রাজধানীতে মধ্যরাতে বেপরোয়া গতিতে চালানো গাড়ি থেকে মদ্যপ অবস্থায় ছেলেবন্ধু প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্যকে নিয়ে পুলিশের হাতে আটকের পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন মডেল-অভিনয়শিল্পী অর্চিতা স্পর্শিয়া ও তার ব প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্য।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বেপরোয়া গতির গাড়ির পথ আটকানোর পর সড়কেই ঘণ্টাখানেক মাতলামি করেন তারা। পরে তাদের ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিয়ের দুই বছরের মাথায় বিচ্ছেদে জড়ান অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়া ও তার স্বামী নির্মাতা রাফসান আহসান। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে দুজনের বিচ্ছেদ হয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাজী অফিসে তাদের ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।

ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়কে বেপরোয়া গতির একটি লেক্সাস মডেলের (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৭-৪০৭২) গাড়ি ইউনিমার্টের সামনে আসলে পুলিশ গাড়িটি থামায়। তখন চালকের আসনে ছিলেন প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্য। তার পাশে বসাছিলেন স্পর্শিয়া। তারা দুই জনই মদ্যপ অবস্থায় মাতলামি ও কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করতে থাকেন। এ সময় দ্রুতগতির আরেকটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়ির আরোহীরা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুবের ওপর চড়াও হন। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তাদেরও থানায় নিয়ে যেতে বলা হয়। তবে স্পর্শিয়া ও অর্ঘ্য থানায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গাড়ির ব্যাকডালা খুলে সেখানেই বসে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্যরাতে স্পর্শিয়া ও অর্ঘ্যরে স্বজনরা মুচলেকা দিয়ে উভয়কে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

ধানমন্ডি থানার এসআই মাহবুব জানান, টহল পুলিশ বেপরোয়া গতির একটি গাড়িকে চ্যালেঞ্জ করলে গাড়িতে থাকা অভিনেত্রী স্পর্শিয়া ও তার ছেলেবন্ধু দুর্ব্যবহার করেন।

প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্য মুচলেকায় বলেন, ‘…আমি গাড়িটি থামিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যাই এবং পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি। আমি মদ্যপ অবস্থায় আছি কিনা পুলিশ জানতে চাইলে, অল্প মদ পান করেছি বলে জানাই এবং এটাও বলি আমার মদপানের লাইসেন্স আছে। পুলিশকে তৎক্ষণাৎ লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হই। মদ্যপ অবস্থায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো এবং পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হওয়ায় থানার ঊর্ধ্বতন অফিসার আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে থানায় যেতে বলেন। আমি গাড়িসহ থানায় হাজির হই। অর্ঘ্য লেখেন, এই মর্মে মুচলেকা দিচ্ছি যে ভবিষ্যতে এমন কার্যকলাপ আর করব না। অতিরিক্ত গতিতে আর গাড়ি চালাব না। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে দেয়া এই মুচলেকায় স্বাক্ষর করলাম।

তবে, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো ও থানায় যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার স্পর্শিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্যরে বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনিও সাড়া দেননি।

প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্যের বাবার নাম প্রদীপ কুমার দত্ত। তিনি সোনালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালে অবসর নিয়েছেন। সিদ্ধেশ্বরীর অপ্সরা অ্যাপার্টমেন্টে বাবার সঙ্গে থাকেন প্রাঙ্গণ। নিজেকে একজন সিআইপি হিসেবে দাবি করলেও প্রাঙ্গণ কী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তা জানা যায়নি।

অপরদিকে অর্চিতা স্পর্শিয়া ২০১১ সালে একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে বিনোদন অঙ্গনে নিজের নাম লেখান। তিনি টিভি নাটকের পাশাপাশি একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০২০ সালে ‘নবাব এলএলবি’ ছবিতে পুলিশকে হেয় করে সাজানো একটি দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য আলোচনায় আসে তার নাম। তখন ছবিটির পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহিন মৃধাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নির্মাতা রাফসান আহসানের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন হয় স্পর্শিয়ার। ওই বছরের ১ অক্টোবর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। একটি অনলাইন শপের ভিডিওচিত্র নির্মাণের মাধ্যমেই সখ্য গড়ে উঠেছিল রাফসান ও স্পর্শিয়ার। ধীরে ধীরে সেটি রূপ নেয় বন্ধুত্ব, এরপর প্রেম, তারপর পরিণয়।