জলপাইগুড়িতে ভয়ংকর রেল দুর্ঘটনা, মৃতের সংখ্যা ৯
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৪০ পিএম
দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির দোমোহনিতে তা লাইনচ্যূত হয়। ট্রেনের পাঁচটি কামরা দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। একটি কামরা অন্য কামরার উপর উঠে গেছে। একটি কামরা পড়ে গেছে পানিতে। খবর ডয়েচে ভেলের।
রেলমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইঞ্জিনের পর ১২টি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রেনটি ছিল যাত্রীবহুল। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রেনে এক হাজারের বেশি যাত্রী ছিলেন। প্রচুর যাত্রী আহত। ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৩৬ জনের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার সারারাত ধরে উদ্ধারের কাজ হয়েছে। শুক্রবার ভোরেও কুয়াশার মধ্যে উদ্ধারের কাজ চলছে। উত্তরবঙ্গ থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা ঘটনাস্থলে গেছেন। উদ্ধারকাজ করছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, বিএসএফ, সীমা সুরক্ষা বলের জওয়ানরা। কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দোমোহনি যাচ্ছেন।
এই দুর্ঘটনা কেন হয়েছে, তা রেল কর্তৃপক্ষ জানাননি। বলা হয়েছে, তদন্ত হচ্ছে। তারপর কারণ জানা যাবে। লাইনে ফাটল ছিল নাকি কোনো অন্তর্ঘাতের কারণে এই দুর্ঘটনা হলো, তা স্পষ্ট নয়।
ময়নাগুড়ির বিধায়ক কৌশিক রায় ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছাতে পেরেছিলেন। তিনি আনন্দবাজারে লিখেছেন, 'সে এক ভয়ংকর দৃশ্য। একটা কামরা উঠে গেছে আরেকটার উপর। স্থানীয় মানুষ এসে দরজা, জানালা ভাঙার চেষ্টা করছেন।' তিনি নিজেও একটা দরজা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিছু মানুষ একটা জানলা ভাঙতে পারেন। সেখান থেকে তারা দুইটি মৃতদেহ উদ্ধার করেন। ভিতরে তখন আহতরা আর্তনাদ করছেন। পিলপিল করে মানুষ ছুটে আসছেন। তারাই উদ্ধারে হাত লাগান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কামরাগুলি দুমড়ে-মুচড়ে গেছিল। দুইটি কামরা একে অপরের সঙ্গে চেপ্টে গেছিল। আনন্দবাজারের রিপোর্ট বলছে, এরকমই একটি কামরা থেকে এক যুবকের পা বেরিয়ে ছিল। যখন কামরার লোহা কাটা হচ্ছিল, তখনো তার জ্ঞান ছিল। তিনি বলছিলেন, দেখবেন, পাটা কেটে ফেলবেন না যেন। তাকে যখন শেষপর্যন্ত উদ্ধার করা হয়, তখন তার আর জ্ঞান নেই।
দুর্ঘটনার পর কামরা থেকে ছিটকে বাইরে পড়েছিলেন রুকিয়া বেগম। তার মেয়ে থেকে গেছে ভিতরে। বারবার স্থানীয়দের কাছে কাঁদতে কাঁদতে অনুরোধ করছিলেন মেয়েকে বের করে আনার জন্য।
নির্মাণকর্মী চিরঞ্জিত বর্মন জয়পুর থেকে আত্মীয়বন্ধুদের ২২ জনের দল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বিয়েতে যোগ দেয়ার জন্য। দুর্ঘটনার পর সকাল পর্যন্ত ভাইকে খুঁজে পাননি। তিনি জানিয়েছেন, তিস্তা রেলব্রিজ পার হওয়ার পর ট্রেনের গতি কমে যায়। তারপর কিছুটা দূর যাওয়ার পর ধোঁয়া দেখা যায়। সঙ্গে বিকট শব্দ। আরকিছু মনে নেই তার। জ্ঞান ফিরতে দেখেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ।