×

জাতীয়

করোনাকালেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৪৩ শতাংশ, আশাব্যাঞ্জক: রাষ্ট্রপতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:০৬ পিএম

ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে জোর পদক্ষেপের আহ্বান

অধিবেশন চলবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত

করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের ১৬তম ও ২০২২ সালের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এতে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

এই অধিবেশন ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চালানোর প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে জাতীয় সংসদের স্পিকার চাইলে এর সময় বাড়াতে পারবেন।

এটি সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবার রীতি রয়েছে। শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পরে স্পিকার রাষ্ট্রপতিকে সংসদ অধিবেশনে আসার জন্য অনুরোধ জানান। এর পরে জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে। এর পরে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণ শুরু করেন। তিনি তার ভাষণে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করে ভাষণ শুরু করেন। তিনি সরকারের স্বাস্থ্য-শিক্ষা, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপকে প্রশংসা করা ছাড়াও কোভিড নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া করোনাকালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে সরকারের বিভিন্ন সহায়তার উল্লেখ করেন। তিনি জিডিপি প্রবৃদ্ধি রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানান পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে ইতিবাচক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে, যা সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকসমূহ ও সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বিশ্লেষণে প্রতিফলিত হয়। করোনা মহামারি শুরুর পূর্বে ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ, যা করোনাকালীন হ্রাস পায়। তবে সরকারের বিভিন্ন টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে নানামুখী আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির তুলনায় সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫.৪৩ শতাংশে, যা আশাব্যাঞ্জক।

রপ্তানি আয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরেই রপ্তানি আয় ১৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য সময়োপযোগী এবং কার্যকর নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়াসহ আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত সকল সেবা অটোমেশনের মাধ্যমে সহজিকরণ করা হয়েছে।

রেমিটেন্স প্রেরণে নগদ প্রণোদনা এবং পদ্ধতি সহজিকরণের সুফল তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক সাত-আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ দশমিক দুই-ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

রাজস্ব আহরণ সম্পর্কেও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০২১ সালের একনেক সভাসমূহে প্রায় ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৫৭ দশমিক পাঁচ-সাত কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৩৩টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় করোনা পরিস্থিতিতেও ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ২৩ দশমিক পাঁচ-সাত বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিগত পাঁচটি অর্থবছরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নে সরকার মোট ৬১ দশমিক নয়-নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক উৎস হতে সংগ্রহের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ৩১ দশমিক পাঁচ-ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করা হয়েছে। আর্থিক খাতে পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করার জন্য সুদের হার একাধিকবার হ্রাস করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণে সময়োপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি ও উদ্যোগের ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে নিট সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল ২ হাজার ৫০৭ দশমিক তিন-এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসাবে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরার জন্য ২৮-২৯ নভেম্বর ২০২১ মেয়াদে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ২৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিংঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য মোট ১৯৩টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মোট ৭ হাজার ৩২৫ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যাতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উক্ত বিনিয়োগের ফলে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া ইপিজেডগুলোতে স্থাপিত শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ছয়-চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা জাতীয় রপ্তানির প্রায় ১৭ দশমিক এক-চার শতাংশ। এ পর্যন্ত ইপিজেডের আওতাধীন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭০৮ জন বাংলাদেশী নাগরিকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যার মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী।

অধিবেশন শুরুর আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তালিকাভুক্ত এমপিদের সংসদে প্রবেশ করতে হয়। সবাইকে দেখাতে হয় করোনার নেগেটিভ সনদ বা মেসেজ। সংসদ ভবনে নির্দিষ্ট আসন ফাঁকা রেখে এমপিরা বসেছেন। সবার মুখে মাস্ক আছে কি না তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ট্যানেলের গেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হয়েছে সবাইকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App