×

জাতীয়

স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহ নেই কারো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৩৫ পিএম

বর্তমানে দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। ওমিক্রনের সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করার পরেও পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণে আসছে না। গণপরিবহন, বাজার, শপিং মল, রেস্টুরেন্টে স্বাস্থ্যবিধি এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কারো কোনো আগ্রহ নেই।

গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রেও সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মাস্ক এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যাত্রী, চালক ও চালকের সহকারীর জন্য। কিন্তু গত কয়েকদিনে দেখা গেছে চালক এবং তার সহকারীরা মাস্ক পড়ছেন না। মাস্ক পড়ার ব্যাপারে যাত্রীদেরও অনাগ্রহ লক্ষ করা গেছে। মাস্ক হাতে, পকেটে ও থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী কেউই মাস্ক পড়ছেন না।

গণপরিবহনে আসনের অর্ধেক সংখ্যার যাত্রী পরিবহনে সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তা মানেননি। বিআরটিএ থেকে ঘোষণা দেয়া না হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ‘যত আসন তত যাত্রী’ নিয়েই গণপরিবহন পরিচালনা করছে। অথচ বিআরটিএ থেকে শতভাগ যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি। প্রতিটি গণপরিবহনেই দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য বিআরটিএ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সব গণপরিবহনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও তার কোনো প্রতিফলন এখন দেখা যাচ্ছে না।

মোহাম্মদপুর-খিলগাঁও রুটের মিডলাইন পরিবহনের হেল্পার জাকির হোসেন জানান, আমরা আসন পূর্ণ হওয়ার পরে একজন যাত্রীও তুলতে চাই না। কিন্তু যাত্রীরা জোর করে উঠে পরছে। তখন আমাদের বাধ্য হয়েই যাত্রী দাঁড়ানো অবস্থায় বাস চালাতে হয়।

মাস্ক না করার ব্যাপারে এই পরিবহনের যাত্রী মোবারক হোসেন জানান, বেশিক্ষণ মাস্ক পড়ে থাকা যায়না তাই খুলে ফেলেছি। একটু পরে আবার পরব।

হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতেও মাস্ক পড়তে লোকজনের অনীহা দেখা গেছে। হোটেল রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া লোকজনের টিকা সনদ দেখানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে সরকারের বিধিনিষেধে। কিন্তু এখানেও স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি উপেক্ষিত। হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো কাস্টমারের কাছে এই টিকা সনদ দেখতে চায় না।

রাজধানীর কাঁচাবাজার, মাছ বাজার ও অন্যান্য দোকানপাটে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা মাস্ক পড়ছেন না। শপিং মলগুলোর ভেতরেও একই অবস্থা দেখা গেছে। শপিংমলে প্রবেশের সময় অনেকেই নিরাপত্তাকর্মীদের দেখানোর জন্য মাস্ক পরে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশের পরেই মাস্ক থুতনিতে অথবা হাতে চলে যায়।

করোনা আক্রান্ত ৭৬৮টি নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে ওমিক্রনের সংক্রমণ বর্তমানে ২০ শতাংশ বলে দাবি করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। সার্বিক পরিস্থিতি এমন যে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে না পারলে সংক্রমণের হার হু হু করে বেড়ে যাবে। তখন করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে। বিধিনিষেধ মানা না হলে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব হবে।

সড়কে চলাচলরত সাধারণ পথচারীদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক থাকছে না। গত কয়েকদিন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় বেশকিছু পথচারীদের জরিমানা করা হয়।

বহুসংখ্যক পথচারীকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখা গেছে, মোবাইল কোড দেখামাত্রই লোকজন মাস্ক ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু মোবাইল কোর্ট সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আবার মাস্ক থুতনি কিংবা পকেটে রাখে।

সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম না করতেও সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এখানেও কেউ নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না। প্রতিদিন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিভিন্ন সংগঠন। তাদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি উপেক্ষিত। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো নজরদারী নেই।

সেগুনবাগিচা, মৌচাক, কাওরান বাজার, খিলগাঁও, রামপুরা ও প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিনই টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কম দামে সব পণ্য কেনার জন্য সব জায়গাতেই শত শত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের এখানে কোনো বালাই নেই। গায়ে গা লেগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক থাকছে না।

ব্যস্ততম রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর, কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা কেনাবেচা চলে। কিন্তু ১০ শতাংশ মানুষও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কারণ হিসেবে বাজারের সবজি বিক্রেতা মাসুম হোসেন জানান, বেচাকেনার সময় মাস্ক পড়ে থাকলে কাস্টমারের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা যায় না। কথা বললে কাস্টমাররা বুঝতে পারে না। এক কথা বারবার বলতে হয়। তাই মাস্ক সবসময় পড়ে থাকতে পারি না।

আরতদার সাইফুল ইসলাম জানান, রাত দশটা থেকে মাল আসা শুরু হয়। সেই মাল বিক্রি করতে না পারলে আমাদের লাভ নেই। একের পর এক কাস্টমার আসতে থাকে তাদের সঙ্গে দরদাম করতে হয়। মাস্ক পড়ে থাকলে ভালোভাবে দরদাম করে মাল বিক্রি করা যায় না। এর মধ্যেও যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করি।

এ সব জায়গাতেও মোবাইল কোর্টের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি সরকারের বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পর থেকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App