×

আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আইসিজেতে গণশুনানি ২১ ফেব্রুয়ারি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০১:১৩ পিএম

রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আইসিজেতে গণশুনানি ২১ ফেব্রুয়ারি

২০১৯ সালে হেগের পিস প্যালেসে মামলাটির প্রাথমিক শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানি করেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি। ছবি: সংগৃহীত।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করেছিল পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। এ মামলায় বিবাদি মিয়ানমারের সামরিক সরকারের আপত্তির ওপর গণশুনানি শুরু হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) আইসিজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে ২১, ২৩, ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এ শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে।

করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে সরাসরি ও অন্তর্জালে এই শুনানি হবে। গ্রেট হল অব জাস্টিসে আদালতের কিছু সদস্য উপস্থিত থাকবেন। বাকিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন।

মামলার দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সরাসরি অথবা ভিডিও লিংক ব্যবহার করে শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন। এ বিষয়ে আদালতের ওয়েবসাইটে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।

এছাড়া কূটনৈতিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মী ও জনসাধারণ আদালতের ওয়েবসাইট ও ইউএন ওয়েব টিভির সরাসরি ওয়েবকাস্টের মাধ্যমে এ শুনানি দেখতে পারবেন।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গণহত্যার অভিযোগ এনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা এ মামলার বিচারে আইসিজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। মিয়ানমারের সেই আপত্তির ওপর এবার গণশুনানি হবে।

এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগকারী গাম্বিয়া এবং অভিযুক্ত মিয়ানমারকে তাদের আইনি যুক্তি দাখিলের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল আইসিজে।

গাম্বিয়াকে ওই বছরের ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের অভিযোগের বিষয়ে আইনি যুক্তিগুলো উপস্থাপন করতে বলা হয়। অন্যদিকে অভিযোগের মুখে থাকা মিয়ানমারকে তাদের আপত্তির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে এ মামলার কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।

এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়, তার মধ্য দিয়ে দেশটি ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে।

হেগের পিস প্যালেসে ২০১৯ সালের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মামলাটির ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়। তাতে বাদি পক্ষে নেতৃত্ব দেন গাম্বিয়ার বিচার বিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানি করেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি, যিনি এখন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হাতেই বন্দি।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানে সু চির দল এনএলডির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির সেনাবাহিনী আবারও সামরিক শাসন ফিরিয়ে আনে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুনানির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে চার দফা অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল আইসিজে।

সেখানে বলা হয়েছিল, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে এমন কিছু করতে পারবে না। গণহত্যার অভিযোগের বিপরীতে সমস্ত আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে হবে।

কিন্তু তার পরের দুই বছরে দেশটির পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নেয়নি। বরং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে রাখাইনসহ সেদেশের বিভিন্ন এলাকায় জাতিগত নির্মূলের ফলে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের নতুন নতুন খবর এসেছে।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। তবে এ আদালত কোনো ব্যক্তিকে সাজা দিতে পারে না।

আইসিজেতে মামলা হলে সদস্য দেশগুলোর ওপর আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত অমান্য করার বহু উদাহরণ রয়েছে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় খুব দ্রুত প্রকাশ হবে না। এ রায় পেতে কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App