইন ব্রাভোর ২৬ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান সংগ্রহ করে বরিশাল। ঢাকার বোলারদের মধ্যে আন্দ্রে রাসেল ও ইসুরু উদানা দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া রুবেল, শুভাগত, হাসান মুরাদ, মাহমুদউল্লাহ নিয়েছেন একটি করে উইকেট।

ইতিহাসে পঞ্চম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে আজ ৪০০ উইকেট পান সাকিব আল হাসান। সোমবার মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েন তিনি। ফরচুন বরিশালের হার তখন নিশ্চিত। শেষের ১৭ বল থেকে করতে হতো মাত্র ১ রান। তখনই মিনিস্টার ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নেন সাকিব। এরই সঙ্গে প্রবেশ করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক অনন্য ক্লাবে।

সাকিবের বলে মাহমুদউল্লাহ আউট হন ডোয়াইন ব্রাভোর হাতে ক্যাচ দিয়ে। বিষয়টা যেন এমন দাঁড়াল ক্যাচটি তালুবন্দি করে সাকিবকে নিজের ক্লাবে স্বাগত জানালেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ব্রাভো। যে ক্লাবে এখন ব্রাভোর পর দ্বিতীয় সদস্য বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব।

আর সেই ক্লাবটি হলো স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কমপক্ষে ৪০০ উইকেট ও ৫ হাজার রান করার কৃতিত্ব। সবার আগে এই ক্লাবে প্রবেশ করেন ডোয়াইন ব্রাভো। বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫৫৪ উইকেটের পাশাপাশি ৬ হাজার ৬৭২ রান রয়েছে ব্রাভোর।

বর্তমানে এই ফরম্যাটে সাকিবের উইকেটসংখ্যা ৪০০ আর ব্যাট হাতে ৫ হাজার ৬১০ রান। এছাড়া স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছেন সাকিব। সাকিবের আগে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৪০০ উইকেট পেয়েছেন চারজন।

সাকিবের বরিশাল সতীর্থ পেস অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো, দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিনার ইমরান তাহির, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার সুনীল নারাইন ও আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খান।

২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি দিয়ে ২০ ওভারের সংস্করণে অভিষেক হয়েছিল সাকিবের। সে ম্যাচে এ বাঁহাতি স্পিনার নিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের শন উইলিয়ামসের উইকেট। ৩৫৩তম ম্যাচে এসে ৪০০ উইকেট পূর্ণ করলেন তিনি।

২০১১ সালে প্রথমবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। এরপর থেকে নিয়মিতই সেখানে খেলেন তিনি। ভারতের বাইরে সাকিব ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ খেলেছেন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও। সামনের আইপিএলের মেগা অকশনে সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে নাম লিখিয়েছেন এ অলরাউন্ডার।

এবারের বিপিএল শুরুর আগে সাকিবের উইকেট ছিল ৩৯৮টি। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে জেতা ম্যাচেও নিয়েছিলেন ১ উইকেট। সব মিলিয়ে ৪০০ উইকেট পেতে সাকিবের লাগল ৩৪৭টি ইনিংস। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের বোলিং গড় ২১.১৭, ইকোনমি রেট ৬.৮০। ক্যারিয়ারে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন দুবার।

২০১৩ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর বিপক্ষে ৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন বার্বাডোজের হয়ে খেলা সাকিব, তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার এটিই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App