×

মুক্তচিন্তা

ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৩৫ এএম

মানুষের মাঝে ধর্মের চর্চা বাড়লেও বাড়েনি দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন, যা তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র কিংবা অন্যতম মাধ্যম। ইসলামি জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সবচেয়ে উত্তম স্থান মসজিদ। মসজিদে শিশুদের কুরান শেখানোর পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আলোচনা, জুমার দিন খুতবার পূর্বে ও পরে আলোচনা এবং এলাকার মানুষদের ইসলাম সম্পর্কে হঠাৎ করে কোনো কিছু জানার প্রয়োজন মিঠিয়ে থাকেন মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিন। ইমাম মসজিদের আওতাভুক্ত এলাকার সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি হিসেবেই বিবেচিত হন ও সবাই সম্মান করেন, কিন্তু বিপরীতে তাকে যে বেতন দেয়া হয়, তা এক অর্থে অসম্মানেরই নামান্তর। মুয়াজ্জিনের বেতন তো উল্লেখ করার মতোই না। বহু মসজিদে আবার থাকে না মুয়াজ্জিন, ইমামকেই নামমাত্র বেতনে মুয়াজ্জিনের দায়িত্বও পালন করতে হয়। অনেক মসজিদে আবার স্থানীয় একজন মুয়াজ্জিনের ভূমিকা পালন করলেও তিনি শুদ্ধভাবে আজান দিতে পারেন না। এই চিত্রটা বাংলাদেশের প্রত্যেক এলাকাতেই দেখা যায়। মানুষ দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। কেউ কাউকে এখন আর তোয়াক্কা করে না। অর্থের প্রভাব দেখাতে ব্যস্ত সবাই। জায়গা-সম্পত্তি, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং পারস্পরিক সম্মানবোধ না থাকার ফলে সামাজিক ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে, ফলে মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে পাড়া-মহল্লায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, মসজিদ বৃদ্ধির পেছনে অনেকেই জনসংখ্যা ও নামাজি বৃদ্ধিকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করতে চান, কিন্তু কখনোই জনসংখ্যা ও নামাজি বৃদ্ধি প্রধান কারণ নয়। সামাজিক ঐক্য থাকলে মসজিদের আয়তন বড় করা যায়। দোতলা-তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদও নির্মাণ করা যায়। বর্তমানে মসজিদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সামাজিক ঐক্য নষ্ট হওয়া এবং অর্থনৈতিক প্রভাব দেখানো। মসজিদ বাড়লেও দুঃখের বিষয় বাড়েনি ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন। শহরের মসজিদগুলোর বেতন মন্দের ভালো হলেও গ্রামাঞ্চলের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনের অবস্থা খুবই নাজুক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিংবা ধর্মবিষয়ক আলোচনায় অনেকেই বলে থাকেন, এলাকাবাসী এক রাতের মাহফিলের জন্য লাখ টাকা খরচ করে বক্তা আনেন এবং মাহফিলে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন, কিন্তু যারা আমাদের বছরজুড়ে ইসলামের বাণী শুনান এবং আমাদের ফরজ-সুন্নাত নামাজের সাথী, সেই ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন দেয়ার বেলায় আমাদের যত কৃপণতা। আরো দুঃখজনক বিষয় যে, বহু মসজিদের নিজস্ব ফান্ড নেই, এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনের টাকা উঠাতে হয়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে মাসিক ধার্যকৃত টাকা আনতে গিয়ে আজ নয়, কাল দিচ্ছি, এমন কথাও শুনতে হয়, যা পক্ষান্তরে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ছোট করারই নামান্তর। এলাকাবাসীর অর্থায়নে পরিচালিত বহু মসজিদের পরিস্থিতি নাজুক হলেও আশার কথা সরকারের নির্মাণাধীন প্রকল্প ৫৬০টি মডেল মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা সরকারি বেতন স্কেলে ভালো বেতন-ভাতা পাবেন এবং ইতোমধ্যে বিদ্যমান সরকারি, আধা সরকারি এবং সিটি করপোরেশনের অধীন মসজিদগুলোর ইমাম-মুয়াজ্জিনরা ভালো বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। এলাকাবাসীর অর্থায়নে পরিচালিত মসজিদের সংখ্যাই দেশে বেশি, যেখানে বেতন কম, কিন্তু ইমাম-মুয়াজ্জিনের যোগ্যতা খোঁজা হয় বেশি। ফলে স্বল্প শিক্ষিত ইমাম-মুয়াজ্জিন রাখতে গিয়ে ইসলামের পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে বহু মসজিদের অধীন নাগরিকরা ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন না। এ অবস্থায় আমাদের অবশ্যই ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনে আলিম-ফাজিল পাস কিংবা দাওরা হাদিস ইমাম নিয়োগ করতে হবে। মুয়াজ্জিনকেও যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। তাদের সময়োপযোগী বেতন-ভাতার সুবিধা দিয়ে নিয়োগ করতে পারলে তারাই এলাকার মুসলিমদের ইসলামি জ্ঞানার্জনে দক্ষ করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। জুবায়ের আহমেদ শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম এন্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম) কাঁটাবন, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App