×

জাতীয়

এক কেজি ধান উৎপাদনে ১৬০০ লিটার পানি সেচ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২৭ এএম

এক কেজি ধান উৎপাদনে ১৬০০ লিটার পানি সেচ!

জুম ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষকরা বলছেন, দেশের নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে কৃষকরা ব্যবহার করছেন এক হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ লিটার সেচের পানি। তবে অনেকেই ধারণা করেন, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৩-৫ হাজার লিটার সেচের পানি লাগে।

এ বিষয়ে গবেষকরা বলছেন, সেচ বিবেচনায় পানির প্রয়োজন অনেক কম। এখন যা ব্যবহার হচ্ছে, আনুমানিক তার ৪০ শতাংশ (৪০০-৬৫০ লিটার) অপচয়সহ সিপেজ বা চুইয়ে ও পারকুলেশন বা অণুস্রবনের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে যায়। সুতরাং এক কেজি ধান উৎপাদনে প্রকৃত পানির প্রয়োজন হয় কেবল ৫৫০ থেকে ৬৫০ লিটার। সেই থেকে বোঝা যায়, বোরো ধান চাষে ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের অবনমন হয় না। অথচ সেই ধারণা থেকে বিগত ১০ বছরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বোরোর এলাকা বাড়েনি। যদিও উন্নত জাতসহ অন্যান্য কারণে ফলন বাড়ছে।

বোরো চাষে সেচের পানির ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে রবিবার ব্রির গবেষণা ফল উপস্থাপনকালে এ তথ্য জানানো হয়। জুম প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বোরো ধানে পানির অপচয় নিয়ে যে বিভ্রান্তি সমাজে প্রচলিত ছিল ব্রি ও সহযোগী সংস্থাগুলোর এ গবেষণা ফলাফলের মাধ্যমে তার অবসান হবে। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের উচিত এ ধরনের বিভ্রান্তি নিরসনে একযোগে গবেষণা কাজ পরিচালনা করা।

ব্রির উদ্যোগে এবং অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও), ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড (ইউএসকিউ), এসিএআইআর ও অস্ট্রেলিয়ান এইডের সহযোগিতায় ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনায় ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার জন্য বোরো ধানের আবাদই একমাত্র দায়ী নয়। শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদীনালা ও খালবিলে পানির প্রবাহ কম থাকায় বেজ ফ্লো হিসেবে ভূগর্ভস্থ পানির একটি অংশ নদীতে চলে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে বন্যার পানি প্রথমে ভূগর্ভস্থ পানির সেই খালি জায়গা পূরণ করার ফলে বন্যার তীব্রতা হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. হামিদুর রহমান বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টেকসই ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগসহ ভূপৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নদীনালা ও খালবিলে পানির সংরক্ষণ বাড়াতে পারলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাফল্যজনকভাবে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ সম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রশীদ। ওয়েবিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মনিরুজ্জামান এবং কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও), অস্ট্রেলিয়ার প্রিন্সিপাল রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ড. মো. মাঈন উদ্দিন। কর্মশালার দুই প্রবন্ধকার জানান, কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহারের ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো কোনো জায়গায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নিচে নেমে যাচ্ছে। এ সমস্যাকে সামনে রেখে ভূগর্ভস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার, ধান উৎপাদনে প্রকৃত পানির পরিমাণ ও স্বল্প খরচে ধান উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ব্রি ও অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআরও, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড এবং এসিআইএআর-অস্ট্রেলিয়া গত পাঁচ বছর ধরে কয়েকটি গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছে। এসব গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বোরোর এলাকা বাড়েনি। তবে উন্নত জাতসহ অন্যান্য কারণে বোরোর ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার ও ক্রপিং প্যাটার্ন বেইজড ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীল ও ফসলের পানি ব্যবহার দক্ষতা আরও বাড়ানো সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে ব্রি মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, সারাদেশে বোরো ধান চাষে সেচের পানির ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, এ রকম নেতিবাচক প্রচারণা ঠিক নয়। শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলে কিছু এলাকায় এটি হতে পারে। ভূগর্ভস্থ একুয়াফায়ারগুলো পানির রিজার্ভার হিসেবে কাজ করে। সুতরাং এসব নেতিবাচক প্রচারে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App