×

মুক্তচিন্তা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৩৫ এএম

প্রায় দেড় যুগ আগ থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়া চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকও তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে অনেক দিন থেকে। ২০১৩-১৪ সালের দিকে কেন্দ্রীয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য অভিন্ন বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে, প্রস্তাবিত কাঠামোতে জাতীয় বেতন স্কেলের তুলনায় এসব ব্যাংকারের বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বেতন কাঠামো দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত অজানা কারণে তা আটকে যায়। অথচ ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো হবে। তৎকালীন অর্থ সচিব ফজলে কবির এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমও তখন বলেছিলেন, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রজ্ঞাপন হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।’ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় তৎকালীন সময়ে মিডিয়াতে হতাশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তৎকালীন এই গভর্নর হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ব্যাংকারদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো আনতে না পেরে খুবই দুঃখিত।’ তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাংকের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছিলেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকেও সে প্রস্তাব ভেটিং হয়েছিল। এর পরও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হয়নি। এটি সবার জন্য দুঃখজনক। সরকারের উচিত হবে ব্যাংক খাতের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা। বিশেষজ্ঞদের মতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বেতন ও সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য বৈষম্য তৈরি করছে। দুর্বল বেতন কাঠামোর জন্য নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার পর কয়েক মাস কাজ না করেই উচ্চ বেতনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে চলে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। অথচ তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সময়, শ্রম ও অর্থ সবই ব্যয় হয়। দক্ষ মানবসম্পদ পাওয়া এবং বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্যও দরকার এ খাতের জন্য আলাদা কাঠামো। রাষ্ট্রের আর্থিক খাতের বিভিন্ন সেবা পৌঁছে দিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন শাখা। বসার জায়গা বৃদ্ধিসহ বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে। ফলে গাদাগাদি করে কোনো রকমে বসে কাজ সারতে হয়, যেখানে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের উপযুক্ত পরিবেশও অনেক সময় থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে বেতন বৈষম্য যেন চরম হতাশা তৈরি করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মীদের মাঝে। সর্বশেষ এ বছর ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় যেখানে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মীদের জন্য বেতনভাতা বৃদ্ধি করা, প্রারম্ভিক বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হয়, যা এ বছরের মার্চ মাস থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়। বেসরকারি ব্যাংকের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বেতন নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার টাকা! অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একজন ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা ১৬ হাজার টাকা বেসিকে সর্বমোট ২৪ হাজার ৭০০ টাকা পেয়ে থাকেন! অন্যদিকে প্রবিশনারি পিরিয়ড শেষে বেসরকারি ব্যাংকের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসারের বেতন ধরা হয় ৩৯ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের দক্ষ কর্মীদের কতটুকু ধরে রাখতে সক্ষম হবে কিংবা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কতটুকু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে সেটাই বড় প্রশ্ন! বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক অর্থমন্ত্রী কয়েকবার স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মীদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি পড়লে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এসব যৌক্তিক দাবি পূরণ হবে বলে ব্যাংকারদের বিশ্বাস। কে এম মাসুম বিল্লাহ ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক। দুমকি, পটুয়াখালী। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App