×

মুক্তচিন্তা

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নপূরণে সুশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০৮ পিএম

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নপূরণে সুশাসন

সম্প্রতি ডিসিদের সম্মেলনে মন্ত্রীপরিষদ সচিব সর্বত্র সুশাসন নিশ্চিত করণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটি আসলে সরকার প্রধানেরই নির্দেশনা। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে দেশে সুশাসন নিশ্চিতের বিষয়টি শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, অপরিহার্য। সুশাসন ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড প্রকৃত কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এমনকি শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নও কল্যাণকর হবে না যদি না সুশাসন নিশ্চিত করা যায়। আসলে এ কল্যাণ তো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কল্যাণ নয়। সুশাসনের কোথাও ঘাটতি থাকলে কোনো ব্যক্তির বা মহলের সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহৃত হবে এই উন্নয়নের অর্জনগুলো। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আকাঙ্খাই ছিল সামাজিক উন্নয়ন ও জাতীয় বিকাশ।

সমাজে বা দেশে যদি সৎ মানুষ তার শ্রম ও মেধা দিয়ে স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিজের ভাগ্য গড়তে না পারে তবে সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নয়ন হবে না, স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। জাতির পিতার কন্যা সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষের এবং আরও একটু পরিষ্কার করে বললে বলতে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করেন তাদের সকলেরই প্রত্যাশা তার হাত ধরেই দেশে সুশাসন নিশ্চিত হবে। সুশাসনের পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী কিছু কিছু উপাদান সমাজে বা দেশে কখনো কখনো বেশ বড় হয়ে দেখা দেয়, তা আবার সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় দ্রুত বা ধীর গতিতে। মনে রাখতে হবে সুশাসন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, কোনো ব্যক্তির জন্য নয়। ‘জাস্টিস ডিলে, জাস্ট্রিস ডিনাই’ এই পুরনো কথাটিও আমাদের মনে রাখতে হবে। আইন শুধু বিত্তবানদের পক্ষে যাবে; অসহায়, বিধবা, নারী, শিশু অথবা অর্থবিত্তে বা অন্য কোনো কারণে পিছিয়ে পরা মানুষ আইনের আশ্রয়ে ন্যায় বিচার পাবে না তা কিন্তু একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে যারা আছেন তারা যেন সবলের সেবক এবং দুর্বলের মনিব না হয়। দুর্বৃত্তরা যেন সমাদৃত না হয় এবং নির্যাতিতরা যেন আইনের শাসনের সুফল পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পিছিয়ে পরা জনগোষ্টিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সমাজে অগ্রসর শ্রেণীর সঙ্গে একই কাতারে এনে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা যেন ভোগ করতে পারে সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু কল্যাণকর কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন যার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুফলটি সঠিক ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজে লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বয়স্ক ভাতা, ছাত্রী উপবৃত্তি, বিধবা ভাতা, আশ্রয়ন প্রকল্প, রিলিফ বিতরণ, হাটবাজার বা খেয়াখাট ইজারা প্রদান, ট্যাক্স বা টোল আদায়, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান, বয়স্ক শিক্ষা বা নন ফরমাল এডুকেশন, কমিউনিটি ক্লিনিক বা গ্রাম পর্যায়ে প্রদত্ত স্বাস্থ্য সেবা সঠিক মানুষের কাছে সঠিক মান ও পদ্ধতি অনুযায়ী পৌঁছানো। বিনোদন বা সামাজিক অনুষ্ঠানসমূহে যেন মানুষ বিনা বাধায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেন কোনো বাধা বা সংকোচ না থাকে।

মনে রাখতে হবে সরকার শুধু নগদ অর্থ বা দ্রব্যসামগ্রীই সরবরাহ করবে না, রাষ্ট্র বা সরকারের অন্যতম মূল দায়িত্ব হলো ব্যক্তি, পরিবারের, বৃহৎ জনগোষ্ঠী বা সাধারণ মানুষের জন্য সুশাসন যেন প্রতিদিনের কাজের নিত্য নিরবিচ্ছিন্ন স্বাভাবিক নির্মল বায়ুতে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো একটি সহজাত বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

মানুষ যদি সৎভাবে জীবন যাপনের নিশ্চয়তা না পায়, তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে না পারে, বিকাশের পথ যদি নির্বিঘ্ন না হয়, মান সম্পন্ন না হয়, তবে দেশ-সমাজ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাবে না। ইউরোপ, আমেরিকা বা জাপানের মতো সত্য কথা বলা, সৎ চর্চা করা, মিথ্যা এবং অন্যায়ের আশ্রয় না নিয়ে বেঁচে থাকার মতো মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজই প্রথম কাঙ্ক্ষিত বিষয় আজকের দিনে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং গাজী সকলেরই আকাঙ্খা ছিল সৎ, উন্নত, সমৃদ্ধ সমাজ।

অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার

সাবেক উপ-উপাচার্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App